করোনার উপসর্গ নিয়ে ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারের ৪ জনের মৃত্যু
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে কক্সবাজারের চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে একজন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে, একজন হাসপাতালে নেয়ার পথে এবং বাকি দুজন কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মারা যাওয়া সবাই কক্সবাজার শহরের বাসিন্দা। এ নিয়ে জেলায় করোনার উপসর্গ নিয়ে ৯ জনের মৃত্যু হলো। কক্সবাজার সদর হাসপাতাল এবং স্থানীয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃতরা হলেন- কক্সবাজার শহরের টেকপাড়ার বাসিন্দা ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী মোহাম্মদ হাশেম (৮০), শহরের ২নং ওয়ার্ডের মধ্যম নুনিয়াছড়ার বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন ওরফে জয়নাল কোম্পানি (৫৬), শহরের পেশকার পাড়ার বাসিন্দা আবুল হাশেম (৫৫) ও শহরের এসএম পাড়ার শের আলীর স্ত্রী নুরুন্নাহার (৫৪)।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. শাহীন আবদুর রহমান জানান, কক্সবাজার শহরের এসএম পাড়ার শের আলীর স্ত্রী নুরুন্নাহার (৫৫) সোমবার (২৫ মে) দিবাগত রাত ২টার দিকে সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে মারা যান। তিনি কয়েকদিন আগে করোনার উপসর্গ নিয়ে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছিলেন। তার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। আর কক্সবাজার শহরের আবুল হাশেম (৫৫) মঙ্গলবার (২৬ মে) দুপুর ২টার দিকে সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে মারা যান। তিনি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যে মারা গেছেন। তিনি করোনার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তবে এখনও তার রিপোর্ট হাতে আসেনি।
অন্যদিকে কক্সবাজার শহরের টেকপাড়ার বাসিন্দা ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী মোহাম্মদ হাশেম সকাল ৮টার দিকে চট্টগ্রামের ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতাল ‘চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে মারা যান। বেশ কিছুদিন আগে তার করোনা ধরা পড়ার পর গত ১৪ মে তাকে চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। মৃত মোহাম্মদ হাশেমের স্ত্রী, চিকিৎসক ছেলে ও পুত্রবধূও করোনা আক্রান্ত হয়েছেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
অপরদিকে কক্সবাজার শহরের ২নং ওয়ার্ডের মধ্যম নুনিয়াছড়ার বাসিন্দা ও মাছ ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন ওরফে জয়নাল কোম্পানি সোমবার (২৫ মে) মধ্যরাতে দিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান। তিনি গত ২৩ মে করোনার নমুনা পরীক্ষার জন্য জমা দিয়েছিলেন। মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে তার রিপোর্ট পজিটিভ পাওয়া যায়।
এই চারজনসহ জেলায় এ পর্যন্ত করোনার উপসর্গ নিয়ে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে কক্সবাজার শহরে সাতজন, চকরিয়া উপজেলায় একজন ও রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নে এক বৃদ্ধা রয়েছেন।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার ১৬৪ জনের নমুনা পরীক্ষায করে ৩৯ জনের করোনা পজিটিভ এসেছে। এদের মাঝে ৩৬ জন নতুন রোগী আর অপর তিনজন রোগীর ফলোআপ রিপোর্টও পজিটিভ এসেছে। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে মাঝে কক্সবাজার সদর উপজেলায় ২০ জন, উখিয়া উপজেলার ছয়জন, চকরিয়া উপজেলার ৯ জন, চট্টগ্রামের লোহাগড়ার একজন রয়েছেন।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. অনুপম বড়ুয়া জানান, ল্যাবে গত ৫৫ দিনে ৫ হাজার ৫০৫ জন সন্দেহজনক রোগীর করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হয়। সেখানে ৪৯৬ জনের করোনা পজিটিভ আসে। পজিটিভ আসাদের মাঝে মহেশখালীর ২৮ জন, টেকনাফের ১৫ জন, উখিয়ার ৫২ জন, রামুর সাতজন, চকরিয়ার ১৪১ জন, কক্সবাজার সদরের ১৪০ জন, কুতুবদিয়ার দুইজন এবং পেকুয়ায় ৩৭ জন রয়েছেন। এদের মাঝে ২৯ জন রোহিঙ্গাও রয়েছেন। বাকিরা বান্দরবান জেলা, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড, লোহাগাড়া ও সাতকানিয়ার বাসিন্দা।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, নানা প্রতিরোধের পরও করোনা সবখানেই বিস্তার লাভ করেছে। কক্সবাজারে এখন বাড়ছে করোনা পজিটিভের সংখ্যা। চিকিৎসা কার্যক্রমও বাড়ানো হয়েছে । সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন অনেক রোগী। করোনা থেকে মুক্ত থাকার একমাত্র সহজ উপায় সচেতনতা। নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হলে করোনার গতি ধরে রাখা সম্ভব।
সায়ীদ আলমগীর/আরএআর/পিআর