সুনামগঞ্জে করোনা জয় করলেন চিকিৎসক দম্পতিসহ ৬ জন
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আবুল বাশার মো. ওসমান হায়দার মজুমদার, তার স্ত্রী বিশ্বম্ভপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. সুমাইয়া আফরিন শান্তা ও অ্যাম্বুলেন্স চালক ক্ষিরোদ কুমার হাজংসহ ছয়জন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়েছেন।
রোববার (১৭ মে) দুপুরে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে তাদেরকে করোনা মুক্তির ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সমানে হাততালি ও উপহার সামগ্রী প্রদানের মাধ্যমে করোনা জয়ীদের ছাড়পত্র প্রদান করা হয়।
ছাড়পত্র পাওয়া অন্যরা হলেন- বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্যানিটারি ইন্সপেক্টর তাপস চক্রবর্তী, স্বাস্থ্যকর্মী আশিকুর রহমান ও লালারগাও এলাকার বাসিন্দা গাজীপুরফেরত উত্তম দাস।
এ সময় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. সফর উদ্দিন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সমীর বিশ্বাস, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দীপক কুমার দাস, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সরুয়ার আলম, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আব্দুর রহমান, যু্ব উন্নয়ন কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন, বাদাঘাট দক্ষিণ ইউপি চেয়ারম্যান এরশাদ মিয়া, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা প্রেসক্লাব সভাপতি স্বপন কুমার বর্মণ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
করোনামুক্ত হওয়া বিশ্বম্ভপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. সুমাইয়া আফরিন শান্তা জানান, আল্লাহর রহমতে তিনি ও তার স্বামী ডা. আবুল বাশার মো. ওসমান হায়দার মজুমদার এখন সুস্থ আছেন। অসুস্থ থাকাকালীন সময়ে সাহস যোগানো ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের জন্য তিনি সিভিল সার্জন মো. শামস উদ্দিন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সমীর বিশ্বাসের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি সকলকে সাবধানে ও সতর্ক থাকতে অনুরোধ জানান। এছাড়াও করোনা আক্রান্ত হলে ভয় না পেয়ে নিকটস্থ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগাযোগ করতে বলেন।
তিনি আরও জানান, করোনা শনাক্ত হওয়ার পর তারা দুজনেই সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলেন কোথায় চিকিৎসা নেবেন। কিন্তু সিভিল সার্জন ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সহযোগিতায় তারা নিজ কোয়ার্টারেই আইসোলেশনে থেকে সুস্থ হয়ে ওঠেন। শিগগিরই তিনি কাজে যোগদান করবেন বলেও জানান।
ছাড়পত্র পাওয়া অ্যাম্বুলেন্স চালক ক্ষিরোদ কুমার হাজং জানান, তার শারীরিক অবস্থা ভালো। স্বাস্থ্যবিধি মেনে তিনি নিয়মিত খাবার খাচ্ছেন। বর্তমানে তিনি বাড়িতে আছেন। তার অসুস্থতাকালীন সময়ে যারা তার জন্য দোয়া, আশীর্বাদ এবং সহায়তা করেছেন তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তিনি। শিগগিরই তিনি কাজে যোগদান করবেন বলেও জানান।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ বলেন, রোববার ছয়জন সম্পূর্ণ সুস্থতা লাভ করে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এটি অনেক আনন্দের বিষয়। তারা সকলেই সুস্থ আছেন। শিগগিরই তারা কাজে যোগদান করবেন।
তিনি আরও জানান, সব ধরণের রোগীর জন্যই হাসপাতাল খোলা রয়েছে। লকডাউনের মতো অনভিপ্রেত পরিস্থিতি এড়াতে চিকিৎসা নিতে এসে কোনো লক্ষণ ও ভ্রমণ বৃত্তান্ত গোপন না করতে তিনি সকলকে অনুরোধ জানান। এছাড়া একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে অযথা ঘুরাঘুরি না করে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে বলেন।
উল্লেখ্য, এর আগে ঢাকা থেকে করোনা শনাক্ত হওয়ার পর পালিয়ে আসা একজন রোগীকে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা থেকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তীতে তিনি করোনা মুক্তির ছাড়পত্র পান। রোববার ছাড়পত্র পাওয়া ছয়জনসহ মোট সাতজন করোনা মুক্তির ছাড়পত্র পেলেন। বর্তমানে একজন নার্স আইসোলেশনে রয়েছেন। তার ২য় পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। পরবর্তী রিপোর্ট নেগেটিভ আসলে তাকেও ছাড়পত্র দেয়া হবে। গত বুধবার (১৩ মে) বিশ্বম্ভপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের লকডাউন তুলে নিয়ে পূর্বের ন্যায় সকল স্বাস্থ্যসেবা চালু করা হয়েছে।
মোসাইদ রাহাত/আরএআর/এমকেএইচ