রংপুরের ৭ জেলায় এক ছটাকও ধান যায়নি খাদ্য বিভাগের গুদামে

রংপুর বিভাগের আট জেলার মধ্যে সাত জেলায় এক ছটাকও ধান কিনতে পারেনি খাদ্য বিভাগ। আট জেলায় ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৬২ হাজার ৩৪৪ মেট্রিক টন নির্ধারণ হলেও সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৩ মেট্রিক টন ধান।
অপরদিকে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ২১ হাজার ২৫৪ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে আরও অতিরিক্ত ৪৩ হাজার ৭৬৭ মেট্রিক টন সংগ্রহ করা হয়েছে। চাল ক্রয়ে সফল হলেও ধানে পুরোপুরি ব্যর্থ খাদ্য বিভাগ। তবে খাদ্য বিভাগের ভাষ্য, সরকারের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে।
কৃষকরা বলছেন, সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বাজারে ধানের দাম বেশি এবং গুদামে ধান সরবরাহ করতে নানা ঝামেলা পোহাতে হয়। এ কারণে তারা গুদামে ধান দিতে আগ্রহী হচ্ছেন না।
রংপুর আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রংপুর বিভাগের আট জেলার মধ্যে রংপুর জেলায় ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ হাজার ৩৪ ও চাল ১৫ হাজার ৮৩০ মেট্রিক টন, গাইবান্ধায় ধান ৭ হাজার ২৫৪ ও চাল ১১ হাজার ৯৮৬, কুড়িগ্রামে ধান ৬ হাজার ৫৯৩ ও চাল ৯ হাজার ৬৭৮, লালমনিরহাটে ধান ৪ হাজার ৭০০ ও চাল ৬ হাজার ৩৫, নীলফামারীতে ধান ৬ হাজার ৭৬ ও চাল ৯ হাজার ১১৮, দিনাজপুরে ধান ১৪ হাজার ৪১৭ ও চাল ৪৭ হাজার ৬৮৮, ঠাকুরগাঁওয়ে ধান ৮ হাজার ৩৭০ ও চাল ১৩ হাজার ৯৪২ এবং পঞ্চগড়ে ধান ৫ হাজার ৮৯১ ও চাল ৬ হাজার ৯৭৭ মেট্রিক টন। প্রতিকেজি চাল ৪২ টাকা এবং ধান ২৮ টাকা দরে গত বছরের ১৭ নভেম্বর ক্রয় অভিযান শুরু হয়ে চলে চলতি বছরের ৭ মার্চ পর্যন্ত।
চাল সংগ্রহ অভিযানে বিভাগের আট জেলায় ৩ হাজার ৫৫৮ জন মিল মালিকের সঙ্গে চুক্তি হয় খাদ্য বিভাগের। নির্দিষ্ট সময়ের আগে চাল সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলে আট জেলায় আরও ৪৭ হাজার ১০৯ মেট্রিক টন চাল অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়। গত ৭ মার্চ পর্যন্ত এই অতিরিক্ত বরাদ্দের ৪৩ হাজার ৭৬৭ মেট্রিক টন চাল ক্রয় করতে সক্ষম হয় খাদ্য বিভাগ।
তবে আট জেলায় ধানে মোট বরাদ্দ ছিল ৬২ হাজার ৩৪৪ মেট্রিক টন। এর মধ্যে শুধু দিনাজপুরে ৩ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করা হয়েছে। বাকি সাত জেলায় এক ছটাকও ধান কিনতে পারেনি খাদ্য বিভাগ।
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার মদাতী ইউনিয়নের কৃষক খায়রুল ইসলাম বলেন, গুদামের চেয়ে খোলা বাজারে ধানের দাম বেশি। এছাড়া গুদামে ধান বিক্রি করতে গেলে নানা রকম ঝামেলা পোহাতে হয়। এ কারণে ধান সরবরাহ করতে আগ্রহী ছিলাম না।
রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নের কৃষক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সরকার ধান ক্রয়ের যে পদ্ধতি চালু করেছে তা কৃষকের জন্য কিছুটা জটিল। প্রথমে মোবাইল অ্যাপসে কৃষককে নিবন্ধন করতে হয়। এরপর মোবাইলে আবেদন করতে হয়। নিবন্ধিত কৃষকের মধ্যে অ্যাপসের মাধ্যমে লটারি হয়। এরপর নির্বাচিত কৃষককে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গুদামে ধান দিতে হবে। গুদামে ধান দেওয়ার সময় কৃষককে ভোটার আইডি কার্ড ও কৃষি কার্ডের ফটোকপি নিয়ে আসতে হয়। এরপর ধানের টাকা তাদের ব্যাংক হিসাব নম্বরে দেওয়া হয়। এজন্য তাদেরকে আবার ব্যাংকে ছবি ও ভোটার আইডি কার্ড দিয়ে হিসাব নম্বর খুলতে হয়। মূলত এসব নানা রকম ঝামেলার কারণে কৃষকরা গুদামে ধান দিতে অনীহা প্রকাশ করছেন।
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার কৃষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে যদি খোলা বাজারে কেজিপ্রতি ধানের দাম ২-৪ টাকা কমও হয় তবুও গুদামের চেয়ে বাজারে ধান বিক্রি করা লাভজনক। কারণ গুদামে ধান দিতে গেলে নানা রকম ঝামেলা পোহাতে হয়।
রংপুর আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা আশরাফুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, চাল ক্রয়ে সফল হলেও খোলা বাজারে ধানের দর বেশি থাকায় কৃষকরা সরকারি গুদামে ধান নিয়ে আসেননি।
তিনি আরও বলেন, সরকারের ধান-চাল ক্রয়ের উদ্দেশ্য হলো মজুত বৃদ্ধি করে মজুতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও কৃষকরা যাতে ন্যায্যমূল্য পান তা নিশ্চিত করা। কৃষকরা সরকারের কাছে ধান বিক্রি না করলেও বাইরে ন্যায্যমূল্য পেয়েছেন। এটাই সফলতা।
এফএ/এএসএম