‘সেদিন পদ্মা সেতু থাকলে আজ আমার মা বেঁচে থাকতো’

সেদিন যদি পদ্মা সেতু থাকতো তাহলে আমার মা বেঁচে যেতো। আজ মা নেই কিন্তু পদ্মা সেতু হয়েছে। মা হারানোর শোক নিয়েই স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের জনসভায় এসেছি।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন সাতক্ষীরা থেকে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখতে আসা দেব কুমার মণ্ডল। তবে তিনি ছবি তুলতে রাজি হননি।
দেব কুমারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েক বছর আগের ঘটনা। ঘটনার দিন তার মা খুব অসুস্থ ছিলেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। ফেরিঘাটে মাকে নিয়ে ফেরির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু ফেরি পেতে অনেক দেরি হয়ে যায়। ততক্ষণে তার মা মারা যান।
শনিবার (২৫ জুন) দেশের বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুর উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখতে লঞ্চ, ইঞ্জিনচালিত ট্রলার, বাস, মাইক্রোবাস, পিকআপ, ট্রাক ও মোটরসাইকেলে করে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন লাখ লাখ মানুষ। ভাঙ্গা-মাদারীপুরের মহাসড়কের শিবচর মুন্সিবাজার এলাকায় দীর্ঘ ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়।
যশোর থেকে আসা রেজাউল করিম, ফরিদপুর থেকে আসা মো. সাইদুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের অঞ্চলে বিভিন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদন হয়। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না হওয়ার কারণে এতদিন ন্যায্যমূল্য পেতাম না। এখন পদ্মা সেতু হয়েছে। আমরা এখন কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য পাবো। পদ্মা নদীতে সেতু নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান তারা।
২০০১ সালের ৪ জুলাই স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের নভেম্বরে নির্মাণকাজ শুরু হয়। দুই স্তরবিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাসের এ সেতুর ওপরের স্তরে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরে একটি একক রেলপথ রয়েছে।
পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় ৪২টি পিলার ও ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যানের মাধ্যমে মূল অবকাঠামো তৈরি করা হয়। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬.১৫০ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৮.১০ মিটার।
পদ্মা সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। এসব খরচের মধ্যে রয়েছে সেতুর অবকাঠামো তৈরি, নদী শাসন, সংযোগ সড়ক, ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিবেশ, বেতন-ভাতা ইত্যাদি।
বাংলাদেশের অর্থ বিভাগের সঙ্গে সেতু বিভাগের চুক্তি অনুযায়ী, সেতু নির্মাণে ২৯ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা ঋণ দেয় সরকার। ১ শতাংশ সুদ হারে ৩৫ বছরের মধ্যে সেটি পরিশোধ করবে সেতু কর্তৃপক্ষ।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার স্বপ্নের কাঠামো নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড।
এসআর/এমএস