করোনা সংক্রমণ : বন্ধ সেই সেতু দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে যাচ্ছে মানুষ
করোনা রোধে ফরিদপুরের সবচেয়ে ব্যস্ততম হিসেবে পরিচিত আলিমুজ্জামান বেইলি ব্রিজের দুপাশে লোহার অ্যাঙ্গেল বার দিয়ে ওয়েল্ডিং করে প্রবেশ বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপরও ঝুঁকি নিয়ে বেপরোয়াভাবে ব্রিজ পারাপার হচ্ছে মানুষ।
মঙ্গলবার (২৯ জুন) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সব বয়সের লোকজন ঝুঁকি নিয়ে ব্রিজ পারাপার হচ্ছে। বন্ধ করা লোহার অ্যাঙ্গেলকে মই হিসেবে ব্যবহার করে ডিঙিয়ে কিংবা সেতুর কার্নিশ দিয়ে চলাচল করছেন তারা।
কুমার নদের ওপর মুজিব সড়কে ব্রিজটির একপ্রান্তে ফরিদপুরের অন্যতম বাণিজ্যিক কেন্দ্র হাজি শরিয়তুল্লাহ বাজার এবং অপর প্রান্তে নিউ মার্কেট ও তিতুমীর বাজার এলাকা। শুধুমাত্র পায়ে হেঁটেই ব্রিজটিতে চলাচল করা যেত। শহরের মানুষ নিত্য প্রয়োজনে এই পথে চলাচল করতেন। জেলা সদরে করোনা সংক্রমণের ক্রমবর্ধিষ্ণু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ২১ জুন ব্রিজের দুপাশে প্রথমে বাঁশ দিয়ে বন্ধ করলেও মানুষ অবাধে পারাপার হচ্ছিলেন। এরপর ২৬ জুন ওয়েল্ডিং করে ব্রিজ দিয়ে চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়।
শহরের পশ্চিম খাবাসপুর এলাকার বাসিন্দা আনোয়ারুল হক (৫৯) বলেন, ‘যতই করোনা বাড়ুক, কোনোমতেই এভাবে সেতুটি আটকানো ঠিক হয়নি। একজন যেতে পারেন এমন পথ রাখা উচিত ছিল।’
শহরের লক্ষ্মীপুর মহল্লার বাসিন্দা রাজিয়া সুলতানা (৩৮) বলেন, ‘সেতুটি আটকানো ঠিক আছে, তবে আসা–যাওয়ার মতো একটু ব্যবস্থা থাকলে ভালো হতো।’
শহরের লক্ষ্মীপুরের সাবজান নাহার (৪০) বলেন, ‘জানতাম না সেতুটি এভাবে বন্ধ করা হয়েছে। কাছে এসে দেখি বন্ধ। বিপদে পইড়া গেছি।’
হোসনে আরা বেগম (৩৪) নামক এক নারী ঝুঁকি নিয়ে পার হওয়ার পর বলেন, ‘ওষুধ কিনতে সুপারমার্কেটে যাব। এ পথ দিয়ে এসে দেখি বন্ধ। কি আর করব। ঘুরে গেলে এক দেড় কিলোমিটার ঘুরতে হয়। আবার রিকশা-ভ্যানে যেতে ভাড়া লাগে। এ জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়া সেতুর কার্নিশ দিয়া বাদুড়ঝোলার মতো করে পার হয়েছি। এভাবে মানুষকে হয়রানি করার কোনো মানে হয় না। আগে জানলে এ বিপদে পড়তে আসতাম না।’
ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোস বলেন, ‘সেতুটি পৌরসভা বন্ধ করেনি। এটি বন্ধ করার জন্য জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের অনুরোধে সম্মতি দিয়েছে পৌরসভা।’
এ বিষয়ে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান বলেন, ‘সাময়িকভাবে সেতুটি বন্ধ করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি একটু উন্নত হলেই খুলে দেয়া হবে। এ কারণে পথচারী ও সেতুর মেরামতকাজে নিয়োজিত ঠিকাদারদের একটু ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। এরপরও এটি মেনে নিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাঁশের ব্যারিকেড দিয়েও যখন জনস্রোত রোধ করা যাচ্ছিল না, তখন বাধ্য হয়ে এ সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। এরপরও মানুষ লোহার অ্যাঙ্গেলকে মইয়ের মতো বেঁয়ে বেঁয়ে পারাপার হচ্ছে।’
এ প্রসঙ্গে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, ‘করোনা সংক্রমণের ক্রমবর্ধিষ্ণু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। লকডাউন বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, র্যাবসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো একযোগে মাঠে কাজ করছে। সবাইকে আরও সচেতন হতে হবে। ফরিদপুরে করোনা বিস্তার রোধে ফরিদপুরসহ চারটি পৌরসভায় লকডাউন চলছে। বিধিনিষেধ পালনের ওপর নির্ভর করছে এই পরিস্থিতির কতটা উন্নতি বা অবনতি হবে।’
এন কে বি নয়ন/এসজে/এএসএম