শিমুলদাইড় বাজারে ৪৫০ কোটি টাকার কম্বল বিক্রির আশা

এম এ মালেক
এম এ মালেক এম এ মালেক , জেলা প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৩:০৩ পিএম, ২৪ নভেম্বর ২০২৫

সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার চালিতাডাঙ্গা ইউনিয়নের শিমুলদাইড় বাজার। শীতের মাত্রা অনেকটাই কম। তবুও সকাল থেকেই জমজমাট থাকে কম্বলের বাজার খ্যাত শিমুলদাইড়। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এখানে আসেন। কিনে নিয়ে যান নানা রঙের কম্বল।

চলতি মৌসুমে মৌসুমে ৮০ থেকে ৯০ লাখ পিস কম্বল তৈরির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে এখানকার কারিগরদের। এতে ৪০০-৪৫০ কোটি টাকার ব্যবসা হবে। এরই মধ্যে ২০-২৫ লাখ কম্বল বিক্রি হয়েছে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

দুই যুগেরও আগের ঘটনা। যমুনাবিধৌত কাজীপুর উপজেলার চালিতাডাঙ্গা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা তৈরি পোশাক কারখানার ঝুট কাপড়ের কম্বল তৈরি শুরু করেন। ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ এলাকা থেকে ঝুট কাপড় কিনে এনে সেলাইমেশিনে একটির সঙ্গে আরেকটি জোড়া দিয়ে তৈরি করা হতো এসব কম্বল। এ কারণে এর নামকরণ হয় ঝুট কম্বল। সময়ের ব্যবধানে এ কাজে যুক্ত হন উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের ৫০ গ্রামের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ।

শিমুলদাইড় বাজারে ৪৫০ কোটি টাকার কম্বল বিক্রির আশা

নদীভাঙনের শিকার এসব মানুষ খুঁজে পান উপার্জনের নতুন পথ। তারা দিনরাত একাকার করে তৈরি করেন কম্বল। একপর্যায়ে শিমুলদাইড় বাজার কম্বলের বড় বাজার হিসেবে পরিচিতি পায়। পরবর্তীতে সিরাজগঞ্জ জেলার সীমানা পেরিয়ে এ কম্বল ছড়িয়ে পড়ে দেশের প্রায় সব জেলায়।

ছালাভরা গ্রামের নার্গিস খাতুন বলেন, তিনি একটি কম্বল সেলাই করে ৩০ থেকে ৪০ টাকা মজুরি পান। সংসারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে কম্বল সেলাই করে প্রত্যেক মাসে তিনি ১৩-১৫ হাজার টাকা বাড়তি আয় করেন।

কম্বল ব্যবসায়ী জিন্নাহ বলেন, সাধারণ মাপের একটি লেপ তৈরি করতে ২ হাজার টাকা খরচ হয়। কিন্তু মানভেদে ২০০ থেকে ৫০০ টাকায় কম্বল পাওয়া যায়। ফলে কম্বলের কদর অনেক বেশি।

শিমুলদাইড় বাজারে ৪৫০ কোটি টাকার কম্বল বিক্রির আশা

ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফ বলেন, এ বাজারে কম্বলের শতাধিক দোকান গড়ে উঠেছে। এসব দোকান থেকে উত্তরাঞ্চলসহ দেশের অনেক জেলায় কম্বল সরবরাহ করা হচ্ছে। ক্রেতারা পছন্দ করে দরদাম ঠিক করে টাকা পাঠালে এখান থেকে ট্রাকে কম্বল পাঠিয়ে দেওয়া হয়। প্রতিদিনই ট্রাকে করে কম্বল যাচ্ছে বিভিন্ন জেলায়।

দিনাজপুর থেকে কম্বল কিনতে আসা সোলাইমান সেখ বলেন, শীত এলেই গরিব মানুষের কাছে কাজীপুরের ঝুট কাপড়ের কম্বলের কদর বেড়ে যায়। দামে কম, টেকসই আর ভালো ওম পাওয়া যায় বলে এ কম্বলের চাহিদা বেশি। তাছাড়া নতুন কাপড়ের কম্বলও তৈরি করা হচ্ছে। দেখতে সুন্দর ও নাগালের মধ্যে দাম থাকায় অনেকেই এসব কম্বল কিনছেন।

ছালাভরা গ্রামের ফরহাদ রেজা পড়াশোনার পাশাপাশি ২০২৩ সাল থেকে কম্বল বিক্রির জন্য খুলেছেন অনলাইন প্লাটফর্ম। মৌসুমের শুরুতেই প্রতিদিন এক থেকে দেড় লাখ টাকার কম্বল বিক্রির অর্ডার পাচ্ছেন তিনি। এ থেকে প্রতিদিন তিনি ১৫-২০ হাজার টাকা আয় করছেন। তার এ আয়ে ৩৫-৪০ জন শ্রমিকের সংসার চলছে। এবার অনলাইনের মাধ্যমেই তিনি ৩ থেকে ৪ কোটি টাকার কম্বল বিক্রি করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।

শিমুলদাইড় বাজারে ৪৫০ কোটি টাকার কম্বল বিক্রির আশা

শিমুলদাইড় কম্বল বাজার সমিতির সভাপতি গোলাম হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, এ সমিতির আওতায় ৩০৭ জন সদস্য রয়েছেন। প্রত্যেকেই ছোট-বড় কম্বল ব্যবসায়ী। এ মৌসুমে ৮০ থেকে ৯০ লাখ পিস কম্বল তৈরি করে বিক্রি করা হবে। এতে ৪০০-৪৫০ কোটি টাকার ব্যবসা হবে বলে আশাবাদী তিনি।

এ পর্যন্ত ২০-২৫ লাখ কম্বল বিক্রি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাকি কম্বল ডিসেম্বর ও জানুয়ারির মধ্যে বিক্রি হবে। তবে শীতের মাত্রা বাড়লে কম্বল বিক্রি হতে সময় কম লাগবে। সেই সঙ্গে নতুন করে প্রতিদিন কয়েক হাজার কম্বল তৈরি হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যমুনা নদীর ভাঙনে প্রায় নিঃস্ব নারী-পুরুষেরা কম্বল তৈরির কাজ করে অনেকটাই সচ্ছল হয়েছেন। আমরা কম্বল ব্যবসায়ীদের পাশে সব সময় রয়েছি।

এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।