নড়াইলের রতডাঙ্গা স্কুলে চলছে খোলা আকাশের নিচে পাঠদান


প্রকাশিত: ০৯:৫৫ এএম, ১৮ মে ২০১৫

কারো হাতে চটের বস্তা। কারো বা হাতে প্লাস্টিকের বস্তা। কেউবা আবার মাদুর হাতে করে আসছেন। কাঁধে ঝোলানো রয়েছে স্কুল ব্যাগ। এ চিত্র নড়াইলের সদর উপজেলার রতডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। বিদ্যালয়ের ভবন ঝুকিপূর্ণ ঘোষণা করায় পাশের একটি বটগাছের নিচে খোলা জায়গায় ক্লাসে বসার জন্য হাতে এসব নিয়ে আসছেন শিক্ষার্থীরা।

জানাগেছে, নড়াইল সদর উপজেলার রতডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯২৮ সালে ৩৩ শতক জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে একটি পুরাতন ভবন ছিলো। এ ভবনের উপর ২০০৭-০৮ অর্থবছরে দ্বিতল ভবন করা হয়। ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটলসহ পলেস্তার ভেঙে ভেঙে পড়ছে দির্ঘদিন ধরেই।

সম্প্রতি কয়েক দফা ভূমিকম্পের কারণে ভবনের ফাটলগুলো আরো বেশি দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি শিক্ষা কর্মকর্তাসহ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর(এলজিইডি) এর নির্বাহী প্রকৌশলী সরেজমিন পরিদর্শন শেষে বিদ্যালয়ের ভবন ঝুকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে। এরপর থেকে শিক্ষার্থীদের নিয়ে বাইরে বট গাছের নিচে পড়ালেখা চলছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নড়াইল সদর উপজেলার রতডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে গেছে চিত্রানদী। নদীর তীরে একটি বটগাছের নিচে চটের বস্তা, মাদুর অথবা পলিথিনের বস্তার উপর খোলা আকাশের নিচে বসে ক্লাশ করছেন শিক্ষার্থীরা। এর পশ্চিম পাশে বাজার, পূর্বপাশে বসতবাড়ি, দক্ষিণ পার্শ্বে নদী এবং উত্তর পাশ্বে একটি মন্দির। মাঝখানে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মইন, নঈম, অরণ্য, হাফসা, চন্দ্রা পাল, সেতু, মম জাগোনিউজকে জানান, আমরা রোদ-বৃষ্টির মধ্যে ক্লাস করতে পারি না। আশ পাশের শব্দের কারণে পড়া লেখায় মন বসাতে পারি না। বিদ্যালয়ে ভবন না থাকায় খোলা জায়গায় পড়ালেখা করতে হচ্ছে। যে কোনো সময় গাছের ডালপালা ভেঙে এবং ঝড়-বৃষ্টিতে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে।

অভিভাবক নাজিরা বেগম জানান, আমাদের সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে ভয় হয়। খোলা আকাশে গাছের নিচে পাঠদান হয়। ঝড়-বৃষ্টির সময় কখন গাছের ডালপালা ভেঙে পড়ে সন্তান আহত হয়। তিনি দ্রুত বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের দাবি জানান।

শিক্ষক রেহেনা বেগম, শাকিলা জামান, শ্রাবনী নন্দী, জাহানারা খানম, তৃপ্তি রানী ঘোষ, বিউটি বিশ্বাস, ফাতেমা খানম, নারগিস আক্তার জাগোনিউজকে জানান, আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান এবং ফলাফল অনেক ভাল। যার কারণে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বেশি। অতিরিক্ত ভবন না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের ওই ভবনেই বসতে হচ্ছে। যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারেও বলে জানান এসব শিক্ষকবৃন্দ।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তরুণ কুমার কুণ্ডু জাগোনিউজকে বলেন,  বিদ্যালয়ে প্রায় তিনশত শিক্ষার্থী রয়েছে। আমাদের বিদ্যালয়ের ভবন ঝুকিপূর্ণ ঘোষণা করার ফলে শিক্ষার্থীদের যাতে লেখাপড়ার ক্ষতি না হয় সেজন্য খোলাস্থানে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। দ্রুত বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের ব্যবস্থা করার জন্য তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেন।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি রবিউল আলম রুনু জাগোনিউজকে বলেন, শিক্ষার্থীদের বসার জায়গা না থাকায় এবং দুর্ঘটনার আশঙ্কায় স্কুলে শিক্ষার্থী আসা কমে যাচ্ছে। অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. জেসের আলী জানান, জেলায় এ ধরনের ৫০টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে পাঠদান অব্যাহত রাখতে আপাতত টিনশেড ভবন নির্মাণের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। আশা করি এ সমস্যা আর থাকবে না।

এসএস/আরআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।