পরিযায়ী পাখি আর পর্যটকে মুখর ছৈলার চর

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ঝালকাঠি
প্রকাশিত: ০৩:০৫ পিএম, ০৪ ডিসেম্বর ২০২০

ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের বিষখালী নদীতে অবস্থিত ছৈলার চরে শীতের শুরুতেই বেড়েছে পরিযায়ী পাখির আগমন। একইসঙ্গে বেড়েছে পর্যটকও। ছৈলা গাছের ডালে ডালে এখন শালিক, ডাহুক আর বকের ঝাঁক। এছাড়াও রয়েছে মৌচাক। তাই পাখির কিচিরমিচির শব্দ ও মৌমাছির গুনগুন রবে মেতে উঠেছে এ চর।

এক যুগেরও আগে ৭০ একর জমি নিয়ে বিষখালী নদীর বুকে জেগে ওঠে এক বিশাল চর। যেখানে রয়েছে লক্ষাধিক ছৈলা গাছ। আর ছৈলা গাছের নাম থেকেই জেগে ওঠা এ চরের নাম রাখা হয়েছে ‘ছৈলার চর’। ছৈলা ছাড়াও এখানে কেয়া, হোগল, রানা, এলি, মাদার, আরগুজিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে।

kathalia-cailar-char1

শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ চরে আসতে শুরু করেছে পরিযায়ী পাখি। তার ওপর ভ্রমণ পিপাসুদের প্রতিদিনের পদচারণায় এখন মুখরিত এ চর।

কাঁঠালিয়া লঞ্চঘাট থেকে নৌপথে যেতে হয় ছৈলার চরে। ২০১৫ সালে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন ছৈলারচর স্থানটি পর্যটন স্পট হিসেবে চি‎হ্নিত করেছে। তবে এর বাস্তবায়ন হয়নি ছয় বছরেও।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এ চরে রয়ে গেছে নানা সমস্যা। সড়ক পথে কোনো যাতায়াতের ব্যবস্থা নেই। এমনকি চরের মধ্যে হাঁটারও কোনো রাস্তা নেই। এছাড়াও ঘাটে সিঁড়ি না থাকায় নৌ পথের পর্যটকদের ছৈলার চরে যেতে হয় হাঁটু পরিমাণ পানি ও কাদা ভেঙে।

kathalia-cailar-char1

তাছাড়া এখানে নেই বিশুদ্ধ পানি ও শৌচাগারের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। কোনো বিশ্রামাগার না থাকায় এবং নিরাপত্তাহীনতায় অনেক পর্যটক সেখানে যেতে বিমুখ হচ্ছেন। এ পর্যটন এলাকা ঘিরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও রেস্ট হাউস করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

কাঁঠালিয়ার উদীয়মান নারী সংগঠক সাদিয়া জাহান মনি বলেন, পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়তে হলে নদীর পাড় থেকে একটি ঘাট, সড়ক পথে যোগাযোগের জন্য কিল্লার পাড় থেকে একটি সেতু, উন্নত মানের বেশ কিছু টয়লেটের ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যকর পানীয় জলের ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত গেস্ট হাউস এবং নিরাপত্তার জন্য প্রহরীর ব্যবস্থা করতে হবে। প্রশাসনিকভাবে অবকাঠামো ও পর্যটন সুবিধা পেলে সরকার এখান থেকে রাজস্বও পাবে বলে জানান তিনি।

দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বরিশাল বিভাগীয় কো-অর্ডিনেটর এবং সমাজকর্মী মো. ফারুক হোসেন খান বলেন, উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ার বিষখালী নদীর তীরে প্রাকৃতিকভাবে জেগে ওঠা নয়নাভিরাম ছৈলার চরে পর্যটন খাতের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও রয়েছে নানা সংকট। তারপরও সেসব সংকট উপেক্ষা করেই প্রকৃতির নয়নাভিরাম এই চর পর্যটকদের মিলনমেলায় পরিণত হচ্ছে।

kathalia-cailar-char1

ব্যবসায়ী শামসুল হক মনু জানান, শীত এলেই এসব জলাশয়, নদীর তীরের নিরাপদ স্থানসহ বিভিন্ন হাওর, বাঁওড়, বিল ও পুকুরের পাড়ে চোখে পড়ে নানা রঙ-বেরঙের পাখি। তবে বেআইনিভাবে শিকার হচ্ছে এসব পাখি।

ঝালকাঠি সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোসাম্মাৎ জেবুন্নেছা জানান, প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে পাখির একটা অতুলনীয় মিল রয়েছে। যেকোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আগেই পাখি তা টের পায়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অতিথি পাখির আগমন আগের চেয়ে অনেকটাই কমে গেছে। এছাড়াও স্থানীয়দের শৌখিনতা ও পেশাদার শিকারের ফলে অবাধ বিচরণ করতে না পারায় দিনদিন ক্রমান্বয়ে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে।

kathalia-cailar-char1

ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যটন কর্পোরেশনকে ছৈলার চরকে পর্যটন স্পট তালিকাভুক্তির জন্য চিঠি দিয়ে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়েছে। তালিকাভুক্তি হলেই পর্যটকদের চাহিদা অনুযায়ী ব্যবস্থা আমরাই করব। জরুরি ভিত্তিতে উপজেলা প্রশাসনকে বলেছি সাধ্যমতো ব্যবস্থা করতে।

আতিকুর রহমান/এসএমএম/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।