পটুয়াখালীতে কমেছে সরিষা-তিলের আবাদ, বেড়েছে সূর্যমুখী-চিনাবাদাম

আব্দুস সালাম আরিফ আব্দুস সালাম আরিফ , জেলা প্রতিনিধি, পটুয়াখালী
প্রকাশিত: ১২:২৪ পিএম, ১৭ মে ২০২২

পটুয়াখালীতে গত এক দশকে আশঙ্কাজনকহারে কমেছে সরিষা ও তিলের আবাদ। তবে সম্প্রতি সরকারি সহযোগিতায় জেলায় সূর্যমুখী ও চিনাবাদামের চাষাবাদ বাড়তে শুরু করেছে। এদিকে, দেশের দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চলে আবারও কীভাবে তেলজাতীয় ফসলের চাষ বাড়ানো যায় সে বিষয়ে কাজ করার কথা জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।

একসময় কৃষকরা নিজেদের প্রয়োজনীয় ভোজ্যতেল নিজেরাই উৎপাদন করতেন। আর এজন্য চাষ হতো সরিষা, তিল, বাদাম, সূর্যমুখী। এছাড়া সড়কের পাশে কিংবা জমির আইলে লাগানো ভেরেন্ডা (ভেড়ন) থেকেও কৃষক পরিবারগুলো তেল সংগ্রহ করতো। তবে গত কয়েক দশকে বাজারে সয়াবিন এবং পামওয়েল সহজলভ্য হওয়ায় এসব ফসলের চাষাবাদ আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে। ফলে শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষকেও এখন আমদানি করা ভোজ্যতেলের ওপর নির্ভর করতে হয়।

jagonews24

পটুয়াখালী সদর উপজেলার বহালগাছিয়া এলাকার কৃষক হজরত আলী বলেন, আগে আমরা সব গৃহস্থরা সরিষা চাষ করতাম। এছাড়া তিল থেকেও তেল করাতাম। কিন্তু এখন আর কেউ চাষ করে না। বাজার থেকে সবাই সয়াবিন তেল কিনে খায়। তবে সরকার সহযোগিতা করলে আবার সরিষা, তিল, সূর্যমুখী চাষ করবো। এখন তেলের যে দাম, তাতে আর কিনে খাওয়ার উপায় নেই।

একই এলাকার কৃষাণী আম্বিয়া বেগম বলেন, ‘একসময় তো আমরা ভেড়ন বাইট্টা তরকারি রানতাম। হেতে আর কোনো তেল দেওয়া লাগদে না। হের পর হাইচা শাক, লালশাকসহ বিভিন্ন তরিতরকারি রানতাম ভেড়ন তেল দিয়া। এহন তো আর কেউ ভেড়ন লাগায় না, আর তেলও বাইর করে না।’

jagonews24

জানা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পটুয়াখালী জেলায় দিনদিন কমছে সরিষা এবং তিলের চাষাবাদ। দেরিতে আমন ধান কাটা, সেচের সুবিধা না থাকা, উচ্চ ফলনশীল বীজের সংকটসহ সার ও কীটনাশকের উচ্চমূল্যের কারণে এসব ফসল চাষাবাদে আগ্রহ কমেছে কৃষকদের।

পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এ কে এম মহিউদ্দিন জানান, পটুয়াখালী জেলায় গতবছর ৩৪৭ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হলেও এবছর আবাদ হয়েছে ২২৪ হেক্টর জমিতে। আর গতবছর ৩৭২ হেক্টর জমিতে তিল আবাদ হলেও এবার আবাদ হয়েছে ১০৯ হেক্টর জমিতে। তবে সরকারি সহযোগিতা থাকায় সূর্যমুখী এবং চিনাবাদামের আবাদ বাড়ছে। গতবছর পটুয়াখালী জেলায় ৪০০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ হলেও এবার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী আবাদ হয়েছে। আর গতবছর ৪ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে চিনাবাদাম চাষ হলেও এবার হয়েছে ৫ হাজার ৭৮৩ হেক্টর জমিতে।

jagonews24

সম্প্রতি পটুয়াখালীসহ দেশের দক্ষিণবঙ্গ সফরে এসে এই এলাকার মাটি উপযোগী তেলজাতীয় ফসলের চাষাবাদ বাড়ানোর কথা জানান কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। এজন্য চরের উর্বর বালি মাটিতে চিনাবাদাম চাষের প্রতি গুরুত্ব দেন তিনি।

এমআরআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।