হঠাৎ ফেসবুকে রাঙ্গার ক্ষমা চাওয়ার ভিডিও

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক রংপুর
প্রকাশিত: ০৯:৪৩ এএম, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫

দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত-সমালোচিত নাম ‘মসিউর রহমান রাঙ্গা।’ জাতীয় পার্টির হাত ধরে ক্ষমতার স্বাদ নিলেও ছিলেন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের একান্ত অনুগত। ছিলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির মহাসচিব। বিএনপির শাসনামলে প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করে চলারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। পালাবদলের হাওয়ায় তাল মিলিয়ে চলার জুড়ি নেই তার।

বিভিন্ন সময়ে বিব্রতকর বক্তব্য দিয়ে উঠে এসেছেন আলোচনার তুঙ্গে। সুযোগ সন্ধানী হিসেবে খ্যাত রাঙ্গার পরিবহন সেক্টরেও ছিল আধিপত্য। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির টানা তিনবার সভাপতি ছিলেন। রংপুর জেলা মটর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও তিনি দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করেছেন।

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের পর দেশত্যাগ করেন। এর পরপরই আত্মগোপনে চলে যান দলীয় নেতাকর্মীরা।

সেইসঙ্গে লাপাত্তা ছিলেন মসিউর রহমান রাঙ্গাও। তবে সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ২ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের ভিডিওতে তিনি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদেরের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং পুনরায় জাতীয় পার্টিতে সুযোগের আবেদন জানান।

ভিডিও বক্তব্যে রাঙ্গা বলেন, ‘আমি জাতীয় পার্টির একজন কর্মী ছিলাম। ১৯৯৭ সালে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের হাত ধরে আমি প্রথম জাতীয় পার্টিতে আসি এবং সেই বছরই দলের চেয়ারম্যান আমাকে রংপুরের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছিলেন।’

তার পরবর্তীতে আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি ২০০১ সালে, রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসনে। সেখান থেকে আমি জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হই। পর্যায়ক্রমে দীর্ঘ সময় আমি জাতীয় পার্টির বিভিন্ন পদে আসীন ছিলাম এবং পরবর্তীতে আমাকে জাতীয় পার্টির মহাসচিব নির্বাচিত করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ওনার মৃত্যুর পর কাউন্সিলের মাধ্যমে জিএম কাদের চেয়ারম্যান এবং আমাকে মহাসচিব মনোনীত করা হয়।

আমি বেশ কিছুদিন তার সঙ্গে একত্রে রাজনীতি করেছি। সেই সময় হয়ত আমার যেকোনো একটি কারণে দলের চেয়ারম্যান আমার ওপর একটু দুঃখ পেয়ে আমাকে আমার পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন। তারপরও আমি ওনার সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তখন আমি সংসদ সংসদ সদস্য ছিলাম। ওনার সঙ্গে বরাবরই কথা হতো এবং সম্মানের সঙ্গেই আমি কথাবার্তা বলতাম, এখন পর্যন্ত বলেই আসছি। পরবর্তীতে সর্বশেষ আমাকে যখন প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করেছিলেন, তখন আমি একটু কষ্ট পেয়ে প্রেস কনফারেন্স করেছিলাম এবং আমি দুঃখ করে অনেক কথা বলেছিলাম।

আমি এখন বুঝি যে, এগুলো করা আমার ঠিক হয়নি বা আমি ঠিক করিনি। আমি জাতীয় পার্টি বাদে অন্য কোনো দলের সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত ছিলাম না। জাতীয় পার্টির যারা আমাকে অনুসরণ করতো তারাও এখন পর্যন্ত জাতীয় পার্টিতে রয়ে গেছেন। তো আমার এই অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আমি অবশ্যই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কাছ থেকে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছি এবং তিনি আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। আমি এতেই খুশি। আমি শুধু আশা করছিলাম ওনার কাছে যে, জাতীয় পার্টিতে যদি আমাকে আবারও খানিকটা দায়িত্ব দেওয়া হয়, অন্তত শেষ জীবনের শেষ সময়টায় যেন আমি জাতীয় পার্টির সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে পারি।

আমি জাতীয় পার্টির সমস্ত নেতাকর্মীদের কাছে অনুরোধ জানাব যে, যদি কারো মনে কোনো দুঃখ দিয়ে থাকি, অবশ্যই ক্ষমা করে দিবেন এবং আমাকে আবার আপনাদের সঙ্গে পথচলার সাথী করে নেবেন, এটাই আশা করি আপনাদের কাছে।’

রাঙ্গার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন পরবর্তী সময় হত্যা এবং ভাঙচুরসহ বিভিন্ন অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে।

এছাড়া দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী রাঙ্গা, ছেলে রাফাত রহমান জিতু, মেয়ে মালিহা তাসনিম জুঁই এবং পুত্রবধূ শাকিলা খানম কাকনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।

গত ৪ আগস্ট ঢাকা মহানগর আদালতের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।

২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন না পেয়ে রাঙ্গা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রংপুর -১ (গঙ্গাচড়া) আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ওই নির্বাচনে কেটলি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আসাদুজ্জামান বাবলু ৭৩ হাজার ৯২৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন।

তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব স্বতন্ত্র প্রার্থী মসিউর রহমান রাঙ্গা ট্রাক প্রতীকে পেয়েছিলেন ২৪ হাজার ৩৩২ ভোট এবং জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত এইচএম এরশাদের ভাতিজা সাবেক সংসদ সদস্য হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ লাঙল প্রতীক নিয়ে পান ১০ হাজার ৮৯২ ভোট।

জিতু কবীর/এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।