লকডাউনে ‘ম্যাঙ্গো স্পেশালে’ অর্ধেকে নেমেছে বুকিং

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি রাজশাহী
প্রকাশিত: ০৬:৫৯ পিএম, ১৯ জুন ২০২১

রাজশাহীসহ উত্তরের জেলাগুলো থেকে ঢাকায় আমসহ অন্যান্য ফলমূল শাকসবজি পাঠানোর উদ্দেশ্যে গেল বছর থেকে সরকারি উদ্যোগে চালু হয়েছে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন। তবে ভরা মৌসুমেও টানা বৃষ্টিপাত, বিধিনিষেধ, লকডাউন, যানবাহনের দুষ্প্রাপ্যতা ও করোনা সংক্রমণের শঙ্কাসহ নানাবিধ কারণে এক সপ্তাহ ধরে রাজশাহীতে অর্ধেকে নেমেছে ম্যাঙ্গো স্পেশালে আমের বুকিং।

রাজশাহী স্টেশনের পার্সেল অফিসের তথ্য মতে, লকডাউন ঘোষণা অর্থাৎ ১১ জুনের আগে প্রায় প্রতিদিনই ম্যাঙ্গো স্পেশালে ১৫০ থেকে ২৩০ মণ আম রফতানি হতো। কিন্তু বর্তমানে তা কমে ৭০ থেকে ৮০ মণে নেমে এসেছে, যা পূর্বের বুকিং থেকে প্রায় অর্ধেক।

২৭ মে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন চালু হওয়ার পর থেকে গত ১৮ জুন পর্যন্ত মোট ১০ হাজার ৭২ টি ক্যারেট/ঝুড়ি বা প্যাকেট আম রাজশাহী থেকে ঢাকায় বুকিং হয়েছে। গত ২৩ দিনে মোট ৩ হাজার ৬৯৪ মণ (১ লাখ ৪৭ হাজার ৩৭৬ কেজি) আম রাজশাহী থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এতে রেলওয়ের আয় হয়েছে ১ লাখ ৮৪ হাজার ২৬৮ টাকা।

jagonews24

শুক্রবার ১৮ জুন মোট ২৬০টি ক্যারেট বা প্যাকেট আম বুকিং হয়েছে, যার পরিমাণ ছিল ৮৮ মণ (৩ হাজার ৫২১ কেজি)। শনিবার (১৯ জুন) আনুমানিক ৮০ মণ আম বুকিং হয়েছে।

বুকিং অফিসে কর্মরত দৈনিক মজুরি ভিত্তিক শ্রমিক মো. মিলন জানান, আগে যেখানে ৬০০ থেকে ৮০০ ক্যারেট বুকিং হতো এখন লকডাউনে তা নেমে ৩০০ ক্যারেটের এসেছে। কারণ হিসেবে তিনি চলতি লকডাউন, যানবাহনের দুষ্প্রাপ্যতা ও আষাঢ় মাসের টানা বৃষ্টিপাতকে অভিহিত করেন।

পুঠিয়া উপজেলার বাসিন্দা সিহাব। স্টেশনে এসেছেন ঢাকায় চাচার কাছে ৪ মণ ল্যাংড়া আম পাঠানোর জন্য। তিনি বলেন, ‘ম্যাঙ্গো স্পেশালে খরচ কম। অপরদিকে কুরিয়ারে আম পাঠালে অনেক ভোগান্তি। এছাড়া ম্যাঙ্গো স্পেশালে পাঠালে আম ভালো থাকে ও দ্রুত পৌঁছায়। তাই ম্যাঙ্গো স্পেশালে আম পাঠাতে এসেছেন বুকিং অফিসে।

jagonews24

নগরীর উপশহরে বাসা নীলুফার ইয়াসমিন নামের এক গৃহিনী। নিজের গাছের ল্যাংড়া, ফজলি, খিরসাপাত ও কিছু গুটি আম নিয়ে স্টেশনের পার্সেল অফিসে এসেছেন ঢাকায় থাকা ভাইয়ের বাড়িতে আম পাঠানোর জন্য।

তিনি জানান, বিগত বছরগুলোতে কুরিয়ারে আম পাঠিয়ে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে, তাই তিক্ত অভিজ্ঞতাও রয়েছে বেশ। তাই ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনে এসেছি আম পাঠানোর জন্য। এই বৃষ্টি, লকডাউন ও রাস্তাঘাটে চলাচলে কড়াকড়ি না হলে খুব একটা সমস্যা হতো না। এরপরও কুরিয়ারের চেয়ে ম্যাঙ্গো স্পেশালে সুবিধা বেশি, তাই এখানে আসা।

নগরীর কাজলায় বাড়ি মো. আদিল আলীর। কাজলা গেটে রয়েছে তার আমের আড়ত। আমের ব্যবসা করছেন প্রায় ১০ বছর ধরে। ঢাকা থেকে অনেক ব্যাপারীই তার কাছ থেকে আম কেনেন। তাই আম পাঠাতে এসেছেন কুরিয়ারে।

তিনি বলেন, ‘কুরিয়ারে সুবিধা হলো বিভিন্ন জায়গায় কুরিয়ার থাকায় তা সেই গন্তব্যে পৌঁছায়। কিন্তু সার্ভিস অত্যন্ত খারাপ হওয়ায় কুরিয়ারে মাল পাঠানো বন্ধ করেছি। ম্যাঙ্গো স্পেশালে আজ আম পাঠালে কালই গ্রাহক পেয়ে যায়। আমগুলোও ভালো থাকে। তাই ম্যাঙ্গো স্পেশালেই আম পাঠাই আমি। তবে লকডাউন ও যানবাহন না থাকায় ম্যাঙ্গো স্পেশালে আম নিয়ে আসাও কঠিন হয়ে গেছে। বিশেষ করে উপজেলার মানুষ ম্যাঙ্গো ট্রেনের সুবিধা নিতে পারছে না। তাদের ক্ষেত্রে খরচটা বেশি পড়ে যায়।’

jagonews24

ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনে আম পাঠানোর সুবিধা অসুবিধা নিয়ে কথা হয় পার্সেল অফিসের পার্সেল সহকারী মো. রউফের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘লকডাউন, কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাত ও সরকার ঘোষিত চলাচলে নিষেধাজ্ঞার কারণে এক সপ্তাহ ধরে ম্যাঙ্গো স্পেশালে আমের বুকিং অর্ধেকে নেমেছে। রাস্তায় যানবাহন না থাকায় অনেকেই স্টেশনে আম নিয়ে আসতে পারছেন না। আবার এক সপ্তাহ যাবত সকাল-বিকেল বৃষ্টিতে লোকজন বাইরে বের হচ্ছে না। এতে অনেকেই ম্যাঙ্গো স্পেশালে আম পাঠাতে পারছেন না।’

তিনি আরও বলেন, ‘মূলত ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনে ব্যবসায়ীদের চেয়ে সাধারণ মানুষে ও অনলাইন ব্যবসায়ীরাই আমের বুকিং দেন। এছাড়া আশপাশের কয়েকজন আম ব্যবসায়ী এই ট্রেনের সুবিধা পাওয়ার জন্য প্রতিদিন আম বুকিং দিতে আসেন। তবে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনের প্রচারণা বাড়লে আরও বুকিং বাড়বে।’

ফয়সাল আহমেদ/এসজে/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।