বগুড়ায় পুলিশে করোনার থাবা, আক্রান্ত ২৩

করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যারা সরাসরি মাঠে লড়াই করছেন তাদের মধ্যে অন্যতম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এরই মধ্য বগুড়ায় একের পর এক পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এর অন্যতম কারণ হলো শহরে নিয়ন্ত্রণহীন জনস্রোত সামলাতে পুলিশের কঠোর চেষ্টা। কিন্তু কোনো অবস্থায়ই নিরাপদ দূরত্ব থেকে সেটি সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে একের পর এক পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন।
শনিবার (১৬ মে) পর্যন্ত বগুড়ায় মোট ২৩ জন পুলিশ সদস্যের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। এই ২৩ পুলিশ সদস্যের মধ্যে ২১ জন বগুড়া জেলার এবং অপর দুজনের বাড়ি বগুড়া হলেও তাদের কর্মস্থল অন্য শহরে। এদের মধ্যে এখন পর্যন্ত একজন সুস্থ হয়ে কাজে ফিরেছেন। তিনি হলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কনস্টেবল ও আদমদীঘি উপজেলার শাঁওইল গ্রামের বাসিন্দা আহসান হাবীব।
বগুড়ায় শনাক্ত প্রথম করোনা রোগীও ছিলেন ওই পুলিশ সদস্য। গত ১৫ এপ্রিল তার করোনা শনাক্ত হয়। তাকে ওই রাতেই করোনার জন্য বিশেষায়িত মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কদিন পরই তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান। এরপর বগুড়ায় একের পর এক পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হচ্ছেন।
সর্বশেষ শনিবার বগুড়ায় এক সঙ্গে ১২ জন পুলিশ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত সদস্যরা পুলিশ সুপারের কার্যালয়, গোয়েন্দা শাখা, আদালত এবং পুলিশ লাইন্সে কর্মরত। তাদের জেলা পুলিশ হাসপাতালের তত্ত্বাবধানে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী জানান, করোনা আক্রান্ত ২৩ জন পুলিশের মধ্যে ২১ জনই বগুড়া জেলার, বাকি দুজন ঢাকায় কর্মরত। বগুড়ায় আক্রান্ত ২৩ জনের মধ্যে একজন এসআই, দুজন এএসআই এবং ১৮ জন কনস্টেবল রয়েছেন। অপর দুজন ঢাকার। এদের একজন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কনস্টেবল এবং অপরজন এসআই পদ মর্যাদার কর্মকর্তা।
একের পর এক পুলিশ সদস্যদের আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, করোনাভাইরাস একটি বৈশ্বিক দুর্যোগ। এই দুর্যোগকে মোকাবেলা করতে গিয়ে পুলিশের যারা মাঠে কাজ করছেন তারা আক্রান্ত হচ্ছেন। কিন্তু এতে তাদের কারও মনোবল নষ্ট হয়নি। মানসিকভাবে সবাই দৃঢ় অবস্থানে রয়েছেন। যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদেরও মানসিক শক্তি প্রবল। আমাদের পক্ষ থেকে তাদের যথাযথ খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী বলেন, একজনও পুলিশ সদস্য যতক্ষণ পর্যন্ত সুস্থ থাকবেন ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি করোনার বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতার লড়াই চালিয়ে যাবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২১ এপ্রিল বগুড়া জেলা প্রশাসনিকভাবে লকডাউন ঘোষনা করা হয়। কিন্তু শুরু থেকেই লকডাউন কার্যকরে জেলা প্রশাসনের জোড়ালো কোনো তৎপরতা ছিল না। তবে মাঠে শক্তভাবে অবস্থানে ছিল পুলিশ। গত ১০ মে থেকে দোকানপাট খুলে দেয়া হলে শহরে জনস্রোত নামে। জনজট কমাতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে। এ কারণে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।
বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা বলেন, আমরা প্রতিটি পুলিশ সদস্যের নিরাপত্তার দিকে শুরু থেকেই নজর রেখেছি। তারপরও করোনা একটি ক্রিটিক্যাল রোগ হওয়ায় অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন। এখন অসুস্থদের প্রয়োজনীয় সব সাপোর্টই দেয়া হচ্ছে।
আরএআর/এমএস