সাবেক ছাত্রলীগ নেতার ওপর এ কেমন নির্যাতন

সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতাকে বেধড়ক মারধর করে মাথা ন্যাড়া ও চোখের ভ্রু কেটে দিয়েছেন জামালপুরের মেয়রের লোকজন। পরে ওই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে পুলিশে সোপর্দ করেন মেয়র। সেই মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। তবে মেয়রের দাবি তার লোকজন নয় বরং এলাকাবাসীই সাবেক ওই ছাত্রলীগ নেতার মাথা ন্যাড়া করেছেন।
ভুক্তভোগী মো. নূর হোসেন আবাহনী পাথালিয়া গ্রামের মো. আ. রশিদের ছেলে। তিনি পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। জামালপুর পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেনকে ফেসবুক লাইভে ভূমিদস্যু-সন্ত্রাসী বলেন নূর হোসেন আবাহনী। ফেসবুক লাইভে এসে এমন বক্তব্য দেওয়ায় তার ওপর এই নির্যাতন চালানো হয়েছে।
সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতাকে নির্যাতনের পর একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ওই ভিডিওতে মো. নূর হোসেন আবাহনীকে মাথা ন্যাড়া ও চোখের ভ্রু ফেলে দেওয়া অবস্থায় দেখা যায়।
ভিডিওতে মো. নূর হোসেনকে বলতে শোনা যায়, ‘লাইভ করার অপরাধে মেয়রের লোকজন আমাকে তুলে নিয়ে হাত-পা-মুখ বেঁধে বেধড়ক মারধর করে। আমি রোজা রাখছিলাম। পরে ইফতারের সময় আমি খেজুর খাই। খেজুর খাওয়ার পর আবারও আমার হাত-পা-মুখ বেঁধে একটি ইটভাটায় নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে আমাকে বলে মেয়র আমাকে মেরে ফেলার জন্য বলেছে। বলেই আবারো আমাকে মারধর করে। সেখান থেকে অন্য একটি বাড়িতে নিয়ে আবারো মারধর করে। পরে সেখান থেকে আমাকে তারা পুলিশের গাড়িতে তুলে দেয়।’
এদিকে এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) তার মুক্তি চেয়ে পরিবারের লোকজন ও এলাকাবাসী বিক্ষোভ করেন। একইসঙ্গে জামালপুর পৌরসভা থেকে মেয়রকে বরখাস্ত ও প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দাবিতে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেন।
বিক্ষোভ ও মানববন্ধনে নূর হোসেন আবাহনীর মুক্তি চেয়ে ও মেয়রের শাস্তি দাবি করে পাথালিয়া গ্রামের শতাধিক নারী-পুরুষ মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন। এ সময় মেয়র ছানোয়ার হোসেনের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়।
এর আগে বুধবার (২৯ মার্চ) বিকেলে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নূর হোসেন আবাহনী ফেসবুক লাইভে মেয়র ছানোয়ার হোসেনের ‘ভূমিদস্যুতার’ প্রতিবাদ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওইদিন মেয়র মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন ও তার লোকজন তাকে তুলে নিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে মাথার চুল ও চোখের ভ্রু কেটে দেন বলে অভিযোগ তার। পরে ওইদিন রাতেই জামালপুর সদর থানায় আবাহনীকে আসামি করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন মেয়র। মামলার পর আবাহনীকে মেয়র সানোয়ার হোসেন ও তার লোকজন পুলিশে সোপর্দ করেন।
বৃহস্পতিবার ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে নূর হোসেন আবাহনীকে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। বর্তমানে আদালতের নির্দেশে পুলিশ পাহারায় জামালপুর হাসপাতালে তার চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে নুর হোসেন আবাহনীর বোন রিক্তা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, আমার ভাই মেয়রের অপকর্ম ফেসবুকে তুলে ধরায় তাকে মারধর করে মাথার চুল ও চোখের ভ্রু কেটে পুলিশে সোপর্দ করেছে মেয়র ও তার লোকজন। উল্টো আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাও করেছে।
আপনারা থানায় অভিযোগ করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এখনো থানায় অভিযোগ করিনি। তবে পরিবারের অন্যান্যদের সঙ্গে আলোচনা করে অভিযোগ করা হবে।
অভিযু্ক্ত জামালপুর পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, আমার বাড়ির জায়গায় আমি কাজ করছি। সেখানে এসে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নূর হোসেন আবাহনী ফেসবুক লাইভে আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যাচার করেছে। এজন্য এলাকাবাসী তাকে উত্তম মাধ্যম দিয়ে মাথা ন্যাড়া ও চোখের ভ্রু কেটে পুলিশে সোপর্দ করেছে।
আইন হাতে তুলে নেওয়ার এখতিয়ার আপনার বা এলাকাবাসীর আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার লোকজন তাকে মারধর করেনি। আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের লোকজন ছেলেটাকে ব্যবহার করছে। তারাই তাকে মারধর করেছে। আমার কোনো লোকজন তাকে মারধর করেনি।
এ বিষয়ে জামালপুর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাফিউল করিম রাব্বি জাগো নিউজকে বলেন, নুর হোসেন আবাহনী ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। পরে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বহিষ্কার করা হয় তাকে। বর্তমানে আমি ও আমার সভাপতি সাংগঠনিক কাজে ঢাকায় আছি। বিষয়টি সম্পর্কে তেমন অবগত নই।
জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাহনেওয়াজ জাগো নিউজকে বলেন, মেয়র ছানোয়ার হোসেন ছানুর বিরুদ্ধে ফেসবুকে বক্তব্য দেওয়ার ঘটনায় এলাকাবাসী নূর হোসেন আবাহনীর ওপর চড়াও হয়। তাকে মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করে। তার বিরুদ্ধে মেয়র ছানোয়ার হোসেন বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেছেন। সেই মামলায় তাকে হেফাজতে নিয়ে জামালপুর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার পর আদালতে সোপর্দ করা হয়। পরে আদালতের নির্দেশে পুলিশ পাহারায় আবারও তাকে জামালপুর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে নুর হোসেনের পরিবারের পক্ষ থেকে যদি কেউ অভিযোগ করে তাহলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
জামালপুরের অতিরিক্ত পুলিশ মো. মাসুম আনোয়ার জাগো নিউজকে বলেন, একজন অন্যায় করলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে আইন হাতে তুলে নেওয়ার ক্ষমতা কারো নেই। ছাত্রলীগ নেতার পক্ষ থেকে কেউ যদি অভিযোগ করে তাহলে তদন্ত করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জামালপুর জেলা প্রশাসক শ্রাবস্তী রায় জাগো নিউজকে বলেন, আমরা একটা স্মারকলিপি পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মঞ্জুরুল ইসলাম/এফএ/এএসএম