দিনে বরাদ্দ ৩০০ হলেও করোনা রোগীদের খাবার দেয়া হচ্ছে ৭০ টাকার!
![দিনে বরাদ্দ ৩০০ হলেও করোনা রোগীদের খাবার দেয়া হচ্ছে ৭০ টাকার!](https://cdn.jagonews24.com/media/imgAllNew/BG/2019November/food-1-20210705170345.jpg)
একজন করোনা রোগীর প্রতিদিনের খাবারের জন্য ৩০০ টাকা সরকারি বরাদ্দ থাকলেও ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে একজন রোগীকে তিনবেলা যে খাবার দেয়া হচ্ছে তার বাজারমূল্য ৭০-৮০ টাকার বেশি নয়। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ফলমূল দেয়ার কথা থাকলেও তা পাচ্ছেন না রোগীরা। ফলে বেশিরভাগ রোগীকেই বাড়ির খাবারের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। খাবার সরবরাহে করোনা ইউনিটে দর্শনার্থীর আনাগোনায় সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি বাড়ছে।
জাগো নিউজের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৭৪ জন করোনা রোগী। তাদের সকালের নাশতায় দেয়া হচ্ছে একটি করে পাঁচ টাকা দামের পাউরুটি, আট টাকা দামের ডিম ও চার-পাঁচ টাকা দামের কলা। দুপুরের খাবারে দেয়া হচ্ছে ডাল, একটি ডিম অথবা এক টুকরো মাছ এবং রাতের খাবারেও ভাতের সঙ্গে এক টুকরো মাছ অথবা একটি ডিম। বর্তমান বাজারদরে তিন বেলার খাবারের দাম হিসাব করলে দাঁড়ায় ৭০-৮০ টাকা। রোগীদের খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ফলমূল দেয়ার কথা থাকলেও সেগুলো দেয়া হচ্ছে না।
হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসা নেয়া আবু তালেব বলেন, ‘১০ দিন হাসপাতালে থেকে একদিনও একটি মাল্টা পাওয়া যায়নি। হাসপাতালের দেয়া খাবার আমি খেতে পারিনি।’
তিনি বলেন, ‘সকালের নাশতা একটা কলা দিয়েছিল সেটিও খাবার উপযোগী ছিল না। তরকারি দেখলে খাবার ইচ্ছা নষ্ট হয়ে যেত। সরকারি বরাদ্দের টাকায় নিয়ম অনুযায়ী করোনা রোগীকে নিয়মিত ফলমূল ও দুধ, হরলিক্স দেয়ার কথা কিন্তু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীরা তা পাচ্ছেন না।’
ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে করোনা আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসাধীন সবুর উদ্দিন নামের এক রোগী জানান, তিনি করোনা শনাক্ত হওয়ার পর কয়েক দিন ধরে হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসাধীন। একদিনের জন্যও হাসপাতালের দেয়া খাবার খেতে পারেননি। ভাত ঠিকমতো সিদ্ধ হয় না। সকালে নাশতা হিসেবে দেয়া পাউরুটিও খাবার মতো নয়। তিনি কোনো দিন ফলমূল পাননি। বাধ্য হয়েই বাড়ি থেকে খাবার এনে খেতে হচ্ছে।
হাসপাতালে চিকিসাধীন এক করোনা রোগীর স্বজন পারভীন আখতার বলেন, ‘করোনা রোগীদের দেয়া খাবার খুবই নিম্নমানের। রোগী হাসপাতালের দেয়া খাবার খেতে পারে না বলে বাড়ি থেকে খাবার পাঠাতে হয়।’
হাসপাতালের খাদ্য সরবরাহকারী ঠিকাদার নিপুন মোহন্ত দাবি করেন, চুক্তি অনুযায়ী সব ধরনের খাবার, ফলমূল ও খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ করা হচ্ছে। করোনা রোগীকে তালিকা অনুযায়ী খাদ্য বিতরণ করার দায়িত্ব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
এ বিষয়ে কথা হয় ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. রাকিবুল ইসলাম চয়নের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘তালিকা অনুযায়ী চিকিৎসাধীন করোনা রোগীদের সব ধরনের খাবার পাওয়ার কথা। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. নাদিরুল ইসলাম চপল বলেন, ‘ঠিকাদার যেভাবে খাদ্য সরবরাহ করছেন সেভাবেই করোনা রোগীকে খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। অনেক সময় ঠিকাদারের খাদ্য সরবরাহে সমস্যা হলে খাবারের মান খারাপ হতে পারে। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান।
তানভীর হাসান তানু/এসআর/এমএস