উপহারের ঘর পেয়ে আপ্লুত আকবর

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি যশোর
প্রকাশিত: ০৭:১২ পিএম, ২২ মার্চ ২০২৩

অন্যের ঘরে নিজের জন্ম। সন্তানের জন্মও অন্যের ঘরে। দীর্ঘ ৭১ বছর ভূমিহীন। নিজের নামে তিনিই কিনা পেলেন জমির দলিল ও ঘরের কাগজ! তাই উচ্ছ্বাস যেন কমছে না রিকশাচালক আকবর আলীর।

জমির দলিল হাতে নিয়ে তিনি বলেন, ছোট্টকাল থেকেই যশোর শহরে রিকশাচালিয়ে আসছি। স্ত্রী আর দুই ছেলে নিয়ে শহরের খালদার রোডে এক বস্তিতে বসবাস করে আসছি। সারাজীবন ভাঙা ঘরেই রাত্রীযাপন করেছি। এখন শেখ হাসিনার দেওয়া সদর উপজেলার ফতেপুর ধানকাটা আশ্রয়ণ প্রকল্পে দুই শতক জমি আর পাকা ঘরই তার পরিবারের স্থায়ী ঠিকানা। গত শনিবার স্ত্রীকে নিয়ে রিকশাচালিয়ে সেই পাকা ঘর দেখে এসেছি। ঘরটি খুব পছন্দ হয়েছে। থাকার কক্ষের সঙ্গে রান্নাঘর। পয়-নিষ্কাশনের ব্যবস্থাও ভালো। বিদ্যুৎ আছে। পানি আছে। পরিবার নিয়ে এখন খুব ভালোভাবে থাকতে পারবেন। তবে যেখানে জীবনের বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছেন সেই খালদার রোডের বস্তিতে আরও এক সপ্তাহ কাটিয়ে প্রতিবেশীদের সঙ্গে বিদায় নিয়ে শেখ হাসিনার দেওয়া ঘরে উঠবেন।

jagonews24

আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাচ্ছে আরও ৬৫ হাজার পরিবার 

রিকশাচালক আকবরের মতোই যশোরের ৮ উপজেলার ৩৩৩ জন ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে আধা পাকা ঘর দিয়েছে সরকার। বুধবার বেলা ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করার পর সদর উপজেলার ৫৫ জন ঘর সুবিধাভোগী পরিবারের মাঝে দলিল ও ঘরের কাগজপত্র বুঝিয়ে দেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার জিল্লুর রহমান চৌধুরী। এ বাড়ি ও জমির দলিল হস্তান্তরের মধ্যদিয়ে ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা হয়েছে যশোরের শার্শা, বাঘারপাড়া ও কেশবপুর উপজেলা। আশ্রয়ণ কেন্দ্রে মাথা গোজার ঠাঁই পেয়ে খুশি এসব পরিবারগুলো। একটি সময় রাস্তার পাশে বা অন্যের জমিতে ঝুপড়ি ঘর তুলে বসবাস করলেও এখন নিজে ঘর পেয়েছেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া এমন উপহারে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ভুক্তভোগী এ পরিবারগুলো।

সদর উপজেলার সিরাজসিঙ্গার বাসিন্দা অশ্বিন দাস বলেন, পরের জমিতে চাষাবাদ, পরের জমিতে বসবাস করে আসছি। চাষাবাদ করেই সাত সদস্যের সংসার চলে। সারাদিন কাজের পর ভালোভাবে শোবার জায়গা ছিলো না। এখন শেখ হাসিনার কল্যাণে আমার আধাপাকা ঘর আর দুই শতক জমি হয়েছে। জীবনের এ শেষ অংশে কী খাবো জানি না। তবে বলতে পারি ভালোভাবে শুইতে পারবো। শহরের বেজপাড়ার সুধীর বাবুর কাঠগোলার সামনে বাসা ভাড়া করে থাকতে তাপসী সরদার ও সুমন সরদার দম্পতি। তাদের পরিবারে রয়েছে দুটি সন্তানও। তাদের নতুন পরিচয় সদরের ধানকাটা আশ্রয়ণ প্রকল্পে। নতুন ঘর পেয়ে এই দম্পতি জানান, তাদের দুঃখ কষ্টের দিনের কথা। তাপসী সরদার বলেন, স্বামী সেলুনে কাজ করেন। যে টাকা পায় সেটা দিয়ে ঘর ভাড়া দিয়ে আর থাকে না। সংসার চালানেই কষ্টকর। পরের বাড়িতে থাকার কারণে পরের গাল মন্দ কথা শুনতে হয়। এখন আমাদের নতুন ঘর, স্থায়ী ঠিকানা হয়েছে। আমরা খুব খুশি।

সদর উপজেলার ৫৫ জন আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার জিল্লুর রহমান চৌধুরী।

আরও পড়ুন: উপহারের ঘর পেয়ে বদলে গেছে জীবন 

তিনি বলেন, আমাদের সমাজের অসঙ্গতি রয়েছে। এ সঙ্গতির কারণে দেশে ভূমিহীন হয়েছে। দেশে সুষমবন্ঠন যদি না থাকে, ন্যায় বিচার ইনসাফ না থাকে সেই দেশে গরীব হয় বেশি। তখনই রাষ্ট্র বাধ্য হয়ে গরীবদের পাশে দাঁড়াতে।

jagonews24

সেই দায়িত্ব নিয়ে শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার দক্ষ দিকনির্দেশনা আজ বাংলাদেশ ভূমিহীন মুক্ত হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে খুলনা বিভাগের দুটি জেলা মাগুরা ও চুয়াডাঙ্গা ও ২৩ উপজেলা ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা হয়েছে। এসব স্থানে এরপরও কেউ যদি ভুক্তভোগী থাকে তাকেও ঘর ও ভূমি দেওয়া হবে।

জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, যশোরে এক হাজার ৭৬১টি বাড়ি উপহার হিসাবে দেওয়া হয়েছে ভূমিহীন ও অসহায়দের মাঝে। বুধবার চতুর্থধাপে জেলায় ৩৩৩টি পরিবারের মাঝে ভূমিসহ ঘর দেওয়া হলো। এ বাড়ি ও জমির দলিল হস্তান্তরের মধ্যদিয়ে ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা হলো যশোরের শার্শা, বাঘারপাড়া ও কেশবপুর উপজেলা। বাকি উপজেলাগুলো এ ছরেই ভূমিহীন মুক্ত হবে।

এসময় সদর উপজেলার চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল, উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনুপ দাস বক্তব্য রাখেন।

মিলন রহমান/আরএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।