আমাগের কিছু অইবে না, আল্লাহ রক্ষা করবে
ঝালকাঠি সদর উপজেলা ও জেলা শহরের বাজারগুলোতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার স্থান সংকুলান না হওয়ায় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে অস্থায়ী হাট বসানো হয়েছে। একইভাবে নলছিটির চায়না মাঠ, রাজাপুরের পাইলট স্কুল মাঠ এবং কাঠালিয়ার উপজেলা পরিষদ মাঠেও হাট বসানো হয়েছে।
উপজেলা ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে এ সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন। কিন্তু এসব হাটে সামাজিক দূরত্ব মানছে না কেউ। অপরদিকে প্রত্যন্ত এলাকার অনেক হাটবাজারে সামাজিক দূরত্ব না মেনে দু-পাঁচজন এক এক জায়গায় বসে আড্ডা দিচ্ছেন।
ঝালকাঠি জেলায় ইউপি সদস্যসহ ইতোমধ্যে চারজনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। ১৬ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬টা থেকে সদর উপজেলাকে লকডাউন ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন।
এছাড়া গত ২৫ মার্চ থেকে জেলা প্রশাসন ও যৌথবাহিনীর তৎপরতায় জেলাজুড়ে অঘোষিত লকডাউন চলে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে বলা হয়েছে। এরপরও কেউ মানছে না সামাজিক দূরত্ব।
নবগ্রাম, শেখেরহাট, গুয়াটন এলাকায় দেখা গেছে, মানুষ এক স্থানে বসে আড্ডা দিচ্ছেন। এমনকি একই পুকুরে পাড়ার সবাই গোসল করছেন। একে-অপরের বাড়িতে বেড়াতে আসছেন।
এদিকে ঝালকাঠিতে টিসিবি পণ্য কিনতে ডিলারদের দোকানে ভিড় লেগেই আছে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে ডাল, চিনি, ছোলা ও তেল কিনছে সাধারণ মানুষ। তবে এসব পণ্য কিনতে তারা সামাজিক দূরত্ব মানছেন না। লাইনে গাদাগাদি করে তারা পণ্য কিনছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, আড়তদারপট্টিতে দুপুরের পর থেকে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে আছে শত শত মানুষ। অনেকের মুখে সাধারণ মাস্ক পরা থাকলেও অনেকেই অনিরাপদে কিনছেন পণ্য। গায়ের সঙ্গে গা মিলিয়ে পণ্যের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছেন তারা। লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে অনেকের সঙ্গে ঝগড়া লেগে যায়। সামনে যাওয়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়তে দেখা গেছে অসংখ্য মানুষকে। যারা টিসিবির পণ্য কিনতে এসেছেন, তাদের বেশিরভাগই দরিদ্র শ্রেণির মানুষ।
শহরের নতুন কলাবাগান এলাকার দিনমজুর সোহাগ হাওলাদার বলেন, আমাগো সব কাম-কাইজ বন্ধ। খামু কি, ঘরে কোনো খাওন নাই। সামনে রোজা আইছে, ছোলা, চিনি ও তেল কিনতে আইছি। লাইনে দাঁড়াইছি, কখন কিনতে পারমু জানি না।
গাদাগাদি করে দাঁড়িয়েছেন কেন জানতে চাইলে সোহাগ বলেন, আমাগের কিছু অইবে না, আল্লায় রক্ষা করবে।
আড়তদারপট্টি এলাকায় মাস্ক না পরে লাইনে দাঁড়ানো এক নারীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাস্ক লাগে না। লাইনে দাঁড়াইয়্যা থাকলে ঘামাইয়্যা যাই। মাস্ক পরলে শ্বাস বন্ধ হইয়্যা যাইব।
আড়তদারপট্টির টিসিবির ডিলার জাহাঙ্গীর হোসেন বাবুল বলেন, আমরা পণ্য বিক্রির সময় ক্রেতাদের লাইনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ানোর পরামর্শ দেই। এমনকি দূরত্ব বজায় না রাখলে পণ্য দেয়া হবে না বলেও ঘোষণা দেই। কিন্তু কে শোনে কার কথা। কিছুক্ষণ ঠিক থাকলেও পরে হুমড়ি খেয়ে পড়ে।
গুয়াটন গ্রামের ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম বলেন, করোনার হাত থেকে রক্ষার জন্য প্রশাসনের তদারকির পাশাপাশি আমাদের সচেতন হতে হবে। অকারণে ঘরের বাইরে যাওয়া যাবে না। সামজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে।
ঝালকাঠি জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও এনডিসি আহমেদ হাসান বলেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য আমরা অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। টিসিবির পণ্য বিক্রি এলাকায় যতক্ষণ আমাদের গাড়ি থাকে, ততক্ষণ শৃঙ্খলা বজায় রেখে মালামাল কিনে। গরিব মানুষ এখানে পণ্য কিনতে আসছে, কিন্তু তারা স্বাস্থ্য সুরক্ষা বুঝছে না।
তিনি বলেন, সর্বত্র জনসাধারণকে সচেতন করতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা। অনেককে জরিমানা করেছি। এখনও অনেকের মধ্যে সচেতনতা আসেনি।
আতিকুর রহমান/এএম/পিআর