চম্পাকলিতে টিকে আছে গাজীপুরের সিনেমা ব্যবসা

আমিনুল ইসলাম
আমিনুল ইসলাম আমিনুল ইসলাম , জেলা প্রতিনিধি, গাজীপুর গাজীপুর
প্রকাশিত: ০৪:৩৩ পিএম, ০১ এপ্রিল ২০২১

এক সময় সিনেমা পাগল দর্শকদের উপচে পড়া ভিড় ছিল গাজীপুরের সিনেমা হলগুলোতে। দর্শক না থাকায় এখন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সেসব সিনেমা হল। ফলে হতাশায় ভুগছেন গাজীপুরের হল মালিকরা।

জানা গেছে, ২০১১ সাল পর্যন্ত গাজীপুরে ১৮টি সিনেমা হল ছিল। যার বেশিরভাগই এখন বন্ধ। নতুন করে কোনো সিনেমা হল গড়ে ওঠেনি।

গাজীপুরের উল্লেখযোগ্য সিনেমা হল হচ্ছে- চান্দনা, ঝুমুর, নন্দিতা, উল্কা, বর্ষা, বর্ষণ, চম্পাকলি, আনারকলি, ক্যাপরী, এরিণ, মোহনা, সাগর, আলোঘর, নাদিয়া, বনরুপা, শাপলা, চিত্রপুরী ও মনোরম। গত ৯ বছরে ১৮টি সিনেমা হলের মধ্যে অর্ধেকের বেশি বন্ধ হয়ে গেছে। যেগুলো চালু রয়েছে সেগুলোও বন্ধের পথে।

সিনেমা হল মালিকসহ সংশ্লিষ্টরা জানান, ডিস লাইন ও ইন্টারনেটের কারণে মানুষ এখন ঘরে বসেই সিনেমা দেখে। এছাড়া ভালো মানের ছবি কম থাকায় হলের প্রতি মানুষের আগ্রহ নেই। বিভিন্ন হল বছরের পর বছর লোকসান দিয়ে চালানোর ফলে দেনায় পড়ে বাধ্য হয়ে বন্ধ করে দিতে হয়েছে।

jagonews24

গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার বাসিন্দা মো. মোবারক আলী জানান, এক সময় কাজের ফাঁকে প্রায় প্রতিদিন গাজীপুরের মোহনা, চান্দনা, বর্ষা, উল্কা ও ঝুমুর সিনেমা হলে ছবি দেখতাম। এখন হলের পরিবেশ নষ্ট। তাই বাসায় ডিসলাইন ও ইন্টারনেটে পরিবার নিয়ে সিনেমা দেখি। ফলে সিনেমা হলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।

গাজীপুরের ভোগড়া এলাকার এমারত হোসেন জানান, আমাদের চেয়ে ভারতের ছবির কাহিনী অনেক ভালো। এছাড়া দেশের সিনেমা হলের পর্দাও অনেক খারাপ, পরিস্কার দেখা যায় না। আগে হলে ছবি দেখতে লাইন ধরে টিকিট কাটতে হত। এখন ডেকেও দর্শক পাওয়া যায় না। অবস্থা আগের জায়গায় নিতে হলের পরিবেশ, ভালো মানের ছবি ও হলের পর্দা উন্নত করতে হবে। তবেই হয়ত দর্শক আবার হলে গিয়ে ছবি দেখবে।

মৌচাক মোহনা সিনেমা হলের কর্মকর্তা আব্দুল হালিম জানান, টেলিভিশন থাকায় মানুষ হলে আসে না। ঘরে বসেই এখন সব ছবি দেখে। এছাড়া হলের আগেই তা টেলিভিশন, ডিশ ও ইন্টারনেটে দেখা যায়। ফলে মানুষ এখন হলে আসে না। এছাড়া ছবির মানও তেমন ভালো হয় না।

গাজীপুর জেলা তথ্য অফিসার মো. জালাল উদ্দিন জানান, গাজীপুরে এখন ৮-১০টি সিনেমা হল রয়েছে। বাকিগুলো বন্ধ। যেগুলো চলছে সেগুলোও বন্ধ হওয়ার উপক্রম।

jagonews24

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন

মহানগরীতে চারটি হল টিকে রয়েছে। সেগুলো হলো- চম্পাকলি, বর্ষা, উল্কা ও ঝুমুর। চম্পাকলি আয়তনের দিক থেকে দেশের অন্যতম বৃহৎ সিনেমা হল। আসন ১২০০।

চম্পাকলির পর পরিবেশের দিক থেকে বর্ষার অবস্থান। গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে সামান্য দক্ষিণে অবস্থিত মধ্যমমানের হল বর্ষা। এর পরিবেশ বেশ ভালো। এ হলে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার প্রযোজিত কিংবা পরিবেশিত সব ছবি প্রথম সপ্তাহেই প্রদর্শিত হয়। তবে এর পাশাপাশি অন্যান্য নতুন ছবিও এ হলে প্রদর্শিত হয়ে থাকে।

গাজীপুর জেলায় যত সিনেমা হল রয়েছে তার মধ্যে চম্পাকলির পরিবেশ সবচেয়ে ভালো। এটা এক ধরনের ওপেন সিক্রেট, বর্তমানে দেশের ফিল্ম ব্যবসা অনেকখানি এ হলের ওপর নির্ভরশীল। কারণ ছবির কোয়ালিটি যত খারাপই হোক এখানকার সিনেমা প্রেমীরা বাংলা সিনেমা দেখেন। নিয়মিত দর্শক বেশি হয় বলে চম্পাকলি হলের টিকিট সেলও তুলনামূলক বেশি।

আশির দশকে প্রতিষ্ঠিত এ হলের পাশে পূর্বে আনারকলি নামে আরেকটি বেশ বড় হল ছিল। তবে ৩-৪ বছর আগে সেটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। দুটি হলের মালিক স্থানীয় রাজনীতিবিদ সালাউদ্দিন সরকার। জেলার ঐতিহ্যবাহী আনারকলি হলটি ভেঙে সেখানে জুতার শো-রুম করা হয়েছে।

এরপর রয়েছে জয়দেবপুরে ঝুমুর সিনেমা হল, যদিও বর্তমানে প্রচণ্ডভাবে দর্শকখরায় ভুগছে।

কারণ হিসেবে স্থানীয়রা জানায়, শহরের ব্যস্ততম বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এ সিনেমা হলে এককালে প্রচুর বাজে ছবি প্রদর্শনের অভিযোগ রয়েছে। যার কারণে হলের নিয়মিত দর্শকেরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।

jagonews24

একই কারণে জয়দেবপুরের চান্দনা ও নন্দিতা হলেও দর্শক কমেছে। এ দুটি হল এখন যথাক্রমে গোডাউন ও টেইলার্স হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

অশ্লীল ছবি প্রদর্শনের দায়ে বছরখানেক আগে ঝুমুর সিনেমা হল সাময়িক সিলগালা করার পর হলের সামনের অংশটুকু সুপার শপ স্বপ্ন ভাড়া নেয়। এরপর হলের সংস্কার করে মধ্যমানের পরিবেশে আনা হয় এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করা হয়। এখন এটিতে সিনেমা দেখার কিছু পরিবেশ ফিরলেও দর্শক মিলছে না।

পরিবেশের দিক থেকে সবচেয়ে পিছিয়ে চৌরাস্তার উল্কা। অশ্লীল ছবি প্রদর্শনের জন্য এ হল বেশ সমালোচিত। এ কারণে আগে বেশ কয়েকবার এটি সিলগালা করা হয়েছে। বর্তমানে নতুন পুরোনো ছবি মিলমিশ করে হলটি চলছে। তবে ভেতরের পরিবেশ ততটা সুবিধার নয়।

কালিয়াকৈর উপজেলা

উপজেলায় মোট সিনেমা হল রয়েছে তিনটি। সাগর, রজনী ও মোহনা। তিনটিই চরম রুগ্ন অবস্থায় রয়েছে। দর্শক খরার কারণে যেকোনো সময় ভেঙে ফেলা হতে পারে এ তিন সিনেমা হল।

jagonews24

পরিবেশ মধ্যমমানের হলেও সাগর সিনেমা হলের অবস্থান কালিয়াকৈর বাসস্ট্যান্ডে। এ হলটি নিয়মিত নতুন ছবি প্রদর্শন করে।

মোহনার অবস্থান মৌচাক এলাকায়। এখানে মাঝেমধ্যে নতুন ও বেশিরভাগ সময় পুরোনো ছবি দেখানো হয়। আর রজনীর অবস্থান চন্দ্রার খাড়াঝরা বাসস্ট্যান্ড থেকে একটু দূরে। পুরো গাজীপুর জেলার সব থেকে ছোট সিনেমা হল এটি।

শ্রীপুর উপজেলা

মাত্র দুটি সিনেমা হল বর্তমানে টিকে আছে। যার একটি বনরূপা অপরটি শাপলা।

বনরূপা মাওনা চৌরাস্তায় আর শাপলা শ্রীপুর বাসস্ট্যান্ডে।

বনরূপা তার যৌবন পেরিয়ে বৃদ্ধ বয়স পার করছে। ফলে যে কোনো সময় এটি বন্ধ হতে পারে। এছাড়া হলের পরিবেশও ততটা সুবিধার নয়, ভেতরে বসার জায়গা, পর্দা, সাউন্ড কোনোটাই সন্তোষজনক নয়।

অন্যদিকে শাপলা সিনেমা হলের পরিবেশ তুলনামূলক ভালো। পর্দা, সাউন্ড মোটামুটি ধরনের হলেও আসন ভাঙাচোরা।

jagonews24

কাপাসিয়া

মনোরম ও রুনা সিনেমা হলের মধ্যে মনোরম কাপাসিয়া বাজারে অবস্থিত। রুনা চালাবাজারে। দুটিই রুগ্নদশায় ভুগছে। দর্শক উপস্থিতির অভাবে মনোরমে মাত্র দুটি শো চলে, সকাল ও রাতের শো হয় না। মূলত অশ্লীল সিনেমা প্রদর্শনের কারণেই সাধারণ জনগণ এ হল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এছাড় বাজে ছবি প্রদর্শনের কারণে বেশ কয়েকবার হলে ভাঙচুর করেছে স্থানীয়রা। তাই অনেকে শঙ্কিত হয়ে হলমুখী হচ্ছে না।

কালিগঞ্জ

এ উপজেলায় কোনো সিনেমা হল এখন নেই।

এফএ/এএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।