স্থগিত নির্মাণ কাজ, অনিশ্চিত খান জাহান আলী বিমানবন্দর

আলমগীর হান্নান আলমগীর হান্নান খুলনা
প্রকাশিত: ০১:৪৫ পিএম, ২০ মার্চ ২০২৩

ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে খুলনায় বিমানবন্দর স্থাপনের দাবি আলোর মুখ দেখলেও তা আবারও নিভে যেতে বসেছে। স্থগিত করা হয়েছে খান জাহান আলী বিমানবন্দরের কাজ। ফলে পিছিয়ে থাকা এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা আবারও বাধার মুখে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনরা।

বিভাগীয় শহর খুলনা থেকে প্রায় ২৫ মিনিটের দূরত্বে বাগেরহাটের রামপালের ফয়লাহাটের নির্মিত হচ্ছিল খান জাহান আলী বিমানবন্দর। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে বিমানবন্দরটি নির্মাণের কথা বলা হলেও কার্যকর বিনিয়োগকারী না পাওয়ায় সম্প্রতি প্রকল্পটি স্থগিতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিমানবন্দরটি হলে দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মোংলা আরও সচল হাওয়ার পাশাপাশি এর রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা, খুলনার চিংড়ি শিল্পসহ বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম আরও বাড়বে। ঘুরে দাঁড়াবে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের ইকো ট্যুরিজম, হযরত খান জাহান আলীর (র.) মাজার ও বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদ কেন্দ্রিক পর্যটন শিল্প। দ্রুত বিকাশ ঘটবে খুলনাঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থা।

খান জাহান আলী বিমানবন্দরের কাজ স্থগিত করায় প্রকল্পটি সরকারের রাজস্ব খাত থেকে বাস্তবায়নের দাবি তুলেছেন বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির নেতারা। এ আন্দোলন জোরদার করতে এক হচ্ছে খুলনা নাগরিক সমাজ, বৃহত্তর আমরা খুলনাবাসী, আমরা বৃহত্তর খুলনাবাসীসহ বিভিন্ন সংগঠন।
এরই মধ্যে সংগঠনগুলো তাদের দাবি আদায়ের কার্যক্রম শুরু করেছে।

খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি কাজী আমিনুল হক জাগো নিউজকে বলেন, খুলনা বিভাগের মধ্যে একটি বিমানবন্দর আছে। যা যশোর সেনানিবাসে। খুলনা থেকে এ বিমানবন্দরে যাতায়াত করতে হলে কমপক্ষে তিনঘণ্টা সময় লাগে। রামপালে বিমানবন্দর হলে খুলনার সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ অন্য অঞ্চলের যোগাযোগের ক্ষেত্রে এত সময় লাগবে না। আমরা আশায় ছিলাম বিমানবন্দর হলে এ অঞ্চলের অর্থনীতির চাকা আরও সচল হবে। কিন্তু এখন তা স্থগিত হওয়ায় আমাদের আশা নিরাশায় পরিণত হয়েছে।

সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এবারের বাজেটে অর্থবরাদ্দ দিয়ে বিমানবন্দর নির্মাণ কাজ শুরু করার দাবি জানান তিনি।

jagonews24

খুলনা সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ব্যবসায়ী অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী খুলনার উন্নয়নে আন্তরিক হওয়ায় মোংলা বন্দরকে সচল করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন। আগামীতে নেপাল ও অন্য দেশগুলো এ বন্দর ব্যবহারের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কিন্তু যারা বন্দর ব্যবহার করবে তারা চাইবে দ্রুত কাজ শেষ করতে। ফলে যাতায়াতের ক্ষেত্রে খান জাহান আলী বিমানবন্দর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

খুলনা চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি ও খুলনা প্রেস ক্লাবের সভাপতি এস এম নজরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের খুলনার অর্থনীতির চাকা সচল করতে হলে বিমানবন্দর স্থাপন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। কারণ পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দ্রুত আমরা রাজধানীতে যাতায়াত করতে পারলেও সেখানে পৌঁছে দীর্ঘ যানজটে পড়তে হয়। সেই জট পেরিয়ে সেতু পর্যন্ত আসতে সময় লেগে যায় কয়েক ঘণ্টা। অতিরিক্ত সময় ব্যয় করে কেউ এ অঞ্চলে ব্যবসা বাণিজ্য করতে আসতে চাইবে না।

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন কমিটির সভাপতি শেখ মু. আশরাফুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, খান জাহান আলী বিমানবন্দর প্রকল্পটি স্থগিত করা খুলনাবাসীর জন্য হতাশাজনক। সুন্দরবনের পর্যটন শিল্প বিকাশ, মোংলা বন্দরে আমদানি-রপ্তানি, অর্থনৈতিক জোন কার্যকরসহ এ অঞ্চলের শিল্প-বাণিজ্য সচল রাখার ক্ষেত্রে বিমানবন্দরের বিশেষ গুরুত্ব পালন করতে পারবে। যে কারণে আমরা বিমানবন্দরটি স্থাপনের কাজ শেষ করে দ্রুত চালুর দাবি জানাচ্ছি।

খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব শেখ মোহাম্মদ আলী জাগো নিউজকে বলেন, বৈশ্বিক অর্থনীতি ও সামাজিক নানা সূচকে বাংলাদেশ এখন উল্লেখযোগ্য নাম। সমৃদ্ধ উন্নত দেশের অভিযাত্রায় খুলনা এখন শক্তিশালী অভিযাত্রী। এ অভিযাত্রায় খুলনা আগামীতে উন্নত বাংলাদেশ উপহার দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, যদি খুলনার সম্ভাবনাগুলোকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো যায়। খুলনা প্রাকৃতিক এবং ভূ-রাজনীতির সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে সড়ক, রেল, নৌ, সমুদ্রপথে ভারত, নেপাল, ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্যিক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে পারে। এ কারণে খুলনায় বিমানবন্দর অপরিহার্য। খুলনার দীর্ঘদিনের দাবি ও বিমানবন্দরটি বাস্তবায়ন না হওয়া এ অঞ্চলের মানুষের জন্য হাতাশজনক।

তিনি আরও বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন না হলে অধিগ্রহণকৃত ১০০ হেক্টর জমি ও উন্নয়ন বাবদ ব্যয় হওয়া বিপুল অংকের অর্থের অপচয় হবে। অধিগ্রহণ করা জমি অনাবাদী ও অব্যবহৃত থাকবে। এ কারণে বিমানবন্দরটির যথেষ্ট গুরুত্ব আছে। বিমানবন্দরের কাজ চালুর জন্য ৩০ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খুলনা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপি দেওয়া হবে।

এসজে/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।