করোনাকালে ভালো নেই রাজবাড়ীর মুচি সম্প্রদায়
করোনা মহামারিতে আয় কমে গেছে মানুষের। এদের মধ্যে সবচেয়ে বিপদে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষরা। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে গত ১ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে দেশব্যাপী কঠোর বিধিনিষেধ। এ বিধিনিষেধ যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে রাজবাড়ীর মুচি সম্প্রদায়ের জন্য।
'এখন দিনে ৪০-৬০ টাকা কামাই হয়। এ দিয়ে সংসার চলে না। সংসারে রয়েছে পাঁচ সদস্য। এরমধ্যে কিছুদিন হলো এক ছেলে মারা গেছেন। যার শ্রাদ্ধ করা হবে শুক্রবারে (২ জুলাই)। বিধিনিষেধে লোকজন বের হন না তেমন। এতে কামাইও হয় না। এখন কি করে ছেলের শ্রাদ্ধ করবো?- সে চিন্তায় রয়েছি।’
এমন করেই অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন রাজবাড়ীতে তিন যুগের বেশি সময় ধরে জুতা সেলাইয়ের (মুচি) কাজ করা বাহাদুর রবি দাস (৭১)। তিনি রাজবাড়ী শহরের পৌর ইংলিশ সুপার মার্কেটের নিচে মুচির কাজ করেন।
জানা যায়, রাজবাড়ী শহরে প্রায় ৪০ জন মুচি রয়েছেন। এদের বেশিরভাগই কাজ না থাকায় অলস সময় পার করছেন। আবার কেউ বাক্স গুছিয়ে চলে গেছেন বাড়ি।
বাহাদুর রবি দাস বলেন, তিনি রাজবাড়ী সরকারি কলেজ থেকে আইসি পাস করেন। কিন্তু ছোট জাত হওয়াতে অনেক চেষ্টা করেও কোনো চাকরি পাননি। ফলে বাধ্য হয়েই মুচির কাজ শুরু করেন। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে তিনি প্রতিদিন ফুটপাতে জুতা সেলাইয়ের কাজ করেন। ৪০ বছর ধরে তিনি এ কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। আগে দিনে ২০০-৩০০ টাকা আয় করতেন। কিন্তু করোনা আসার পর থেকে তেমন আয় হয় না। দিনে ৬০-৭০ টাকা আয় হয়। এতে সংসার চলে না।
তিনি আরও বলেন, ‘গতবছর করোনার শুরুতে কিছু সহযোগিতা পেলেও এবছর কোনো সহযোগিতা পাইনি। তাই বাধ্য হয়ে করোনার মধ্যে ফুটপাতে কাজের জন্য বসে আছি। তবে বিধিনিষেধ থাকায় নেই কোনো ক্রেতা।’
অন্যান্য মুচিরা জানান, শহরের প্রায় ৪০-৫০ জন এ পেশার সঙ্গে জড়িত। এ কাজ করেই চলে তাদের সংসার। কিন্তু বর্তমানে তারা খুব কষ্টে দিন পার করছেন। করোনা শুরুর পর থেকেই তাদের কাজ কমে গেছে। আর বিধিনিষেধ যেন কাজের সুযোগ আরও কমিয়ে দিয়েছে। এখন দিনে ৫০ টাকাও আয় হয় না। এতে সংসারের খরচ, ছেলে-মেয়ের পেছনে খরচ, কিস্তিসহ নানা খরচ মেটানো সম্ভব হয় না। ফলে সংসার চালাতে ধার-দেনা করতে হচ্ছে তাদের।
তারা আরও জানান, করোনার শুরুর দিকে তারা কিছু সহযোগিতা পেয়েছেন। তারপর তারা আর কিছু পাননি। এমতাঅবস্থায় তারা অসহায় হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করছেন।
রুবেলুর রহমান/এসএমএম/জেআইএম