কোম্পানীগঞ্জে থামছে না বোমা মেশিন : ভয়াবহ ক্ষতির আশঙ্কা


প্রকাশিত: ০৩:৪১ এএম, ১৫ মে ২০১৭

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বোমা মেশিনের মাধ্যমে পাথর উত্তোলন চলছে। বোমা মেশিনের সাহায্যে পাথর উত্তোলনের ফলে মাটির নিচে সৃষ্টি হচ্ছে শূন্যতা। ফলে ভূমিকম্পে যেকোনো সময় বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়ে তলিয়ে যেতে পারে এলাকার আবাদি জমি ও বসতবাড়ি।

এতে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারালেও দৈনিক লাখ লাখ টাকায় স্থানীয় বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের পকেট ভারি হচ্ছে।

বোমা মেশিন ঘিরে গড়ে উঠেছে একশ্রেণির দালাল চক্র। তারা বিভিন্ন মেশিন থেকে চাঁদা তুলে লোকজনকে ম্যানেজ করছে। নিয়ন্ত্রণ করছে ‘কল বাহিনী’ নামক আরেকটি চক্র। প্রশাসনের অভিযানের আলামত দেখলেই তারা মেশিন মালিকদের খবর দেন। খবর পেয়েই মালিকরা মেশিন লুকিয়ে ফেলেন। অনেক সময় সংশ্লিষ্টরা নিজেরাই তাদের অভিযানের আগাম বার্তা জানিয়ে দেয় কল বাহিনীকে। আর এ চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছে কলাবাড়ি, পাড়ুয়া ভোলাগঞ্জ গ্রামের কিছু দালাল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোম্পানীগঞ্জের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, বোমা মেশিন দিয়ে পাথর তোলায় গভীরে বিশাল শূন্যতার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হলেই ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সম্প্রতি কোম্পানীগঞ্জসহ সিলেটে কয়েকবার বিভিন্ন মাত্রায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে।

সূত্র জানায়, একশ্রেণির প্রভাবশালী ব্যক্তি দিনে ও রাতের আঁধারে বোমা মেশিন দিয়ে পাথর তুলছেন। কোম্পানীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় দুই শতাধিক বোমা মেশিন চলছে। বার বার অভিযানেও তেমন কোনো লাভ হচ্ছে না। প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার চাঁদাবাজি হচ্ছে। অবৈধ এই লেনদেনে ভারি হচ্ছে প্রভাবশালী দালালদের পকেট।

SHYLET

মাটির গভীর থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কয়েক বছর ধরে এ বোমা মেশিন কোম্পানীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় চালিয়ে আসছে অসাধু মহল। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বোমা মেশিনের বিরুদ্ধে অভিযান চললেও খুব একটা তোয়াক্কা করছেন না বোমা মালিকরা। স্থানীয়রা বলছেন বোমা মালিকদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা না হওয়ায় অভিযানে কোনো কাজ হচ্ছে না।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ গুচ্ছগ্রাম, নয়াবাজারের পশ্চিমে (বাংকারের পাশে), ধলাই সেতুর কাছে, ইসলামপুর বাজার (বুধবারী বাজার), দয়ার বাজারের পশ্চিমে ও কলাইরাগে মেশিন দিয়ে প্রকাশ্যে দিন-রাত পাথর উত্তোলন করা হয়। স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো দেখেও না দেখার ভান করে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। সবচেয়ে বেশি পাথর উত্তোলন করা হয় বাংকারের পাশে ও গুচ্ছগ্রাম এবং কালাইরাগে। গুচ্ছগ্রামে ২৪ ঘণ্টা বোমা মেশিন চলে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, একটি মেশিন ১২ ঘণ্টা চালাতে পারলে চার হাজার সিএফটি পাথর উত্তোলন করা যায়। যার বাজারমূল্য প্রায় দুই লাখ টাকার। আর এতে খরচ হয় মাত্র ২০ হাজার টাকা। বর্তমানে সময় ভালো নয়। তাই ১২ ঘণ্টা চালাতে হচ্ছে। এর জন্য প্রতি মেশিন থেকে দালাদের জন্য প্রতি রাতে ৩ থেকে ১৫ হাজার হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। এই চাঁদার টাকা দিয়ে বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করা হয় বলে জানায় সূত্রটি।

জানা গেছে, ২০১৬ সালে কয়েকবার ভূমিকম্প হয়, যার উৎপত্তিস্থল ছিল কোম্পানীগঞ্জ থেকে ৫০-৮০ কিলোমিটারের মধ্যে ভারতে। পরিবেশবাদীরা আশঙ্কা করছেন, নেপালের মতো ৭.৯ মাত্রার ভূমিকম্প হলেই কোম্পানীগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকায় ভূমিধসের সৃষ্টি হবে। এতে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কাও করছেন তারা।

পাথরশ্রমিকরা জানান, অল্প খরচে কয়েকগুণ লাভ হচ্ছে বলে বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করছেন প্রভাবশালী দালালরা। এর ফলে হাজার হাজার পাথরশ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। এ অঞ্চলের ৭০ ভাগ মানুষ পাথরকেন্দ্রিক নানা কাজে জড়িত। অধিকাংশ শ্রমিক নদী ও সমতল ভূমি কেটে পাথর উত্তোলনের কাজে জড়িত থেকে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। মেঘালয় থেকে ভেসে আসা নুড়িপাথর সংগ্রহ করে চলে অনেকের জীবন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, অভিযানের ৫/৬ ঘণ্টা আগেই সবার কাছে অভিযানের খবর চলে যায়। যারা দালালদের টাকা দেন না, তারা অভিযানের খবর পান না। অভিযানে তাদের বোমা মেশিনগুলোই ধরা খায়। অন্যরা আগেভাগেই বোমা মেশিন সরিয়ে নিরাপদে নিয়ে যান।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বোমা মেশিনের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা সৃষ্টির জন্য আলোচনাসভা, সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল লাইছ বলেন, আমরা বোমা মেশিনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছি। আগামীতে আরও অভিযান চলবে।

ছামির মাহমুদ/এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।