বগুড়ার বক চরে মাছের মেলা


প্রকাশিত: ১০:৪৩ এএম, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মৎস্য ব্যবসায়ীরা চারপাশের ডালায় মাছ সাজিয়ে বসে আছেন। মাছ কিনতে আসা হাজারো মানুষের ভিড় নেমেছে মেলায়। তবে সেখানে শুধু মাছ কিনতে সবাই আসেনি, অনেকে এসেছে মাছ দেখতেও। এটি বগুড়ার ধুনটের শত বছরের ঐতিহ্য বক চর মাছের মেলার দৃশ্য। কালেরপাড়া ইউনিয়নের বক চরে বসে দুই দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী এই মাছের মেলা। বুধবার ভোর থেকে শুরু হওয়া এ মেলা বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত চলবে।

স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ী শ্যামচরন হাওয়ালদার জানান পদ্মা, যমুনা, বাঙ্গালি, ইছামতি, মানাস নদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মৎস্য ব্যবসায়ীরা রুই, কাতলা, ব্রিগেট, সিলভার কার্প, বোয়াল, বাঘাইড়, চিতল, আইড় মাছসহ বিশাল আকৃতির মাছ নিয়ে এসেছেন এ মেলায়। এই মেলায় এক একটি মাছ এক হাজার টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম হাকছেন। এবারের মেলায় সবচেয়ে বড় মাছ হলো ২৫ কেজি ওজনের বাঘাইড়। যার দাম চাওয়া হয় ৩০ হাজার টাকা। আব্দুস সালাম নামের একজন বিক্রেতা এই মাছটি পরে ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেন।

bogra-fish

ধুনট উপজেলার কালেরপাড়া ইউনিয়নের একটি গ্রাম হেউটনগর কোদলাপাড়া। গ্রামের পশ্চিম পাশ দিয়ে রহমান বাঙ্গালি নদী। নদীর পূর্ব তীরে বসেছে ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা। স্থানীয় ভাবে এর নাম বক চর মেলা।

মেলার নামকরণ নিয়ে স্থানীয়রা জানান, মেলার স্থানটিকে ঘিরে এককালে বদ্ধ জলাশয় ছিল। মেলার চারপাশে বার মাস পানি থাকতো। মাঝখানে উচু স্থানে অসংখ্য বক বসে মাছ শিকার করতো। মূলত বকের চারণভূমি থেকে এই স্থানের নাম হয়েছে বক চর।  

কালেরপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহজাহান আলী জানান, বাঙ্গালি নদীর পূর্ব তীরে শত বছরেরও অধিক সময় ধরে এ মেলা চলে আসছে। কালের ধারাবাহিকতায় এমেলা এখনো প্রতি বছর মাঘ মাসের তৃতীয় সপ্তাহের বুধবার অনুষ্ঠিত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় এবারো বুধবার ভোর থেকে বক চর মেলার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। তবে মাছের এই মেলাটি এখন সার্বজনীন বার্ষিক উৎসবে রূপ নিয়েছে।

bogra-fish

মাছের মেলা নামে পরিচিত হলেও এখানে মাছ ছাড়াও শত শত দোকান বসে বক চর মেলা জুড়ে। ফার্নিচার, গৃহস্থলী, শিশুতোষ খেলনা সামগ্রীর দোকান নানা জাতের দেশিয় খাবারের দোকানসহ গ্রামীণ ঐতিহ্যের দোকানও স্থান পেয়েছে মেলায়। এছাড়া মৃৎশিল্পীদের সুনিপুণ হাতে তৈরি বিভিন্ন ধরনের খেলনা ও তৈজসপত্র ছাড়াও শিশুদের বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মেয়েদের প্রসাধনী ও চুড়ি-মালা, গৃহস্থলী বিভিন্ন আসবাবপত্রের পসরাও সাজিয়ে বসেন দোকানীরা।

গ্রামীণ ঐতিহ্যের চিনির তৈরি সাজ, কদমা, বাতাসা, নিমকি কালাই, খুরমা, ঝুরি, মিষ্টি এবং বিভিন্ন মুখরোচক খাবারের দোকানও বসে। শিশু-কিশোর ও তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষের উপচেপড়া ভিড়ে মেলা হয়ে উঠে জমজমাট ও প্রাণবন্ত।

মাছের মেলাকে ঘিরে আশপাশের এলাকার বিয়ে হয়ে যাওয়া মেয়েরা বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসার প্রচলনও রয়েছে। এ কারণে বৃহস্পতিবার মেলাটিকে বলা হয় বউ মেলা। ঐ দিন মূলত মেয়ে ক্রেতারাই বেশি থাকে। বাবার বাড়িতে বেড়াতে এসে জামাই-বড় মাছ কিনে শ্বশুর বাড়ির সবাইকে আপায়িত করার ঐতিহ্য বহু দিন থেকে চলে আসছে এখানে।

এআরএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।