৩৫ বছর পর দুই পায়ে দাঁড়ালেন স্বপন গাজী

চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসায় দীর্ঘ ৩৫ বছর পর স্বপন গাজীর (৪৫) বাঁকা পা সোজা হয়েছে। তিনি এখন তার দুই পা দিয়ে স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা শুরু করেছেন, যা ৩৫ বছর ধরে তার কাছে স্বপ্নের মতো ছিল।
স্বপন গাজী চাঁদপুর শহরের মঠখোলা এলাকার গাজী বাড়ির মৃত ফজলুর রহমান গাজীর ছেলে। তিনি দুই মেয়ে ও এক ছেলেসন্তানের জনক। দীর্ঘদিন তিনি এক পায়ে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালিয়েছেন।
স্বপন গাজী জানান, ১০ বছর বয়সে শীতের সময় বাড়ির রান্নাঘরে আগুন পোহাতে গেলে তার লুঙ্গিতে আগুন ধরে যায়। তার বোন আগুন দেখে চিৎকার শুরু করলে সবাই এসে আগুন নেভায়। কিন্তু এরই মধ্যে তার হাঁটুর মাংস আগুনে পুড়ে যায়। সংসারে অভাবের কারণে উন্নত চিকিৎসা নিতে পারেননি তিনি। গ্রাম্য ডাক্তারের ওষুধে সেরে যাবে বলে ধারণা করেছিলেন পরিবারের লোকজন। কিন্তু তাতে হিতে বিপরীত হয়, পুড়ে যাওয়া পা একেবারেই বাঁকা হয়ে যায়। সেই বাঁকা পা নিয়ে দীর্ঘ ৩৫ বছরের প্রতিবন্ধী জীবনের ঘানি টেনে যাচ্ছিলেন তিনি।
সম্প্রতি তার সেই কুচকানো অংশে ক্ষত সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় তিনি চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগে ভর্তি হন। ভর্তির পর ডা. মো. শাহাদাত হোসেন, ডা. মো. আনিসুর রহমান ও ডা. মো. ফরিদ আহমেদ চৌধুরী প্রথম ধাপে সব পোড়া অংশ অপারেশনের মাধ্যমে অপসারণ করে তার বাকা পা সোজা করেন। পরে ক্যান্সার হয়েছে কি-না তা পরীক্ষার জন্য আক্রান্ত স্থানের মাংস ঢাকায় প্রেরণ করেন। ঢাকা থেকে রিপোর্ট আসে তাতে ক্যান্সারের অস্তিত্ব নেই। এরই প্রেক্ষিতে গত ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় অপারেশনের জন্য তাকে প্রস্তুত করা হয়। সেই অপারেশনও সফল হয়।
এ বিষয়ে ডা. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, মেডিকেলের পরিভাষায় রোগটাকে বলে পোস্ট বার্ন কন্ট্রাকচার বা আগুনে পুড়ে শরীরের কোনো অংশ কুচকে যাওয়া। অপারেশনটি যথেষ্ট জটিল এবং ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। আলহামদুলিল্লাহ আমরা সফল হয়েছি। বিনা খরচে রোগীর চিকিৎসা দিতে পেরেছি। বিজয়ের মাসে এ যেন এক যুদ্ধ জয়ের আনন্দ।
অপারেশনের বিষয়ে ডা. মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, আলহামদুলিল্লাহ আপাতত স্বপন গাজী ভালো আছেন এবং নিজে নিজে হাঁটতে পারেন। যদিও একটা সমস্যা এখনও আছে তার। যেটাকে আমরা মেডিকেলের ভাষায় বলি ফুট ড্রপ। তার পুরোপুরি হাঁটতে আরেকটি অপারেশনের প্রয়োজন আছে। যার নাম ট্রেন্ডন ট্রান্সফার। এই অপারেশনটা তিন মাস পরে করার চিন্তাভাবনা করছি আমরা।
তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপে সহকর্মী চিকিৎসকসহ মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট, ওটি নার্স, স্টাফ ও ওয়ার্ডের নার্স এবং অন্যান্য স্টাফ সর্বোচ্চ সহায়তা করেছেন। অর্থোপেডিক বিভাগ সবার কাছে কৃতজ্ঞ।
নজরুল ইসলাম আতিক/আরএআর/এমকেএইচ