নোনা মাঠে সোনার ফসল
সিডর আর আইলার মতো ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষত কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছেন সুন্দরবনের কোলঘেঁষা উপকূলীয় উপজেলা কয়রার মানুষ। লবণাক্ত জমিতে সোনার ফসল ফলাচ্ছেন তারা। লবণাক্ত কয়রা উপজেলার দিগন্ত জুড়ে মিষ্টি আলু, তরমুজ আর সূর্যমুখী চাষ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন উপকূলের সহস্রাধিক মানুষ। উৎপাদিত ফসলের সঠিক দাম পেলে চাষিরা আরও বেশি জমিতে চাষাবাদ শুরু করবেন বলে মন্তব্য কৃষি বিভাগের।
খুলনা জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, লবণাক্ততাকে জয় করতে কয়রা উপজেলার লবণাক্ত জমিতে ফসল উৎপাদনের প্রকল্প গ্রহণ করে কৃষি অধিদপ্তর। ‘ক্লাইমেট-স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে খুলনা কৃষি অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন” প্রকল্পের মাধ্যমে কয়রার একশ হেক্টরের বেশি পতিত জমিতে চাষ করা হয় মিষ্টি আলু, তরমুজ আর সূর্যমুখী। নোনা জমিতে সোনার ফসল ফলাতে কৃষি কর্মকর্তাদের সহায়তা নিয়ে কাজ করতে এগিয়ে আসেন সহস্রাধিক কৃষাণ-কৃষাণিও।
আরও পড়ুন- তরমুজে লাভের আশা দাকোপের চাষিদের
কয়রা উপজেলার আমাদী ইউনিয়নের নাকশা গ্রামের কৃষাণি ব্রতিরানী বলেন, জেলা ও উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় ৪ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ও ১০ বিঘা জমিতে মিষ্টি আলু রোপণ করেছি। প্রতি বিঘায় ১১০ মণের বেশি আলু উৎপাদিত হবে বলে আশা করছি। প্রতি কেজি আলু ৬ টাকার বেশি দরে বিক্রি হয়। এতে এক বিঘা জমিতে ২০ হাজার টাকার মতো লাভ হবে। দাম বেশি হলে ৫০ হাজার টাকার বেশি লাভ হতো।
মৌখালী এলাকার কৃষক আল আমিন সানা বলেন, গত বছর লিজ নিয়ে তিন বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছিলাম। তাতে ভালোই ফলন পেয়েছি। কিন্তু সময় পেরিয়ে যাওয়ায় তেমন লাভ করতে পারেননি। এবছরও তরমুজ চাষ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। বিঘা প্রতি ২০ মণের বেশি তরমুজ উৎপাদন হবে বলে আশা করছি।
চণ্ডিপুর গ্রামের মেঘনাথ ঢালী বলেন, প্রকল্পের আওতায় পাকিজা জাতের তরমুজ চাষ করেছি। কৃষি অফিস থেকে এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে। এরইমধ্যে তরমজু গাছে ফল আসতে শুরু করেছে।
আরও পড়ুন- পানি নিয়ে উপকূলের হাহাকার এখন খুলনা নগরীতে
তিনি বলেন, লবণাক্ত মাটিতে উৎপাদিত তরমুজ খুব স্বাদের হয়ে থাকে। আকারে একটু ছোট হলেও তা তৃপ্তি সহকারে খাওয়া যায়। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত না হানলে এবার তরমুজ ভালো লাভ হবে।
জেলা কৃষি অফিসের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শষ্য) মো. মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, উপকূলীয় উপজেলার মধ্যে কয়রা অন্যতম। ঘূর্ণিঝড় সিডর আর জলোচ্ছ্বাস আইলার আঘাতসহ বিভিন্ন দুর্যোগে জর্জরিত একটি উপজেলা। এখানকার মাটি অতিরিক্ত লবণাক্ত। সেই লবণাক্ত জমিতে কৃষকরা সোনার ফসল উৎপাদন করছেন। এটা একটা ভালো বিষয়। এখানকার কৃষকদের অনেক আগে থেকেই সহায়তা করে যাচ্ছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। সার, বীজ, কীটনাশক প্রদানসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা দিয়ে কৃষকদের সঙ্গে কাজ করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন- স্থগিত নির্মাণ কাজ, অনিশ্চিত খান জাহান আলী বিমানবন্দর
তিনি বলেন, কৃষি অধিদপ্তরের ‘ক্লাইমেট-স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে খুলনা কৃষি অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন’ প্রকল্পের আওতায় বর্তমানে এই উপজেলার কৃষকদের পতিত জমিসহ চাষযোগ্য সব জমি চাষাবাদের আওতায় আনার কাজ চলছে। এরই অংশ হিসেবে মিষ্টি আলু, তরমুজ, তেল জাতীয় ফসল সূর্যমুখীর চাষ করে এখানকার কৃষকরা সফলতার মুখ দেখছেন। সঠিক দাম পেলে কৃষকরা আরও বেশি চাষাবাদে আগ্রহী হবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এফএ/এএসএম