কমেছে লবণ আমদানি, পেশায় ফিরছেন চাষিরা

সায়ীদ আলমগীর
সায়ীদ আলমগীর সায়ীদ আলমগীর কক্সবাজার
প্রকাশিত: ০৫:১০ পিএম, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২

চাহিদার শতভাগ দেশে উৎপাদিত একমাত্র পণ্য লবণ। কক্সবাজার জেলা ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা মিলিয়ে প্রায় ৫৫-৬০ হাজার একর জমিতে উৎপাদিত লবণ দেশের সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের চাহিদা পূরণ করে আসছে। বিগত এক যুগ ধরে লবণের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় অনেক চাষি পেশা বদল করেছেন। কিন্তু গত বছর থেকে বিসিক ও স্থানীয় কমিশন এজেন্টদের (লোকাল ভাষায় দালাল) তৎপরতায় লবণ আমদানি কমেছে। ফলে লবণ চাষে আগ্রহ ফিরেছে চাষিদের।

কক্সবাজারের ঈদগাঁওর উপকূলীয় গোমাতলীর লবণ চাষি আবদুর রশিদ বলেন, অক্টোবরের শেষে লবণের মৌসুম শুরু হবে। এরই মধ্যে মাঠের গর্তে মজুত লবণের দাম উঠেছে মণে চারশ থেকে ৪১০ টাকা। গত মৌসুমের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দাম পাওয়া গেছে ২০০-২৫০ টাকা। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে আগামী মৌসুমে লবণের দাম কমবে না। মণে ৪০০ টাকা পেলেও লাভ থাকবে চাষিদের। ফলে উৎপাদন খরচ না ওঠায় বছর পাঁচেক আগে যেসব চাষি ভিন্ন পেশায় জড়িয়েছিলেন তারাও এখন ফেরার উদ্যোগ নিচ্ছেন।

jagonews24

উপকূলীয় পোকখালীর প্রান্তিক চাষি হতে লবণ সংগ্রহ করে মিলে সরবরাহকারী কমিশন এজেন্ট রিদুয়ানুল হক বলেন, বাণিজ্য সিন্ডিকেট সরকারকে মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করে শুল্কমুক্ত বিদেশি লবণ এনে দেশীয় উৎপাদিত লবণ মূল্যহীন করে রেখেছিল। গত বছর থেকে শুল্ক বাড়ানোয় আমদানিকৃত লবণের দম কেজিতে ১২-১৫ টাকা পড়েছে। পাশাপাশি মাঠে থাকা লবণের কেজি বাড়িয়ে ১০ টাকা করা হয়েছে। এতে চাষিরা উপকৃত হচ্ছেন।

বিসিক কক্সবাজার লবণ শিল্পের উন্নয়ন কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া জানান, গত মৌসুমে কেজিতে তিন টাকা উৎপাদনে খরচ করে কৃষক পেয়েছে পাঁচ টাকা। এখন কেজিতে ১০ টাকা হয়েছে। এতে লবণ চাষে কৃষকের আগ্রহ অবশ্যই বাড়বে।

বাংলাদেশ লবণ চাষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বলেন, আগে মাঠ পর্যায়ে কেজিতে লবণের দাম পড়তো ৩-৫ টাকা। এখন তা ১০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। ফলে চাষিরা সুফল পাচ্ছেন।

jagonews24

এদিকে অভিযোগ ওঠেছে, আমদানিকারক পুরনো চক্রটি আবারো মাঠে নেমেছে। তাদের সঙ্গে কিছু লবণ মিল মালিক যোগ দিয়ে শক্ত জোট বেঁধেছে। বিদেশি লবণ আমদানির অনুমতি আদায়ে জোর তদবিরে নেমেছে তারা। এখন যদি ভুল বুঝিয়ে লবণ আমদানির অনুমতি নেয়া সম্ভব হয়, সেই লবণ আসতে সময় লাগবে অন্তত নভেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু সেই সময়ে দেশীয় লবণ উৎপাদন শুরু হবে। ওই সময়ে আমদানির লবণ এলে চাষিদের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার শংকা রয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) কক্সবাজার অফিসের পরিদর্শক (উন্নয়ন) মো. ইদ্রিস আলী জানান, গত ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ে এক লাখ ৩৩ হাজার ৬৭৮ মেট্রিক টন লবণ মজুত ছিল। মিল-কারখানায়ও রয়েছে প্রায় অর্ধ লাখ মেট্রিক টন। ইতিমধ্যে বিদেশ থেকে আমদানি হয়ে এসেছে দেড় লাখ মেট্রিক টন লবণ। সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টন লবণের মজুদ রয়েছে। আগামী অক্টোবরের শেষ সময়ে মাঠে নামবে চাষিরা। নভেম্বরে লবণ উৎপাদন হবে বলে আশা করা যায়। আগামী দুই মাসের চাহিদা অনুযায়ী লবণ মজুত রয়েছে। সুতরাং দেশে লবণের কোনো সংকট নেই। আমদানিরও প্রয়োজন পড়বে না।

এএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।