‘মরে গেলেও আফসোস থাকবে না’ করোনাক্রান্ত চিকিৎসকের স্ট্যাটাস

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ব্রাহ্মণবাড়িয়া
প্রকাশিত: ০৩:৪২ পিএম, ১৫ এপ্রিল ২০২০

‘সবাই বলছে কাউকে বলো না। কেন বলব না? আমি তো কোনো দোষ করি নাই। আমি আপনাদের সেবা করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছি। লকডাউনে যখন আপনারা বাড়িতে বসে সময় কীভাবে কাটাবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিলেন তখন আমি হয়তো কোনো কোভিড-১৯ পজেটিভ ব্যক্তির পাশে দাঁড়িয়েছি। হ্যাঁ আমি কোভিড-১৯ পজেটিভ। এতে আমার কোনো লজ্জা বা ভয় বা আফসোস নাই। বরং আমি খুব গর্বিত। কারণ আমি শেষ দিন পর্যন্ত কাজ করে এসেছি।’

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এক নারী চিকিৎসক তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে এসব কথা লেখেন।

মানুষের সেবা করার কারণে মারা গেলেও কোনো আফসোস হবে না উল্লেখ করে ওই নারী চিকিৎসক ফেসবুকে আরও লেখেন, এখন যদি মরেও যাই আমার আফসোস থাকবে না। কারণ আমি ডাক্তার হিসেবে যে শপথ নিয়েছিলাম তা পালন করে এসেছি। আমি যত দিন পেরেছি আপনাদের জন্য হাসপাতালে এবং মাঠে কাজ করেছি। যেদিন আমার মনে হলো আমার নিজেরই স্যাম্পল পাঠানো দরকার, আমি সাথে সাথে স্যাম্পল পাঠিয়ে নিজেকে কোয়ারেন্টাইনড করেছি। আমার পক্ষে যতদূর সম্ভব মানুষ এড়িয়ে চলেছি। নিজের বাড়িতেও ফিরিনি যহেতু আমারও পরিবার আছে, বাড়িতে বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়ি আছেন। তারপরও আজ আমার এলাকার মানুষের কাছে (ময়মনসিংহের যে এলাকায় ভাড়া থাকি) যে ব্যবহার পেয়েছি আমি ও আমার স্বামী তা আমি কোনো দিন ভুলব না। একটা কথা বলে যাই...নগর পুড়লে কী দেবালয় এড়ায়? আগামী বছর বেঁচে থাকলে এই স্মৃতিটা ভেসে উঠবে ফেবুর পাতায়। শুভ নববর্ষ, ১৪২৭! সবার মঙ্গল হোক।’

ওই নারী চিকিৎসক ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার। তিনি মঙ্গলবার রাত ১০টা ৫১ মিনিটে তার ফেসবুক ওয়ালে এই পোস্টটি শেয়ার করেন। তার এই স্টাটাসটি বুধবার দুপুর পৌনে ১টা পর্যন্ত ৬ হাজার ৩০০ মানুষ লাইক করেছেন, কমেন্ট করেছেন ১ হাজার এবং শেয়ার করেছেন ১ হাজার ৪০০ মানুষ।

jagonews24

জানা যায়, তিনি জেলার আখাউড়ার তার শ্বশুরবাড়ি থেকে গিয়ে বিজয়নগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্ব পালন করতেন। বিজয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি জেলার একমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন সেন্টার। বর্তমানে সেখানে ১৮ জন কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য মতে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১০ জন। এদের মধ্যে জেলার বিজয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন নারী চিকিৎসকও রয়েছেন। মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে ওই নারী চিকিৎসকের করোনাভাইরাস পরীক্ষার রিপোর্ট পজেটিভ আসে। বর্তমানে তিনি ময়মনসিংহে অবস্থান করছেন। সেখানেই তিনি আইসোলেশনে আছেন বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ।

আজিজুল সঞ্চয়/এমএফ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।