আইসিইউয়ের জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে অর্ধশতাধিকবার ফোন করেছি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার প্রায় দুই মাস অতিবাহিত হলেও এখনও নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালে আইসিইউ চালু না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সেখানকার প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমান। আইসিইউ চালু করা নিয়ে তাকে মিথ্যা আশ্বাস দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তার।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ফোন করতে করতে রীতিমতো ক্লান্ত হয়ে গেছি। করোনা হাসপাতালের আইসিইউ চালু করার জন্য আমি স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে কমপক্ষে অর্ধশতাধিকবার ফোন করেছি। প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে আমাকে মিথ্যা আশ্বাস দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছিল আগামী ১ জুনের মধ্যে আইসিইউ চালু করা হবে। কিন্তু এখনও কোনো হদিস পাচ্ছি না। আর আইসিইউ চালু করা নিয়ে যে ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়া ছাড়া আমার কিছু বলার নেই। আর ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেয়ার পরও যদি এত দেরি হয়, সেখানে আমার কী বলার আছে।
জানা যায়, করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ভিডিও কনফারেন্সে গত ৮ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালটিকে করোনা চিকিৎসার জন্য ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
হাসপাতালটিতে ৪০ বেডের আইসোলেশন ওয়ার্ড ও ১০ বেডের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) কার্যক্রম চালুর সিদ্ধান্ত হয়। গত ১৩ এপ্রিল থেকে হাসপাতালটিতে শুরু হয় করোনা রোগী ভর্তি কার্যক্রম। কিন্ত দীর্ঘ এই সময়ে চালু হয়নি আইসিইউ।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে উদ্দেশ্য করে শামীম ওসমান বলেন, যদি নাই-বা পারবেন তাহলে মিথ্যা আশ্বাস দেবেন কেন? আপনাদের কথার ওপর নির্ভর করে তো আমরা মানুষকে আশ্বাস দেই। একটা রোগীর মৃত্যু যদি আইসিইউয়ের কারণে হয়ে যায়, তখন আমরা নিজেকে নিজের কাছে ক্ষমা করতে পারব না।
নিজের অসহায়ত্বের কথা প্রকাশ করে তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালটিকে করোনা রোগীদের জন্য আইসিইউ চালুর বিষয় নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে আমি বলতে বলতে এখন টায়ার্ড হয়ে গেছি। আর বলতে ইচ্ছা করে না। রোগী আনা-নেয়ায় ব্যবহৃত দুইটা অ্যাম্বুলেন্সের টাকা আমি দিচ্ছি। স্যাম্পল কালেকশনের জন্য আমার ৫ জন লোক কাজ করছে। তাদের খরচ আমি দিচ্ছি। শুরু থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করছি। কিন্তু তারপরও মানুষ যদি তার প্রাপ্য সেবাটা না পায়, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।
শামীম ওসমান আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা লিংক রোডের সাইনবোর্ড এলাকায় প্রো-অ্যাকটিভ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৫০টি বেড রয়েছে। সেখানে ১০টা আইসিইউ আছে। সরকারি নির্দেশনা রয়েছে, বেসরকারি প্রতিটা হাসপাতালকে করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি করতে হবে। অথচ এখন পর্যন্ত প্রো-অ্যাকটিভ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী ভর্তি করছে না। রোগী ভর্তি করতে হবে। প্রশাসন, দায়িত্বশীল কর্মকর্তা যাদের ওপর নির্দেশনা আছে তারা কেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। সে ব্যাপারে আমি যথেষ্ট সন্দিহান।
'আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যদি তারা করোনা রোগী ভর্তির ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাহলে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে আমি নিজেই ওই হাসপাতালে যাব এবং প্রয়োজন হলে ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে যা যা ব্যবস্থা নেয়ার দরকার আমি নেব। সরকার যেখানে করোনা রোগী চিকিৎসার জন্য অর্থ দিচ্ছে, সেখানে তারা কেন করোনা রোগীর চিকিৎসা দেবে না? সিদ্ধিরগঞ্জের কাঁচপুরে সাজেদা ফাউন্ডেশন হাসপাতালে মাত্র ৪টা আইসিইউ। আমি চাই না, আমার নারায়ণগঞ্জের মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হোক',- বলেন শামীম ওসমান।
মো. শাহাদাত হোসেন/জেডএ/পিআর