নবাবগঞ্জে আনারসের কাছে ধরাশায়ী নৌকা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নবাবগঞ্জ (ঢাকা)
প্রকাশিত: ০৯:২৮ পিএম, ০১ এপ্রিল ২০১৯

চতুর্থ দফার উপজেলা নির্বাচনে ঢাকার নবাবগঞ্জ থেকে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী নাসির উদ্দিন আহমেদ ঝিলু জয়ী হয়েছেন। গতকাল রোববার রাতে উপজেলা রিটার্নিং অফিসার ফারজানা আবেদীন নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থী নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ ঝিলু (আনারস) প্রতীকে ২৩ হাজার ৮৭ ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল বাতেন মিয়াকে পরাজিত করেন।

ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, স্বতন্ত্র প্রার্থী নাসির উদ্দিন আহমেদ ঝিলু (আনারস) ৬৫ হাজার ১৮৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিটকতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আব্দুল বাতেন মিয়া (নৌকা) পান ৪২ হাজার ৯৭ ভোট।

ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোহাম্মদ তাবির হোসেন খান পাবেল (টিউবওয়েল) ১৬ হজার ১০৮ ভোটের ব্যবধানে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী পত্তনদার মোহাম্মদ রাকিবকে (বৈদ্যুতিক বাল্ব) পরাজিত করেন। তাবির হোসেন খান পাবেলের প্রাপ্ত ভোট ৩৪ হাজার ৩২৭।

নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ইয়াসমিন আক্তার (প্রজাপতি) তিন হাজার ভোটের ব্যবধানে হাঁস প্রতীকের প্রার্থী মরিয়ম মোস্তফাকে পরাজিত করেন। ইয়াসমিন আক্তারের প্রাপ্ত ভোট ৪৩ হাজার ৫৫১।

এ উপজেলায় মোট কেন্দ্র ১০৪টি। ভোটার সংখ্যা দুই লাখ ৬১ হাজার ৯৪৪ জন।

সাধারণ ভোটারদের চোখে নির্বাচন
এবারের নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করে তুলতে নির্বাচনী মাঠে মাঠপর্যায়ে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপজেলার কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। নির্বাচনের বেশ কয়েকদিন আগ থেকেই নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে রাস্তাঘাটে পুলিশের ব্যাপক তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়।

শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিতে মাঠে তিন প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। ব্যাপক সংখ্যক র্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যদের নিয়ে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয় গোটা নবাবগঞ্জ। এমন পরিবেশ দেখে সাধারণ ভোটাররা মন্তব্য করেন, প্রশাসন চাইলে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশের ধারা বজায় রাখতে পারে। যা ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তারা করে দেখিয়েছে।
আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ভরাডুবির কারণ

অভ্যন্তরীণ কোন্দল, নেতাদের সমন্বয়ের অভাব, দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকা এবং তৃণমূলকর্মীদের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ, নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী প্রবীণ রাজনীতিবিদ আলহাজ আব্দুল বাতেন মিয়ার ভরাডুবির কারণ। এলাকায় ঘুরে ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য আবদুল বাতেন মিয়ার মধ্যে কোন্দল দেখা দেয়। ওই সময় দুজন চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছিলেন। এ নির্বাচনে নাসির উদ্দিন ঝিলু ও বিএনপি নেতা খন্দকার আবু আশফাকের সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়। অল্প ব্যবধানে পরাজিত হন নাসির উদ্দিন ঝিলু। ধারণা করা হয়, ওই নির্বাচনে আওয়ালী লীগের দুজন বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় বিএনপি নেতা আশফাক বিজয়ী হন। এরপর থেকে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব। ওই সময় দলীয় সমর্থন পেয়েছিলেন ঝিলু। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন উপজেলা কমিটির প্রচার সম্পাদক শেখ হান্নান উদ্দিন।

ঝিলুর পক্ষে ভোটের দুদিন আগে মাঠে নামেন ব্যবসায়ী মো. নূর আলী এবং দলের উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু আবদুল বাতেন মিয়া ও তার সমর্থকরা দল-সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেননি। বাতেন মিয়ার বাড়ির কাছের কেন্দ্রে এক হাজার ৮৮৩ ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী ঝিলু পান মাত্র ১১৬ ভোট। এ নির্বাচনে দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী ঝিলুর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশও নেননি। খন্দকার আশফাক বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ওই নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে জয়ী হন। এরপর থেকে আব্দুল বাতেন মিয়া ও নাসির উদ্দিন আহমেদ ঝিলু দলীয় কর্মসূচিও পালন করেন আলাদাভাবে। তাদের সমর্থকদের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।

২০১৯ সালের ৩১ মার্চ উপজেলা নির্বাচনে আব্দুল বাতেন মিয়া দলীয় মনোনয়ন (নৌকা) প্রতীক ও নাসির উদ্দিন আহমেদ ঝিলু (স্বতন্ত্র) প্রার্থী হলে ২০০৯ এর পরাজয়ের স্মৃতি ভোটের মাধ্যমে টেনে আনেন ঝিলুর সমর্থকরা।

ফারুক আহমেদ/এমএআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।