স্বামীকে কোপাচ্ছিলেন প্রেমিক, দাঁড়িয়ে দেখছিলেন স্ত্রী

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি বরিশাল
প্রকাশিত: ০৯:৫৯ পিএম, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

বরিশালে স্বামীকে হত্যার উদ্দেশ্যে চেতনাশক খাইয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেছেন স্ত্রী ও তার পরকীয়া প্রেমিকসহ বন্ধুরা। এ ঘটনার সাত দিনের মধ্যে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী স্ত্রী রাবেয়া আক্তার মুসকান, তার দুই প্রেমিক রায়হান খন্দকার ও আবু সাইদ সিয়াম এবং সিয়ামের বন্ধু জিহাদ হাসান রাজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২৫ জানুয়ারি সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে গৌরনদী মডেল থানার অধীন কালনা এলাকায় রাস্তার ওপর সৌরভ বেপারী নামের এক যুবককে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে তাকে উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এবং সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।

বিষয়টি জানতে পেরে গৌরনদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএম আল বেরুনী, গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফজাল হোসেন, পরিদর্শক (তদন্ত) হেলাল উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি টিম ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন ও হামলাকারীদের শনাক্তে কাজ শুরু করে।

পুলিশ সুপার জানান, তদন্তের শুরুতেই বিভিন্ন তথ্য ও সন্দেহজনক আচরণ পরিলক্ষিত হওয়ায় ঘটনার একমাত্র প্রতক্ষদর্শী স্ত্রী রাবেয়া আক্তার ওরফে মুসকানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। প্রথমে মুসকান এলোমেলো তথ্য দিলেও পরে স্বেচ্ছায় ঘটনার বিবরণ দেন।

মুসকান জানান, সাড়ে তিনমাস আগে সৌরভ বেপারীর সঙ্গে পারিবারিকভাবে তার বিয়ে হয়। বিয়ের সময় সৌরভ বলেছিলেন, তিনি সরকারি চাকরি করেন এবং মুসকানকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ দেবেন। তবে বিয়ের পর মুসকান জানতে পারেন সৌরভ সরকারি চাকরি নয়, ঢাকায় একটি প্রাইভেট ব্যাংকের গাড়িচালক। এ বিষয়টি ছাড়াও বিয়ের পর মুসকানের আগের বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে সম্পর্ক ও সাংসারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সৌরভের মনোমালিন্য দেখা দেয়। এতে মুসকান তার স্বামীর ওপর ক্ষুব্ধ হন। পরে বিয়ের আগের সম্পর্কিত প্রেমিক আবু সিয়াম ও তার বন্ধু রাজনদের সহযোগিতায় স্বামী সৌরভকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

jagonews24

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, গত ২৪ জানুয়ারি ছুটিতে সৌরভ ঢাকা থেকে গৌরনদীতে গ্রামের বাড়িতে আসেন। পরের দিন দুপুরের খাবার গ্রহণের পর সৌরভকে ভিটামিন ওষুধ বলে দুটি চেতনানাশক ওষুধ খাওয়ায় মুসকান। পরে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কেনাকাটার জন্য সৌরভের সঙ্গে গৌরনদী উপজেলা সদরে যান। সৌরভের কাছ থেকে টাকা ও মোবাইল ফোন নিয়ে মুসকান একটি পার্লারের ভেতরে যান এবং কৌশলে মোবাইল ফোনে প্রেমিক সিয়ামকে খবর দেন।

পার্লারের কাজ ও কেনাকাটা শেষে ঘণ্টাখানেক পর সৌরভ অসুস্থবোধ করলে মুসকান তাকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বান্ধবীর বাসায় যাওয়া কথা বলে অটোরিকশা থেকে মুসকান তার স্বামী সৌরভকে নিয়ে নেমে যান।

পরে গৌরনদীর কালনা এলাকার শামসুল হকের বাড়ির পূর্ব পাশের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় সৌরভ বেপারীকে স্ত্রী মুসকানের প্রেমিক সিয়াম ও রাজন ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে কুপিয়ে জখম করেন। এতে সৌরভের গলার ওপরের অংশে, ঘাড়ের নিচে, গালে, কানেসহ দুই হাত রক্তাক্ত জখম হয়।

হামলার সময় স্ত্রী মুসকান স্বামীকে বাঁচানোর চেষ্টা না করে নীরবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকেন। তবে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত সৌরভের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে হামলাকারীরা দ্রুত ঘটনাস্থল ছেড়ে পালিয়ে যান।

এ ঘটনায় সৌরভ বেপারীর বাবা গৌরনদী মডেল থানায় মামলা করেন। ওই মামলার প্রধান আসামি মুসকানকে গ্রেফতার দেখিয়ে ২৮ জানুয়ারি আদালতে সোপর্দ করা হয়। তখন মুসকান ঘটনার বিবরণ দিয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

পরে মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) গাজীপুর মেট্রোপলিটনের টঙ্গী পূর্ব থানার দত্তপাড়া এলাকায় অভিযান চালায় পলিশ। সেখান থেকে আবু সাইদ সিয়াম ও জিহাদ হাসান রাজনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী হামলায় ব্যবহৃত রক্তমাখা চাপাতি ও ছোরা উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, মুসকান স্বীকার করেছেন পুরো ঘটনা তার সাজানো ছিল, তবে তিনি চাননি সৌরভকে এভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে কুপিয়ে আহত করা হোক। সৌরভের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় মুসকান চেয়েছিলেন ভয়ভীতি দেখিয়ে তালাক নিয়ে প্রেমিক সিয়ামকে বিয়ে করতে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সৌরভের বাবা কবির বেপারী বলেন, ‘বিয়ের সময় আমরা কোনো মিথ্যাচার করিনি, মুসকান মিথ্যা বলছে। তার আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক ছিল। আমি এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই, যাতে কারও সন্তানের সঙ্গে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।’

পরিদর্শক (তদন্ত) হেলাল উদ্দিন বলেন, হামলার ঘটনার সঙ্গে তিনজন জড়িত ছিলেন বলে তদন্তে আমরা জানতে পারি। সে হিসেবে মামলার প্রধান আসামি রাবেয়ার ৬ প্রেমিকের মধ্যে আরেক প্রেমিক রায়হান খন্দকারকেও আমরা গ্রেফতার করেছি। এ পর্যন্ত মোট চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এরমধ্যে রায়হান ও সিয়ামের আদি বাড়ি গৌরনদী এবং রাজনের আদি বাড়ি জামালপুরে। তবে সিয়াম ও রাজন গাজীপুরের টঙ্গীর দত্তপাড়া এলাকায় বসবাস করতেন।

এসআর

 

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।