গোপালগঞ্জে পুলিশের ভুলের খেসারত দিচ্ছেন দুই ভাই
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার চরবয়রা গ্রামে একটি মিথ্যা মামলার দায়ে দু’সহোদর তাদের নিজ নিজ চাকরি হারিয়ে এখন অসহায় ও মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ঘটনার সঠিক তদন্ত না করে মনগড়া ও অবাস্তব প্রতিবেদন দিয়ে একটি মিথ্যা ঘটনাকে মামলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি পুলিশের এ ধরনের অনৈতিক ও অপেশাদার কাজের খেসারত দিচ্ছেন ওইসব ভুক্তভোগী পরিবার।
মামলায় ক্ষতিগ্রস্তরা হলেন, ওই গ্রামের মগফার উদ্দিন মোল্লার ছেলে সাহিদ হোসেন মোল্লা, জাহিদ হোসেন মোল্লা ও জাকির হোসেন মোল্লা।
এর মধ্যে সাহিদ হোসেন মোল্লা পুলিশের এএসআই পদে ঢাকার পল্টন থানায় এবং জাহিদ হোসেন মোল্লা ধানমন্ডির এশিয়া প্যাসেফিক ইউনিভার্সিটিতে ল্যাব এটেনডেন্ট পদে কর্মরত ছিলেন।
জানা গেছে, গোপালগঞ্জ থানায় মিথ্যা মামলা দায়ের করে বাদী একই গ্রামের বশির আহমেদ ফকির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের কাছে মামলার কপিসহ চাকরি থেকে বরখাস্তের আবেদন রেন। ফলে তারা দুই ভাই চাকরি হারায়।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে গেলে ঘটনার নেপথ্যের কাহিনী বেরিয়ে আসে। অনুসন্ধানে জানা যায়, মামলার ঘটনাস্থল যেখানে দেখানো হয় সেখানে ২০-২৫ বছরের মধ্যে কোন মারামারির ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু বাদী মামলায় উল্লেখ করেন, ১১৩ নং চরবয়রা মৌজার ১৫০ দাগ, ১৫১ দাগ ও ১৫২ দাগের জমিতে বিগত ২০১১ সালের ২৫ ডিসেম্বর জোর করে আসামিরা ইরি ধান চাষ করতে যায়। এতে সেখানে বাদী পক্ষের লোকজন বাধা দিলে একটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে উল্লেখ করা হয়। পারিবারিক শত্রুতার জের ধরে এ মামলা সাজানো হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঘটনাস্থলে কোন ধানি জমি নেই। ওই দাগের উপর আসক আলী মুন্সির পাকা বসতবাড়ি। তিনি ২০-২৫ বছর ধরে সেখানে বসত করছেন। বিআরএস রেকর্ডও তাদের নামে। পিওর সঙ্গে মামলা ও ম্যাপের কোন মিল নেই।
গোপালগঞ্জ থানার অফিস রেকর্ডে দেখা যায়, বিগত ২০১১ সালের ২৫ ডিসেম্বর সকাল ৮টা থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গোপালগঞ্জ থানায় নিয়মিত ও অনিয়মিত কোনো মামলা দায়ের হয়নি। অথচ ওই তারিখে গোপালগঞ্জ থানায় স্মারক নং-৫০৩২ এ গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভিকটিম শহীদ আলী ফকির ও সবেদ আলী ফকিরের নামে মেডিকেল সার্টিফিকেটের জন্য রিকুইজেশন দাখিল করা হয়ছে। কিন্তু ওই রিকুইজেশন স্লিপে কোন সূত্রের উল্লেখ নেই। হাসপাতালের দেয়া মেডিকেল সার্টিফিকেটে ২ জন ডাক্তারের স্বাক্ষর ও সিল আছে। কিন্তু তারিখ ভিন্ন। মামলা দায়ের হওয়ার ৮ দিন আগে মেডিকেল সার্টিফিকেট (এমসি) চাওয়া হয়। এছাড়া মাত্র ১৬ দিনের মাথায় রহস্যজনক কারণে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।
অন্য মামলার দু’টি মেডিকেল সার্টিফিকেট এ মামলায় জুড়ে দেয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ঘটনার প্রায় ১৫ দিন পর মামলার বাদী বশির আহমেদ গোপালগঞ্জ থানায় মামলা ( নং জিআর-১৪/২০১২) দায়ের করেন। গোপালগঞ্জ থানার তৎকালীন এসআই আবু নাঈম ওই সার্টিফিকেট ব্যবহার করেন মামলায়। যা এজাহারের সঙ্গে মেডিকেল সার্টিফিকেটের কোন মিল নেই।
মামলায় উল্লেখিত স্থানে বসবাসকারী আসক আলী মুন্সি জানান, এখানে আমি প্রায় ২০-২৫ বছর ধরে বসবাস করছি। আশপাশে কোন ধানি জমি নেই। আমার বসবাসকালীন এখানে কোন সংঘর্ষ বা জোরপূর্বক ধান চাষ নিয়ে কোন মারমারির ঘটনা ঘটেনি।
মামলার ভুক্তভোগী এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিচ্যুত ল্যাব এটেনডেন্ট জাহিদ হোসেন মোল্লা অভিযোগ করে বলেন, বিগত ২০১১ সালের ২৫ ডিসেম্বর ঘটনার তারিখ দেখানো হলেও মামলা রুজ্জু করা হয় ২০১২ সালের ৮ জানুয়ারি। মামলার আইও আবু নাঈম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ওই বছরের ৯ জানুয়ারি সকালে। তাহলে তদন্ত কর্মকর্তা কিভাবে মামলা দায়ের হওয়ার ৯ দিন আগে মেডিকেল সার্টিফিকেট দু’টি পেলেন? পারিবারিক পূর্ব শত্রুতার জের ধরে তদন্ত কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে বাদী আমাদের বিরুদ্ধে এ হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। আমরা এখন সর্বস্বান্ত। আমরা তদন্ত কর্মকর্তা ও বাদীর শাস্তি দাবি করছি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও বর্তমান বৌলতলী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের আইসি উপ-পরিদর্শক আবু নাঈমের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বললে তিনি জানান, নিয়ম মেনেই মামলা দায়ের করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই আমরা সিআরপিসি মেনে চলতে পারি না। কৌশলগত কারণে মেডিকেল সার্টিফিকেট পাওয়ার পর মামলা রুজ্জু করা হয়েছে। এখানে কোন অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়নি।
হুমায়ূন কবীর/এসএস/এবিএস