ভিক্ষুকের পাশে দাঁড়ালেন ইউএনও

বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়েছেন। এমনকী শরীরের চামড়াও ঝুঁলে গেছে। দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ। কমে গেছে স্মরণশক্তি। লাঠির ওপর ভর করে কোনোরকম চলাচল করতে পারেন।
গত দুদিন ধরে তিনি সাপাহার জিরো পয়েন্ট ইসলামি ব্যাংক এটিএম বুথের পাশে অসহায় অবস্থায় অবস্থান করছিলেন। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ছবি প্রকাশ হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্ল্যাহ আল মামুনের দৃষ্টিগোচর হয়। ওই বৃদ্ধাকে নিজ কার্যালয়ে আনার ব্যবস্থা করে ১০ কেজি চাল দেন। পরে ভ্যান ভাড়া দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। তার বিভিন্ন প্রয়োজনে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন ইউএনও।
ওই বৃদ্ধার নাম ফিরোজা বেগম ওরফে ফুলমন। তিনি নওগাঁর সীমান্তবর্তী সাপাহার উপজেলার গোয়ালা ইউনিয়নের কামাসপুর মোন্নাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। জীবিকার তাগিদে তিনি ভিক্ষা করেন।
ফিরোজা বেগমের দুই সন্তান রয়েছে। বাড়িতে থাকেন বড় ছেলে আজিজুল হক। তারও দুই সন্তান রয়েছে। ছোট ছেলে তৃতীয় লিঙ্গের। তিনি ঢাকায় থাকেন। পরিবারের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ রাখেন না।
সাপাহার ইউএনও আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগেও একবার ওই বৃদ্ধা আমার কাছে এসেছিলেন। তাকে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেওয়ার জন্য আশ্বস্ত করেছিলাম। এজন্য তার মোবাইল নম্বর বা সন্তানদের মোবাইল নম্বরও চেয়েছিলাম। তিনি মোবাইল নম্বর দিতে পারেননি। পরে পরিবারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় বৃদ্ধার দুই সন্তান আছে। তাদের ফোন কিনে দেওয়ার মতো সার্মথ্য না থাকায় ব্যক্তিগত তহবিল থেকে একটি ফোন ও সিমকার্ড কিনে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেওয়া হয়। দুঃখজনক হলো বয়স্ক ওই নারীর ফোনে ভাতার টাকা আসার পর বিকাশের দোকানে টাকা উত্তোলন করতে গেলে প্রতারক সব টাকা উত্তোলন করে নেন। এমনকী তার সিমটিও নিয়ে নিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমি সিমটি তুলে তাকে তার বয়স্ক ভাতার টাকা তিনমাস পরপর উত্তোলনের ব্যবস্থা করেছি। যাতে পরবর্তী সময়ে তার টাকা কেউ আত্মসাৎ করতে না পারেন।’
ওই নারীর জন্য সমাজসেবা কার্যালয় থেকে টিন নিয়ে একটি বাড়ি করে দেওয়া হবে বলেও জানান ইউএনও। এছাড়া তিনি যদি আশ্রয়ণের ঘরে থাকতে চান তাহলে সে ব্যবস্থাও করে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
উপজেলার গোয়ালা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার আবুল হোসেন বলেন, বৃদ্ধা ফিরোজা বেগমের স্বামী অনেক আগেই মারা গেছেন। তারা অতিদরিদ্র। সামান্য জায়গায় টিনের ঝুপড়ি দিয়ে ছেলের সঙ্গে বসবাস করেন। সংসার চালাতে ছেলেও বিভিন্ন কাজ করেন। আর বৃদ্ধা ভিক্ষা করেন। আমরা বিভিন্ন সময় তাকে ব্যক্তিগতভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করি।
আব্বাস আলী/এসআর/জিকেএস