সংকটাপন্ন ‘বন ছাগলের’ দেখা মিললো বারৈয়ারঢালা উদ্যানে

উপজেলা প্রতিনিধি উপজেলা প্রতিনিধি মিরসরাই (চট্টগ্রাম)
প্রকাশিত: ০৮:৪৪ এএম, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩
গবেষণার ক্যামেরায় ধরা পড়ে বন ছাগল

বারৈয়ারঢালা জাতীয় উদ্যানে দেখা গেছে সংকটাপন্ন প্রজাতির বন ছাগল। এক গবেষক দলের বন্যপ্রাণী শুমারির কাজে স্থাপন করা বিশেষ ক্যামেরায় এ অঞ্চলে বেশ কিছু বন ছাগলের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া এ অঞ্চলের বাসিন্দারা এখন বনে আসা যাওয়ার পথে প্রায়ই বন ছাগলের দেখা পান বলে জানিয়েছেন।

বন কর্মকর্তা ও বন্যপ্রাণী গবেষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশের সিলেট, সাঙ্গু, মাতামুহুরি অঞ্চলে এখনো কিছু বন ছাগলের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তবে উপযুক্ত আবাস ভূমি ও ছাগলের সংখ্যায় বারৈয়ারঢালা জাতীয় উদ্যান এখনো কিছুটা সমৃদ্ধ।

বন কর্মকর্তারা বলেন, হরেক রকম পাখি, বন্যপ্রাণী ও নানান বৈচিত্র্যময় গাছপালা থাকায় ২০১০ সালের ৬ এপ্রিল চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের ওয়াহেদপুর, খৈয়াছড়া ও সীতাকুণ্ড উপজেলার বারৈয়ারঢালা ইউনিয়নের ২৯৩৩.৬১ হেক্টর সংরক্ষিত পাহাড়ি বনভূমি নিয়ে বারৈয়ারঢালা জাতীয় উদ্যান প্রতিষ্ঠা হয়। এ জাতীয় উদ্যানে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য বন বিভাগের উদ্যোগে সুফল প্রকল্পের আওতায় ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের মে পর্যন্ত বন্যপ্রাণীর সংখ্যা ও প্রজাতি সম্পর্কে জানতে দুবছরব্যাপী একটি গবেষণা কাজ পরিচালনা করা হয়েছে। এ গবেষণায় বনের বিভিন্ন স্থানে ৪৮টি বিশেষ ধরনের ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। এসব ক্যামেরার অন্তত ২২টিতে বন ছাগলের বিচরণের ছবি ধরা পড়েছে।

জানা গেছে, দুই তিন দশক আগেও এদেশের পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব অঞ্চলের খাড়া পাহাড় ও পাথুরে পর্বত ভূমিতে প্রাণীটির বিচরণ ছিল চোখে পড়ার মত। কিন্তু বাসস্থান বিপর্যয় ও অবৈধ শিকার বিলুপ্তির পথে ঠেলে দিয়েছে এ বন্যপ্রাণীকে। তবে বন্যপশু নিয়ে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের আওতাধীন বারৈয়ারঢালা জাতীয় উদ্যান কেন্দ্রিক বন বিভাগের করা একটি গবেষণা আবার আশা জাগাচ্ছে বন ছাগলের টিকে থাকা নিয়ে।

মিরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নের পূর্ব পোলমোগরা এলাকার বাসিন্দা মো. শাহজাহান বলেন, ২০ বছর ধরে বাঁশ-কাঠ কাটতে বনে আসা যাওয়া করি। পাহাড়ে এখন মাঝেমধ্যেই বন ছাগলের দেখা পাই। কয়েকমাস আগেও বাচ্চাসহ একটি বন ছাগল চোখে পড়েছে আমার।

বড়তাকিয়া রেল স্টেশন এলাকার আরেক কাঠুরিয়া জহির উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, আগের তুলনায় এখন এ অঞ্চলে বন ছাগল বেশি দেখা যাচ্ছে।

বারৈয়ারঢালা জাতীয় উদ্যানের সহ-ব্যবস্থাপনা নির্বাহী কমিটির সভাপতি মো. সরোয়ার উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, এ এলাকায় বন ছাগল আছে এ কথা বলে একসময় বন কর্মকর্তাদের আমি বিশ্বাস করাতে পারিনি। কিন্তু স্থানীয়রা প্রায় সময় মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়ায় পাহাড়গুলোতে বন ছাগল দেখার কথা বলতো। এবার তো গবেষণা ক্যামেরায় ধরাও পড়লো।

সংকটাপন্ন ‘বন ছাগলের’ দেখা মিললো বারৈয়ারঢালা উদ্যানে

তিনি আরও বলেন, এখানে হরিণ, অজগর, বন মোরগ, বন ছাগল ও বানরসহ বিভিন্ন ধরনের বিলুপ্ত প্রজাতির প্রাণীর বিচরণ আছে। খাবারের সন্ধানে অনেক সময় লোকালয়ে চলে আসে বানর, অজগর ও হরিণ। রাতে কিছু শিকারী এসে হরিণ ধরে নিয়ে যায়। আমরা এগুলো বন্ধ করতে পারলে বিলুপ্ত প্রজাতির অভয়ারণ্য গড়ে উঠবে এখানে।

চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বারৈয়ারঢালা রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা এ কে এম আলতাফ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, বারৈয়ারঢালা রেঞ্জের আওতায় মিরসরাই উপজেলার ওয়াহেদপুর ও সীতাকুণ্ডের বারৈয়ারঢালা এলাকায় বন্যপ্রাণী ও পাখি সমৃদ্ধ আবাসস্থল। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির হরিণ, শুকর, হনুমান, বানর, ভাল্লুক অজগরসহ আরও কিছু বিলুপ্ত প্রায় প্রাণীর সন্ধান দেখা গেছে। সম্প্রতি বন বিভাগের উদ্যোগে একটি গবেষণায় এ অঞ্চলে বন ছাগলের অবস্থান নিশ্চিত হওয়া গেছে। এসব প্রাণী রক্ষায় এখন থেকে আরও সচেতন হবো।

বারৈয়ারঢালা জাতীয় উদ্যানে বন বিভাগের সুফল প্রকল্পের আওতায় বন্যপ্রাণীর ওপর গবেষণাটির প্রধান ছিলেন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. কারুল হাসান।

এ গবেষক বলেন, বারৈয়ারঢালা জাতীয় উদ্যানে বন্যপ্রাণীর ওপর গবেষণার মাঠ পর্যায়ের কাজ শেষ হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে বন বিভাগকে এখনো প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি। এ গবেষণায় আমাদের স্থাপন করা ৪৮ টি বিশেষ ক্যামেরায় বিলুপ্ত বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর ছবির সাথে বন ছাগলের আশাব্যঞ্জক উপস্থিতি দেখেছি। সংগৃহীত এসব ছবি বিন্যাস করে এখন ছাগলের সংখ্যা বের করার কাজ চলছে। দুঃখের বিষয় হচ্ছে এখানে বন্দুক হাতে অবৈধ শিকারীর ছবিও ধরা পড়েছে আমাদের ক্যামেরায়। এটি বলা যায় মিরসরাই, সীতাকুণ্ড ও ফটিকছড়ির হাজারীখিলের পাথুরে পর্বত অঞ্চলটা বন ছাগলের আদর্শ আবাস ভূমি। যত্ন নিলে এ দুর্লভ প্রাণীটি হয়তো প্রকৃতিতে ফিরে আসবে ভালোভাবে।

এসজে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।