লাফিয়ে বাড়ছে করোনা রোগী, সীমিত আকারে মার্কেট করছেন তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক সিলেট
প্রকাশিত: ১০:২৩ পিএম, ১৩ মে ২০২০
ছবি : মিঠু দাস জয়

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ঘোষিত লকডাউনের মধ্যেও বুধবার সিলেট নগর ‘যানজটের শহরে’ পরিণত হয়েছে। সরকারি সিদ্ধান্তে সীমিত সময়ের জন্য দোকানপাট খোলায় বেড়েছে মানুষের ভিড়। সিলেটে হঠাৎ করে বেড়েছে করোনা আক্রান্ত রোগী। এ অবস্থায় নগরে মানুষের এমন ভিড় জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা।

দুই সপ্তাহ আগেও সিলেট নগরের রাস্তাঘাট ছিল অনেকটা জনমানবশূন্য। সন্ধ্যা হলেই নামতো নীরবতা। ওই সময় করোনার প্রাদুর্ভাব কম থাকলেও ছিল আতঙ্ক। অথচ এখন দিনে দিনে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়লেও এখন করোনার ভয় যেন উধাও। অথচ মে মাসের শুরুতেও মাস্ক, গ্লাভস এমনকি পিপিই পরে লোকজনকে বাসা থেকে বের হতে দেখা যেতো।

খুব প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় বের হতেন না কেউ। আর বের হলেও সঙ্গে হ্যান্ড স্যানিটাইজার নিয়ে বের হতেন। জনসাধারণের চলাচল কম থাকায় সহজেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে প্রয়োজন শেষ করে বাসায় ফেরতে পারতেন লোকজন। অথচ এখন গায়ে গা লাগিয়ে গাদাগাদি করে নগরে চলছেন মানুষ। নিয়মিতই দেখা দিচ্ছে মানুষের জটলা। হাটবাজার থেকে শুরু করে নগরের মূল সড়কেও এখন লেগে যাচ্ছে যানজট। এই সিলেট নগর ফিরতে শুরু করেছে তার চিরচেনা রূপে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা থাকলেও তা এখন উপেক্ষিত।

Sylhet

৮ মে সিলেট সিটি করপোরেশনের নগরভবনে মেয়রের সঙ্গে ব্যবসায়ী নেতারা বৈঠক করে যৌথভাবে ঘোষণা দেন স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় ঈদুল ফিতরের আগে সিলেটের কোনো মার্কেট ও শপিংমল এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলবেন না। মেয়রের সঙ্গে বৈঠকে ব্যবসায়ী নেতারা বলেছিলেন আগে জীবন, পরে ব্যবসা। করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ১০ মে থেকে সিলেটের কোনো মার্কেট-শপিং মল ও ফ্যাশন হাউস না খোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।

কিন্ত ব্যবসায়ীদের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নগরের হাসান মার্কেট, হকার্স মার্কেটসহ বিভিন্ন জায়গায় দোকানপাট খুলতে শুরু করেছে। সিলেট নগরের প্রায় শতবছরের পুরোনো হাসান মার্কেটটি সিলেটের নিম্নবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয়। এখানে সবসময়ই ক্রেতার সমাগম থাকে। তবে ঈদ বা পূজায় এখানে ক্রেতাদের জটলা থাকে চোখে পড়ার মতো। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

বুধবার (১৩ মে) নগরের বন্দরনবাজার ঘুরে দেখা গেছে, মানুষের উপচেপড়া ভিড় আর এলোপাতাড়ি গাড়ির সারি। হাসান মার্কেট ঘিরেই বেশি ছিল মানুষের সমাগম। হাসান মার্কেটের পাশে হকার্স মার্কেটসহ আশপাশের সব দোকানপাট খোলা থাকায় প্রায় স্বাভাবিক সময়ের মতোই জনসমাগম দেখা গেছে। সামাজিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যবিধিও মানা হয়নি। লেগে যায় ওই এলাকায় যানজট।

একই অবস্থা নগরের আম্বরখানা এলাকায়। ওই এলাকার বেশ কয়েকটি ফ্যাশন হাউস খোলা থাকায় সেখানেও বেড়েছে জনসমাগম। একইসঙ্গে ছোট ছোট গাড়ির আনাগোনা বেড়ে তৈরি হচ্ছে জটলা। বাদ যায়নি নগরের প্রাণকেন্দ্রখ্যাত জিন্দাবাজারও। বড় বড় নামীদামি শপিংমল বন্ধ থাকলেও খোলা হচ্ছে ছোট ছোট দোকানপাট ও বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস। এতে এসব ফ্যাশন হাউস ঘিরে কিছু কিছু জায়গায় এলোমেলো করে গাড়ি পার্কিং করায় দেখা দিয়েছে যানজট।

Sylhet-2

সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েব নিজের অসহায়ত্বের কথা জানিয়ে বলেন, আমি হাসান মার্কেটের ব্যবসায়ীদের দোকান খোলার বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তারা বললেন নগরের হকার্স মার্কেট খোলায় তারাও দোকান খুলেছেন। তারা মার্কেট খোলা রাখলেও আমাদের কিছু করার নেই। কারণ সরকারি নির্দেশনায় আছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খোলা রাখা যাবে। সেজন্য আমরা তো কাউকে জোর করতে পারি না।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) জেদান আল মুসা বলেন, পুলিশ সবসময় জনগণকে সচেতন করতে কাজ করছে। কিন্তু জনগণ যদি সামাজিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধি না মানেন, তাহলে আমাদের আর কি করার আছে?

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আবুল কালাম বলেন, বড় মার্কেটগুলো এখনও বন্ধ। এগুলো খুললে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টিতে আরও গুরুত্ব দেয়া হবে। এখন যেগুলো খুলেছে, তা বিচ্ছিন্নভাবে খোলা। তারপরও জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম চলছে। কেউ সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী না চললে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ছামির মাহমুদ/এএম/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।