পিরোজপুরে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে শুঁটকি ব্যবসা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি পিরোজপুর
প্রকাশিত: ০৮:৪৪ এএম, ২০ ডিসেম্বর ২০২২
মৌসুমে ব্যস্ততা বেড়েছে শুঁটকিপল্লীতে

পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলায় দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে শুঁটকি ব্যবসা। জেলার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জায়গায় এখানকার শুঁটকির চাহিদা থাকায় বাড়ছে উৎপাদনও।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নদী ও বঙ্গোপসাগর খুব কাছাকাছি হওয়ায় উপজেলার পাড়েরহাটে একটি মৎস্য বন্দর গড়ে ওঠে। এর পাশেই গড়ে ওঠে শুঁটকিপল্লী। বন্দর থেকে সামুদ্রিক মাছ সংগ্রহ করে তৈরি হয় শুঁটকি। অগ্রহায়ণ থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত চলে শুঁটকির কারবার।

পিরোজপুরে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে শুঁটকি ব্যবসা

সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, পাড়েরহাট মৎস্য বন্দরের দক্ষিণে কচা নদীর তীরে আটটি বাসা নিয়ে শুঁটকি পল্লী গড়ে উঠেছে। এতে ১০-১২ জন শুঁটকি ব্যবসায়ী আছেন। কিছু শ্রমিক পাড়েরহাট বন্দর থেকে মাছ সংগ্রহের ধুয়ে নিচ্ছেন। কেউ বড় মাছ কাটছেন আবার কেউ লবণ মিশিয়ে বাঁশের তৈরি মাচার ওপরে বিছিয়ে মাছ শুকানোর কাজ করছেন। কেউবা শুকানো শুঁটকি বস্তায় ভরে বাসায় সংরক্ষণ করেছেন চালানের জন্য।

পিরোজপুরে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে শুঁটকি ব্যবসা

ব্যবসায়ীরা জানান, ২০০ বছর ধরে পিরোজপুরের পাড়েরহাটে চলে আসছে এ শুঁটকির ব্যবসা। সাধারণত ছুরি, কোরাল, হাইতা, মর্মা, চিতল, ঢেলা, মধু ফ্যাপসা, চাপিলা, লইট্টাসহ ৩০ থেকে ৩৫ প্রজাতির মাছ শুঁটকি করা হয় এখানে। শীত মৌসুমে এসব প্রজাতির মাছ বঙ্গোপসাগরে জেলেদের জালে ধরা পড়ে বেশি।

পিরোজপুরে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে শুঁটকি ব্যবসা

শীত থাকলেই শুঁটকির মান ভালো থাকে। বেশি গরম পড়লে শুঁটকির মান নষ্ট হয়ে যায়। যার কারণে গরমে কেউ শুঁটকি করেন না। মাছভেদে প্রতি কেজি শুঁটকি বিক্রি হয় ৬০০ থেকে ২ হাজার টাকা কেজিতে।

পিরোজপুরে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে শুঁটকি ব্যবসা

শুঁটকি ব্যবসায়ী মো. আনোয়ার হোসেন তালুকদার বলেন, মৌসুমের শুরুতে পাড়েরহাট মৎস্য বন্দরে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। জেলেরা মাছ ধরে সরাসরি বন্দরে নিয়ে আসে সেখান থেকে আমরা শুঁটকির জন্য মাছ সংগ্রহ করি। ৩৫ প্রজাতির মাছ শুঁটকি করা হয়।

মো. ইব্রাহিম মুন্সি নামের এক শ্রমিক বলেন, আমি এখানে চার বছর ধরে কাজ করছি। আমাদের শুঁটকিতে কোনো ধরনের কীটনাশক ব্যবহার হয় না। প্রাকৃতিকভাবে রোদে শুকিয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ভাবে শুঁটকি করা হয়। এজন্য এখানকার শুঁটকির চাহিদা অনেক বেশি।

পিরোজপুরে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে শুঁটকি ব্যবসা

মো. গোলাম মোস্তফা নামে এক শুঁটকি ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের এখানে মাছ শুকানোর জায়গা অনেক কম। নদীর তীরে শুঁটকিপল্লী হওয়ায় প্রতিবছরই নদী ভাঙনে আমাদের জায়গা কমে যাচ্ছে। ফলে পাশের ধানের জমিতে শুঁটকি করতে হচ্ছে। আমাদের জন্য সরকার একটা নির্দিষ্ট জায়গা করে দিলে এ পেশা ধরে রাখা সম্ভব। এছাড়া ব্যাংক থেকে স্বল্প সুদে পর্যাপ্ত ঋণের ব্যবস্থা করে দিলে এ পেশায় জড়িতরা টিকে থাকতে পারবে।

পিরোজপুরে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে শুঁটকি ব্যবসা

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবদুল বারী জাগো নিউজকে বলেন, মাছের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় জমে উঠছে এখানকার শুঁটকির ব্যবসা। তাই আমরা প্রথম পর্যায়ে মৎস্যজীবী ও শুঁটকি প্রক্রিয়ার কাজে জড়িত ২০ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। ভবিষ্যতে আরও বেশি জনবলকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। শুঁটকিপল্লী থেকে প্রতি বছর লক্ষাধিক কেজি স্বাস্থ্যসম্মত শুঁটকি উৎপাদন হয়। আমরা নিয়মিত এখানকার শুঁটকি পরিদর্শন করছি।

এসজে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।