চাকরি না পেলেও গাড়ল পালনে লাখপতি রাশেদ
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার চারুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা রাশেদুজ্জামান রাশেদ। পড়াশোনা শেষে চাকরি না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েন। পরে ২০১৭ সালে ছোট-বড় ২০টি গাড়ল দিয়ে শুরু করেন খামার। এখন রাশেদের খামারে দুইশোর বেশি গাড়ল রয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ৩০-৩৫ লাখ টাকা। গাড়লের মাংস যেমন সুস্বাদু ও পুষ্টিকর, তেমনি চামড়ার চাহিদা রয়েছে দেশ-বিদেশের বাজারে। তাই প্রতি মাসে গাড়ল বিক্রি করে রাশেদের লাভ হচ্ছে দেড় লাখ টাকার মতো। তার সফলতা দেখে এলাকার অনেক বেকার যুবক গাড়ল পালন শুরু করেছেন।
ভেড়ার একটি জাত এই গাড়ল। স্থানীয়ভাবে সবাই ভেড়া বলেই জানেন। জেলা ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকেও গাড়ল পালনকারীদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
উদ্যোক্তা রাশেদুজ্জামান রাশেদ বলেন, আমার বাবা বাড়িতে কয়েকটি গাড়ল পালন করতেন। একসময় সব বিক্রি করে দেন। প্রথম থেকেই গাড়ল আমার ভালো লাগতো। পড়াশোনা শেষ করে চাকরি ও কাজের পেছনে ছুটে সফলতা না পেয়ে হতাশ হই। এরপর বাবার গাড়ল পালন করা দেখে নিজেই চিন্তা করি খামার করার। সেই চিন্তা থেকেই ২০১৭ সালে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে গাড়ল পালনের জন্য ঘর নির্মাণ করি। এরপর চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন হাট থেকে ছোট-বড় ২০টি গাড়ল দেড় লাখ টাকায় কিনে তা লালন-পালন শুরু করি। এরপর দিনে দিনে গাড়ল বড় হতে থাকে ও বাচ্চা দিতে থাকে প্রতি মাসে। আমার খামারে বাড়তে থাকে গাড়ল। বর্তমানে আমার খামারে দুই শতাধিক গাড়ল রয়েছে। অন্যের কাছে পালনের জন্য দেওয়া আছে আরও ৫০টি।
তিনি জানান, রোগবালাই তুলনামূলক কম হওয়ায় সহজে লালন-পালন করা যায় গাড়ল। রোগ প্রতিরোধের জন্য ভ্যাকসিন ও ওষুধ দেওয়া হয়। মাঠে চরানোর জন্য দুজন লোক কাজ করেন। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত গাড়লগুলো মাঠে চরিয়ে ঘাস খাওয়ানো হয়। বাড়তি খাবারের প্রয়োজন হয় না। বর্ষায় মাঠে চরাতে না পারায় নিজের জমিতে লাগানো নেপিয়ার ঘাস খাওয়ানো হয়। খাবারের কোনো সমস্যা হয় না।
রাশেদ বলেন, সিলেট, চট্টগ্রাম, ঢাকা, বরিশাল, হবিগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যাপারীরা গাড়ল কিনতে আসেন। ব্যাপারীরা তাদের পছন্দমতো গাড়ল কিনে ট্রাকে নিয়ে যান। আকারভেদে ১৫-৩০ হাজার টাকায় পর্যন্ত বিক্রি হয়। বাজারমূল্য অনেক ভালো হওয়ায় লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। আমাকে দেখে অনেক শিক্ষিত বেকার তরুণ-তরুণী গাড়লের খামার গড়ে তুলছেন। অল্প বিনিয়োগে, অল্প সময়ে এটি লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। এই গাড়ল পালন জেলায় ছড়িয়ে দিলে বেকারত্ব কমবে।
মাঠে রাশেদের গাড়ল চরাতে এসেছেন হাসমত আলি। তিনি বলেন, তিন বছর ধরে গাড়ল দেখাশোনার কাজ করছি। মাঠেই চরে খায়। বাড়তি খাবারের প্রয়োজন হয় না। বেতন যা পাই তা দিয়ে সংসার ভালোই চলে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। রাশেদের কারণে অনেকের সংসার চলছে।
দামুড়হুদার চারুলিয়া গ্রামের হাসান জানান, পড়াশোনা শেষ করে রাশেদুজ্জামান বেকার ছিল। আগে তার বাবা গাড়ল পালন করতেন। তা দেখেই শখের বসে পালন শুরু করে সে। এখন বড় পরিসরে খামার গড়ে তুলেছে। চাকরি না করেও যে স্বাবলম্বী হওয়া যায়, রাশেদই তার প্রমাণ।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মিহির কান্তি বিশ্বাস বলেন, নিয়মিত আমরা গাড়ল খামারটি পরিদর্শন করি। সঠিক নিয়মে পরিচর্যার বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছি। এটি লাভজনক ব্যবসা।
তিনি আরও বলেন, তুলনামূলকভাবে অন্য গৃহপালিত প্রাণীর চেয়ে গাড়লের রোগবালাই কম হয় ও দ্রুত মাংস বৃদ্ধি হয়। লাভজনক হওয়ায় গাড়ল পালনে অনেকে এগিয়ে আসছেন। জেলা ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে গাড়ল প্রজাতির ভেড়া পালনে চিকিৎসা সেবা ও পরামর্শসহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে খামারিদের।
হুসাইন মালিক/এফএ/এমএস