তিন জেলায় পানিতে ডুবে প্রাণ গেলো ৯ জনের
পানিতে ডুবে একদিনে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে নোয়াখালীতে ছয়জন, বরিশালে দুজন ও কুড়িগ্রামে একজন। বুধবার (৫ জুলাই) সকাল থেকে দুপুরে পৃথক এসব ঘটনা ঘটে। জাগো নিউজের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন তুলে ধরা হলো।
নোয়াখালী
নোয়াখালীর কবিরহাট, হাতিয়া, সুবর্ণচর এবং কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় পানিতে ডুবে দুই ভাই ও দুই বোনসহ ছয় শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
তারা হলো- কবিরহাটের চাপরাশিরহাট ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের রামেশ্বরপুর গ্রামের আবু নাছেরের ছেলে রিশাদ (৯) ও রিশান (৭), হাতিয়ার নলচিরা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদ রিয়াজের মেয়ে নিহা আক্তার (৫), কোম্পানীগঞ্জের চরএলাহী ইউনিয়নের গাংচিল গ্রামের আক্তার হোসেনের ছেলে আবু বক্কর (৫) ও সুবর্ণচরের চরওয়াফদা ইউনিয়নের চরবৈশাখী গ্রামের সালাহ উদ্দিনের মেয়ে রীমা (১২) ও মো. হোসেনের মেয়ে আমেনা (১০)।
কবিরহাটের চাপরাশিরহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দিন টিটু জাগো নিউজকে বলেন, দুপুর ১টার দিকে মানসিক প্রতিবন্ধী বড় ভাই রিশাদ পুকুরঘাটে পা পিছলে পানিতে পড়ে যায়। এ সময় ছোট ভাই রিশান তাকে তুলতে গিয়ে সেও পানিতে তলিয়ে যায়। এতে দুজনই ঘটনাস্থলে মারা যায়।
হাতিয়ার নলচিরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মনছুর উল্যাহ জাগো নিউজকে বলেন, বেলা ১১টার দিকে বাড়ির পাশে খেলতে গিয়ে পানিতে পড়ে যায় শিশু নিহা। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
কোম্পানীগঞ্জের চরএলাহী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রাজ্জাক জাগো নিউজকে বলেন, বাড়ির সবার অগোচরে গাংচিল গ্রামের আক্তার হোসেনের ছেলে আবু বক্কর পানিতে পড়ে মারা যায়।
চরজব্বর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মতিউর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, চট্টগ্রাম থেকে বেড়াতে এসে পানিতে পড়ে রীমা ও আমেনা নামে দুই চাচাতো বোন মারা গেছে।
কবিরহাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হেলাল উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, খবর পেয়ে দুই ভাইয়ের বাড়িতে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পরিবারের অভিযোগ অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে গত দুদিনে নোয়াখালীর সুবর্ণচর ও সেনবাগে পানিতে পড়ে আরও তিন শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
বরিশাল
জেলার মুলাদী ও কাজিরহাট থানায় পুকুর ও নদীতে ডুবে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (৫ জুলাই) বেলা ১১টায় মুলাদী উপজেলার রামচর গ্রামে ও দুপুর ১২টার দিকে কাজিরহাট থানার কাদিরবাদ গ্রামে পৃথক এ ঘটনা ঘটে।
দুজন হলেন- মুলাদীর রামচর গ্রামের কায়েজ খলিফার ছেলে আল-হাসিন (৪) ও মুলাদী উপজেলা সীমান্তবর্তী কাজিরহাট থানার কাদিরবাদ গ্রামের ইদ্রিস মোল্লার ছেলে মো. ইব্রাহীম (১৬)।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আল-হাসিন প্রতিবেশী ছেলে মেয়েদের সঙ্গে পুকুরে গোসলে নেমে নিখোঁজ হয়। স্থানীয়রা এসে ডুবন্ত অবস্থায় আল-হাসিনকে উদ্ধার করে মুলাদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
অপরদিকে দুপুর ১২টার দিকে নদীতে গোসলে নেমে নিখোঁজ হয় মো. ইব্রাহীম। বিষয়টি তার মা বুঝতে পেরে স্থানীয় লোকজনকে জানান। স্থানীয় লোকজন ও তার আত্মীয়রা এসে নদী থেকে তাকে উদ্ধার করে। পরে মুলাদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে মুলাদী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সমীর কুমার দাস জাগো নিউজকে বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ দুটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। পরে পরিবারের কোনো আপত্তি না থাকায় মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে পুকুরে গোসলে নেমে মুসফিফা তিথী (১০) নামে পঞ্চম শ্রেণীর এক ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। তিথি উপজেলার সদর ইউনিয়নের সোনাতলী গ্রামের মিজানুর রহমানের মেয়ে। সে সোনাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে।
বুধবার দুপুরে বাড়ির পাশের পুকুরে এ ঘটনা ঘটে।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, তিথীসহ আরও দুই শিশু বাড়ির পাশের পুকুরে গোসলে নামে। সেখানে তিথি পানিতে ডুবে যায়। সঙ্গে থাকা শিশুরা চিৎকার দিলে পরিবারের লোকজন এসে তিথিকে উদ্ধার করে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ভূরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এ এস এম সায়েম জাগো নিউজকে বলেন, মেয়েটিকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। কর্তব্যরত চিকিৎসক মেয়েটিকে দেখে মৃত ঘোষণা করেন।
ইকবাল হোসেন মজনু/শাওন খান/ফজলুল করিম ফারাজী/এসজে/জেআইএম