বাবার সঙ্গে মসজিদে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরল জুনায়েদও

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুমিল্লা
প্রকাশিত: ১০:৩৭ এএম, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার তল্লা বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহতদের মধ্যে মসজিদের মুয়াজ্জিন কাম ওয়াক্তিয়া নামাজের ইমাম হাফেজ মাওলানা দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়া এবং তার ছেলে জুনায়েদ নিহত হন। তাদের মরদেহ শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার বদরপুর গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢালুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নাজমুল হাছান ভূঁইয়া বাছির।

নিহত হাফেজ মাওলানা দেলোয়ার হোসেন জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার ঢালুয়া ইউনিয়নের বদরপুর মধ্যপাড়ার মৃত হাফেজ মাওলানা শফিকুর রহমানের ছেলে। অগ্নিদগ্ধ এ বাবা-ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পরিবারে চলছে শোকের মাতম।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হাফেজ দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়ার ছেলে জোনায়েদ হোসেন নিউ খানপুর হাসপাতাল রোড কাওমি মাদরাসার ৭ম শ্রেণির ছাত্র ছিল। ঘটনার সময় বাবার সঙ্গে নামাজ পড়তে মসজিদে যায় সে। নিহত হাফেজ দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়া কালির বাজার আমলাপাড়া হাফিজিয়া মাদরাসা থেকে লেখাপড়া শেষ করে বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিগত প্রায় ২৫ বছর ধরে ইমামতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তিনি তার দুই ছেলে মাদরাসা ছাত্র জোনায়েদ হোসেন ও দ্বিতীয় ছেলে হাফেজিয়া মাদরাসার ছাত্র হাফেজ জাকারিয়াকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জে বসবাস করে আসছিলেন।

হাফেজ দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়ার বাবা মৃত মৌলভী শফিকুর রহমান ভূঁইয়াও একই এলাকার তল্লা বড় মসজিদে দীর্ঘ ৪০ বছর মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করেন। হাফেজ মৌলভী শফিকুর রহমান ৭ বছর আগে মারা যান। বাবার কর্মস্থল সূত্রে ছেলে হাফেজ মাওলানা দেলোয়ার হোসেনও গত ২৫ বছর থেকে তল্লা বায়তুস সালাত জামে মসজিদে ইমাম কাম মুয়াজ্জিম হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী ফাহমিদা আক্তার তিন মেয়ে সুমাইয়া আক্তার (১৮), সুরাইয়া আক্তার (৮) ও ছোট মেয়ে ফাইজা আক্তারকে (৩) নিয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকতেন। বড় মেয়ে সুমাইয়া আক্তার নাঙ্গলকোটের ঢালুয়া সিনিয়র মাদরাসায় আলীম ২য় বর্ষে অধ্যায়নরত, ২য় মেয়ে সুরাইয়া আক্তার একই মাদরাসার ৩য় শ্রেণির ছাত্রী। দেলোয়ার হোসেনের গ্রামের বাড়িতে ভিটে-মাটি ছাড়া কিছুই নেই।
নিহতের স্ত্রী ফাহমিদা আক্তার জানান, ঘটনার কিছু আগে আমার স্বামী মোবাইলে বলেন ‘আমার এখানে ভালো লাগছে না, ২-১ দিনের মধ্যে চাকরি ছেড়ে একেবারে বাড়ি চলে আসব।’ সেই তিনি শনিবার রাতে বাড়িতে এলেনই, কিন্তু লাশ হয়ে।

দেলোয়ার হোসেনের শ্যালক জোবায়ের হোসেন বলেন, নিহত দেলোয়ার হোসেন ও তার ছেলে জোনায়েদ হোসেনের মরদেহ গ্রহণ করে নারায়ণগঞ্জের সেই জামে মসজিদ এলাকায় প্রথম নামাজের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে শনিবার রাতে নাঙ্গলকোটের ঢালুয়ার বদরপুরে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে রাত সাড়ে ১০টার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়েছে।

ঢালুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নাজমুল হাছান ভূঁইয়া বাছির জানান, হাফেজ দেলোয়ার হোসেন ও তার ছেলে জোনায়েদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা জানাচ্ছি। পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করে যাব। এছাড়াও তিনি অসহায় পরিবারটিকে সহায়তা করার জন্য সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করেন।

নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী অফিসার লামইয়া সাইফুল বলেন, দেলোয়ার হোসেনের পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা করা হবে।

কামাল উদ্দিন/এফএ/পিআর

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।