পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া

পিকনিক কর্নারের পরিত্যক্ত ডাইনিং রুম এখন দৃষ্টিনন্দন জাদুঘর

সফিকুল আলম
সফিকুল আলম সফিকুল আলম , জেলা প্রতিনিধি পঞ্চগড়
প্রকাশিত: ০৩:৪৭ পিএম, ০৯ নভেম্বর ২০২২

বাইরে থেকে একটি লাল-সবুজে ঘেরা টিনশেড ঘর। ঘরের ভেতর ঢুকলেও দেখা যাবে ইতিহাস-ঐতিহ্যে ভরপুর একটি শিক্ষালয়। ভেতরের দেওয়ালকে দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে তেঁতুলিয়ার ঐতিহ্যবাহী কাঞ্চন বাঁশের বিশেষ কারুকাজে। দেওয়ালের ওপর শোভা পাচ্ছে বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য আর মুক্তিযুদ্ধকালীন দুর্লভ ছবি।

সামনের দেওয়ালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি। এর চারপাশের ওপরের দেওয়ালে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান ও বাংলার কৃর্তিমান দামাল ছেলেদের দুর্লভ ছবিতে সাজানো।

jagonews24

সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় আসা পর্যটকদের বিনোদনের পাশাপাশি বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় ঘটে এই ঘরে ঢুকলে। বিশেষ করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা স্বাধিকার আন্দোলনের জ্ঞানে সমৃদ্ধ হন।

সম্প্রতি তেঁতুলিয়ার ঐতিহাসিক ডাকবাংলো এবং মহানন্দার তীরে তেঁতুলিয়া পিকনিক কর্নারের পরিত্যক্ত খাবারের ঘরটি ‘অপ্রতিরোধ্য বাংলা’ জাদুঘরে পরিণত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহাগ চন্দ্র সাহা।

jagonews24

ঘরের ভেতর কাঞ্চন বাঁশের বিশেষ ব্যবহার নজর কেড়েছে পর্যটকদের। মূলত নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিতেই জাদুঘরটি নির্মাণের পরিকল্পনা বলে জানান ইউএনও সোহাগ চন্দ্র সাহা।

চায়ের সবুজে আচ্ছাদিত উত্তরের সর্বশেষ সীমান্ত এলাকা তেঁতুলিয়ায় বছরজুড়েই দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা লেগে থাকে। প্রতি বছর শীতের শুরুতে উত্তর আকাশে ভেসে ওঠা কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে হাজার হাজার পর্যটক ছুটে আসেন তেঁতুলিয়ায়।

jagonews24

তেঁতুলিয়ার মহানন্দার পাড় থেকে অপরূপ কাঞ্চনজঙ্ঘা, সমতলে চা-বাগান, বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট, রওশনপুরের আনন্দধারা ঘুরে তৃপ্ত হন পর্যটকরা। অবস্থানগত কারণেই তারা বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের সীমান্তঘেঁষে বেয়ে চলা মহানন্দা নদীর তীরে আসেন। অন্য কিছুর পাশাপাশি তারা মহানন্দা তীরের অপ্রতিরোধ্য বাংলা জাদুঘর দেখেও মুগ্ধ হন। চোখ বুলিয়ে নেন মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ইতিহাস।

মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) তেঁতুলিয়ার অপ্রতিরোধ্য বাংলা জাদুঘর ঘুরে দেখা যায়, ১১টি গ্যালারিজুড়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের ধারাবাহিক এবং দুর্লভ সব ইতিহাস সাজানো রয়েছে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে ভারতভাগ, ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু এবং স্বাধীনতা-পরবর্তী ইতিহাস সম্বলিত লেখা ও স্থিরচিত্র ফুটে উঠেছে। পাশাপাশি রয়েছে সরকারের চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও মেগা প্রকল্পের প্রতিচ্ছবি।

jagonews24

‘অপ্রতিরোধ্য বাংলা জাদুঘর’ দেখতে আসা ঢাকার ডেমরা এলাকার সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পরিবার নিয়ে তেঁতুলিয়ায় এসেছি। আবহাওয়ার কারণে কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা পাইনি। তবে তেঁতুলিয়ার প্রাকৃতিক পরিবেশ, এখানকার মানুষের আতিথিয়েতা আমাদের মুগ্ধ করেছে। বেশ কিছুক্ষণ এই অপ্রতিরোধ্য বাংলা জাদুঘর ঘুরে দেখলাম। এটি অবশ্যই একটি ভালো লাগার মতো বিষয়।’

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ থেকে আসা নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সিহাব সুমন জাগো নিউজকে বলে, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক কথা শুনেছি। নিজের চোখে না দেখলেও এখানে এসে ছবিতে যা দেখছি, প্রাণবন্ত মনে হচ্ছে।’

জানতে চাইলে ইউএনও সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, টিনশেড ঘরের ডাইনিং রুমটি পড়েছিল। এটি সংস্কার করে ‘অপ্রতিরোধ্য বাংলা জাদুঘর’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। পরিবার নিয়ে আসা পর্যটকরা আনন্দের পাশাপাশি দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য আর মহান মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পারবেন। এতে তাদের সঠিক ইতিহাস জানার আগ্রহ আরও বাড়বে।

সফিকুল আলম/এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।