গান গেয়ে সংসার চলে শার্শার জামাত আলীর


প্রকাশিত: ১২:১২ পিএম, ২৫ এপ্রিল ২০১৫

`দরদী গো.... কি চেয়েছি আর কি যে পেলাম, সাধের প্রদীপ জ্বালতে গিয়ে নিজেই আমি পুড়ে গেলাম` বৈশাখের কাঠ ফাঁটা দুপুরে ভ্যাপসা গরমে বাতাসে ভেসে আসছিল এক করুণ সুকণ্ঠ সুর। সুরটি যেন হৃদয় ছুঁয়ে গেল। ভেসে আসা সুরটি কানে নিয়ে এগিয়ে যেতেই চোখ পড়লো একটি চায়ের দোকানে।

যশোরের শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়া বাজারের বাগুড়ী ফুলতলার এক চায়ের দোকান। সেখানে গিয়ে দেখা যায় ৪৮/৫০ বছরের এক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মধ্যবয়সী ব্যক্তিকে ঘিরে রেখেছেন বিভিন্ন পেশার প্রায় অর্ধ শতাধিক মানুষ। সবাই এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন লোকটির দিকে। খোচা খোচা দাঁড়ি, ময়লা একটি শার্ট গায়ে, ওই গানটি গেয়ে চলেছেন। তার সুরের মূর্ছনায় আগত শ্রোতাদের সঙ্গে শামিল হয়ে গানটি শোনা হলো। কত মানুষ জমে গেছে। অথচ নিস্তব্ধ পরিবেশ। শুধু শো-শো বাতাসের শব্দটাই যা একটু কানে আসলো। একের পর এক গান গেয়ে চলেছেন তিনি। একই সঙ্গে শ্রোতার সংখ্যাও বাড়তে লাগলো।

কতদিন পরে এলে একটু বসো / এইতো সেদিন তুমি আমারে বোঝালে/ কত দিন দেখিনি তোমায়, তবু মনে পড়ে তব মুখ খানি / আবার হবেতো দেখা, এ দেখায় শেষ দেখা নয়তো/ দ্বীপ ছিল শিখা ছিল শুধু তুমি ছিলেনা বলে আলো জ্বললো না--। একে একে গোটা ৩০টি গান শেষ করলেন জন্মান্ধ জামাত আলী। গানগুলো সবই পুরানো দিনের ভারতীয় বাংলা গান।

প্রায় ঘণ্টাখানেক পর গান গাওয়া শেষ হলে কথা হয় ঐ জন্মান্ধ জামাত আলীর সঙ্গে। শার্শার কায়বা ইউনিয়নের পাঁচ কায়বা গ্রামের ভূমিহীন দিনমজুর আমজাদ আলী মোড়লের বড় ছেলে তিনি। কণ্ঠে অনেক জাগতিক দুনিয়ার ঝলমলে কথা থাকলেও জন্ম থেকেই পৃথিবীর ঝলমলে আলো দেখা হয়নি তার।

ইতোমধ্যে বিয়ে করে সংসার পেতেছেন। ২ মেয়ে ১ ছেলে মিলে তাদের পাঁচ সদস্যের পরিবার। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে দিনমজুর জামাত সংসার চালাতে হিমশিম খান। প্রতিদিনের দুই মুঠো খাবারের সন্ধানে জামাত বেছে নেন ঘুরে ঘুরে এই গান গাওয়ার পেশাকে। পথে পথে কিংবা চায়ের দোকানে গান গেয়ে দর্শকরা খুশি হয়ে যে অর্থ দেন তাই দিয়ে চলে তাদের পুরো সংসার।

জামাত আবেগ জড়িত কণ্ঠে জাগো নিউজকে জানান, ‘আমি শুনেছি সরকার প্রতিবন্ধীদের সাহায্য করে। আমাকে একটু সহযোগিতা করলে আমার অনেক উপকার হবে।’ জামাত আরো জানান, তার ভীষণ ইচ্ছা কোন মিডিয়াতে গান করার।

এলাকাবাসী জানান, বিটিভির `ইত্যাদি` অনুষ্ঠানের উপস্থাপক হানিফ সংকেত ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে এসেছিলেন জামাত আলীর বাড়িতে। তাকে ২০১৪ সালের জানুয়ারী মাসে ঢাকায় নিয়ে যাবার কথা থাকলেও দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তার আর যাওয়া হয়নি। পথ চেয়ে বসে আছেন জামাত আলী। কখন যাবেন জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে।

ফিরে আসার সময় কানে ভেসে আসলো জামাতের ভরাট কণ্ঠের গান- চার দেয়ালের মাঝে নানান দৃশ্যকে সাজিয়ে নিয়ে দেখি বাহির বিশ্বকে। আকাশ করে ছাদটাকে মুঠোয় ভরি দিনের সূর্য তারার রাতটাকে। বিশ্ব রূপে . . . ।

এমজেড/আরআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।