মাদারীপুরে যত্রতত্র গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি, দুর্ঘটনার শঙ্কা

মাদারীপুরে শহর থেকে গ্রাম সব জায়গায় হাতের নাগালেই মিলছে বিভিন্ন কোম্পানির গ্যাস সিলিন্ডার। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই আনেকে পুরনো সিলিন্ডারে বেশি দামে গ্যাস বিক্রি করছেন। এমনকি দোকানদারের মোবাইলে কল দিলেই মিলছে গ্যাস সিলিন্ডার। যত্রতত্র এসব সিলিন্ডারের কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
সম্প্রতি মাদারীপুরের শিবচরের আল রিফাত নামের একটি রেস্টুরেন্টে গ্যাস সিলিন্ডার লিক হয়ে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। আতঙ্কে ক্রেতা ও শ্রমিকরা ছোটাছুটি করতে থাকেন। খবর পেয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস। প্রতিষ্ঠানের মালিক ফরহাদ ব্যাপারী নিজেও জানেন না, কোন কোম্পানির সিলিন্ডার ব্যবহার করছেন।
শুধু এ রেস্টুরেন্টেই নয়, জেলার বিভিন্ন হোটেল, রেস্তোরাঁ আর অধিকাংশ বাসা-বাড়িতে ব্যবহার করা হচ্ছে নামে-বেনামে বিভিন্ন কোম্পানির গ্যাস সিলিন্ডার। বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস, জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই এসব গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা।
জেলাজুড়ে অর্ধশত পাইকারি দোকানে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা দোকানের সংখ্যা আছে কয়েকশ। শহর কিংবা গ্রাম, সবখানেই অহরহ বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার। অনেকে পুরোনো সিলিন্ডারে গ্যাস বাজারজাত করছেন। অথচ একটি সিলিন্ডারের গায়ে লেখা নেই নির্ধারিত মূল্য, উৎপাদন কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ। ফলে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা। বাড়ছে ঝুঁকিও।
শিবচরের আল রিফাত রেস্টুরেন্টের মালিক ফরহাদ ব্যাপারী বলেন, ‘বাজারে যেটা পাই, সেই সিলিন্ডার কিনে ব্যবহার করি। সরকার থেকে এসব অবৈধ গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি বন্ধ করলে আমরা সঠিক গ্যাস সিলিন্ডারগুলো বাজারে পেতাম। সরকার থেকে কখনো এ বিষয়ে নির্দেশনাও পাইনি।’
মাদারীপুরের চরমুগরিয়া এলাকার গৃহীণি লিজা আক্তার বলেন, ‘কোনো একটি গ্যাস সিলিন্ডারের গায়ে সরকার নির্ধারিত কোনো মূল্য লেখা নেই। দোকানদার যখন যেভাবে পারে ক্রেতাদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন। প্রশাসন তৎপর হলে অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য কমবে।’
মাদারীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মো. সফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, এখনই অবৈধ গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি বন্ধ করা না গেলে দুর্ঘটনায় প্রাণ হানি ঘটতে পারে। নিয়ম অনুযায়ী নতুন সিলিন্ডারে গ্যাস বিক্রি ও ব্যবহার করা হলে মানুষ উপকৃত হবে। এক্ষেত্রে সবার আন্তরিকতা ও সহযোগিতা প্রয়োজন।’
এদিকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতেই রাজি নন গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসায়ী ও পাইকাররা। তবে, অনেক ব্যবসায়ীর দাবি, সারাদেশেই একইভাবে গ্যাস সিলিন্ডার বেচা-কেনা হচ্ছে। বড় ধরনের অভিযান চালালে এর নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন জাগো নিউজকে বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শিগগির যত্রতত্র গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকার অনুমতি ছাড়া কেউ গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করতে পারবে না। এ বিষয়ে প্রশাসনের তৎপরতা বাড়ানো হবে।
আয়শা সিদ্দিকা আকাশী/এসজে/জেআইএম