ব্রিজের ওপর অটোস্ট্যান্ড, দীর্ঘ যানজটে ভোগান্তি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি জামালপুর
প্রকাশিত: ০৮:০৬ পিএম, ২১ মার্চ ২০২৩
ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে আছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা

একসময় শহরের কোলাহল ছেড়ে মানুষ ছুটে যেতেন ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর নির্মিত ব্রিজে। দাঁড়িয়ে নদী ও প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতেন। এখন আর সেই দৃশ্য সচরাচর দেখা যায় না।

এখন মানুষের বদলে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্রিজের ওপর সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকে। ফলে ব্রিজের দুপাশে প্রতিনিয়ত যানজট লেগেই থাকে।

ব্রিজের ওপর অটোস্ট্যান্ড, দীর্ঘ যানজটে ভোগান্তি

৩-৪ মিনিটের ব্রিজে কোনো কোনো সময় পার হতে আধাঘণ্টারও বেশি সময় লাগে। ব্রিজটি জামালপুর ও শেরপুরের মাঝামাঝি হওয়ায় দুজেলার রশি টানাটানিতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে প্রশাসন এগিয়ে আসছে না বলে অভিযোগ সচেতনমহলের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জামালপুর ও শেরপুর জেলায় সরাসরি যাতায়াত সুবিধার জন্য ১৯৯৮ সালে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর নির্মাণ হয় ব্রিজটি। শুরুতে ব্রিজের কারণে দুজেলার মানুষের সেতুবন্ধন তৈরি হয়। কিন্তু দিন যতই গড়িয়েছে পাল্টেছে চিত্র। উভয় জেলার স্থানীয় প্রভাবশালী একটি চক্র সেতুটি দখল করে অবৈধভাবে সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও নসিমন স্ট্যান্ড বসায়। প্রতিদিন এ স্ট্যান্ড থেকে দুশতাধিক সিএনজি, দেড় শতাধিক অটোরিকশা ও শতাধিক নসিমন পর্যায়ক্রমে ছেড়ে যায়।

ব্রিজের ওপর অটোস্ট্যান্ড, দীর্ঘ যানজটে ভোগান্তি

স্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রকরা স্বেচ্ছাসেবকের মাধ্যমে সিরিয়াল নিয়ন্ত্রণ ও টোকেনের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করেন। এতে বেশিরভাগ সময় রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে ক্রমাগত দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। যানবাহনের চাপে ঝুঁকিতে ২৫ বছরের ব্রিজটিও।

স্থানীয় বাসিন্দা জাকারিয়া জাহাঙ্গীর জানান, নির্মাণের পর বিকেল হলেই ব্রিজে ছুটে আসতেন ভ্রমণপিপাসুরা। এখানে দাঁড়িয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতেন লোকজন। কিন্তু এখন আর সেই অবস্থা নেই। অবৈধ স্ট্যান্ড ও যানজটের কারণে অবসর কাটানোর স্থানটি জনভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেতুটি জামালপুর ও শেরপুরের মাঝামাঝি হওয়ায় দুই জেলার রশি টানাটানিতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে এগিয়ে আসছে না প্রশাসনও।

সেতু পারাপারের সময় কথা হয় আলহাজ মিয়া নামে এক ট্রাকচালকের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রতিদিন সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা এবং নসিমন দিয়ে ব্রিজের বেশিরভাগ অংশ বন্ধ থাকে। যানজট না থাকলে সেতু পার হতে সময় লাগত ৩-৪ মিনিট। কিন্তু প্রায় সময় এ সেতু পার গতে সময় লাগে আধাঘণ্টারও বেশি। ব্রিজটি করা হয়েছিল মানুষের ভোগান্তি কমানোর জন্য। অথচ অবৈধ স্ট্যান্ডের কারণে ভোগান্তি এখন চরমে।

সেতুর ওপর অবৈধভাবে পার্কিংয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে অটোরিকশাচালক সুরুজজ্জামান বলেন, সিএনজি ও অটোরিকশা স্ট্যান্ডের জায়গা না থাকায় ব্রিজের ওপরই রাখি।

ব্রিজের ওপর অটোস্ট্যান্ড, দীর্ঘ যানজটে ভোগান্তি

স্ট্যান্ড পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলাল মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, তাদের একটিমাত্র স্ট্যান্ড আছে যা ব্রিজ থেকে আধা কিলোমিটার দূরে। সেখানে গিয়ে যাত্রীরা যানবাহনে উঠতে চান না। তাই যাত্রীদের সুবিধার্থে ব্রিজের ওপর অটোরিকশা রাখা হয়।

জামালপুর সড়ক ও জনপথের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী পঙ্কজ ভৌমিক জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে জামালপুর জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বৈঠকে আলোচনা করা হয়েছে। সেতুটির বৃহৎ অংশ শেরপুর জেলায় অবস্থিত হওয়ায় কার্যত কিছুই করা যাচ্ছে না।

শেরপুরের সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, মাঝেমধ্যে অবৈধ অটোরিকশা স্ট্যান্ড উচ্ছেদের চেষ্টা করলেও সেতুটি দুই জেলায় অবস্থিত হওয়ায় বার বার ব্যর্থ হয়েছি। তবে এ বিষয়ে সম্প্রতি চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করছি দ্রুত এর সমাধান হবে।

জামালপুর জেলা প্রশাসক শ্রাবস্তী রায় জাগো নিউজকে বলেন, শুনেছি অবৈধ অটোরিকশা স্ট্যান্ডের কারণে সবসময় দীর্ঘ যানজট লেগে থাকে। তাদের উচ্ছেদে শেরপুরের জেলা প্রশাসক সহযোগিতা চাইলে আমরাও এগিয়ে যাবো।

এসজে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।