নওগাঁর আট খাদ্যগুদামে সংগ্রহ হয়নি এক কেজি ধানও

নওগাঁয় ইরি-বোরো মৌসুমে সরকারিভাবে ধান সংগ্রহের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি খাদ্যবিভাগ। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১১ দশমিক ৭৮ শতাংশ ধান সংগ্রহ করতে পেরেছে সরকারি খাদ্যগুদামগুলো। এর মধ্যে দুই উপজেলার পাঁচটিসহ মোট আটটি খাদ্যগুদামে এক কেজি ধানও সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।
চলতি বছরের ৭ মে থেকে ধান-চাল সংগ্রহ শুরু হয় সরকারি খাদ্যগুদামে। ধান কেনা শেষ হয় ৩১ আগস্টে। তবে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার সময় ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। জেলার ১১টি উপজেলার ১৯টি খাদ্যগুদামের মধ্যে আটটি গুদামে এক কেজি ধানও সংগ্রহ করা যায়নি।
খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা ও স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে স্থানীয় হাটগুলোতে কৃষক ধানের দাম বেশি ছিল। এছাড়া কৃষকরা গুদামে ধান দিতে গেলে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়। অনেক সময় ধান শুকনা না বলে ফেরত নিয়ে আসতে হয়। এসব কারণে সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে কৃষকের আগ্রহ কম।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ৩০ টাকা কেজি হিসেবে জেলায় ১৬ হাজার ৭৫ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে নির্ধারিত সময়ে ধান কেনা হয়েছে ১ হাজার ৮৯২ দশমিক ৮৪০ টন। আর মিলারদের কাছ থেকে ৪৪ টাকা কেজি হিসেবে প্রথমে ৬০ হাজার ৭৬১ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। পরবর্তীতে লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি করে ৬৮ হাজার ৯০৬ দশমিক ৩৩৯ টন করা হলেও ৬৮ হাজার ৬৮৪ মেট্রিক টন চাল কিনতে পারে খাদ্য বিভাগ।
আরও জানা যায়, নওগাঁ সদর উপজেলায় ১ হাজার ৫৪৯ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এর মধ্যে সংগ্রহ হয়েছে ৭৯ টন। আত্রাই উপজেলায় ১ হাজার ৫৭৫ টনের মধ্যে সংগ্রহ হয়েছে ২২০ টন। রানীনগরে ১ হাজার ৬০৩ টনের মধ্যে সংগ্রহ হয়েছে ২৭১ টন, পত্নীতলা উপজেলায় ১ হাজার ৬৪৮ টনের মধ্যে সংগ্রহ হয়েছে ৫১৮ টন, ধামইরহাটে ১ হাজার ৫৭৯ টনের মধ্যে সংগ্রহ হয়েছে ৬৩ টন, পোরশা উপজেলায় ৬৮৮ টনের মধ্যে সংগ্রহ হয়েছে ২৬১ টন, মান্দায় ১ হাজার ৬৬৩ মধ্যে সংগ্রহ হয়েছে ৮২ টন, বদলগাছীতে ৯৮৮ মধ্যে সংগ্রহ হয়েছে ৮১ টন, নিয়ামতপুরে ১ হাজার ৯১০ মধ্যে সংগ্রহ হয়েছে ৩১৪ টন। এছাড়া মহাদেবপুরে ২ হাজার ৩৮২ টন ও সাপাহারে ৪৯০ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও কোনো ধানই সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।
মহাদেবপুর উপজেলার উত্তর গ্রাম এলাকার কৃষক আকবর আলী বলেন, সরকারি খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করতে গেলে একটু ধান ভেজা থাকলেও নিতে চায় না। তখন ধান নিয়ে আবার ফেরত আসতে হয়। আবার পরিবহন খরচ, অনেক সময় গুদামের শ্রমিকদের টাকা দিতে হয়। তাই গুদামে ধান বিক্রি করতে যাই না।
রানীনগরের মিরাট এলাকার কৃষক বাচ্চু মণ্ডল বলেন, মাড়াইয়ের পর পাইকাররা বাড়িতে এসে ধান কিনে নিয়ে গেছে। আবার হাটেও ধান বিক্রি করি কোনো ঝামেলা হয় না। এ কারণে গুদামে ধান বিক্রি করি না।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মুহাম্মদ তানভীর রহমান বলেন, সরকারিভাবে ধান সংগ্রহের যে মূল্য নির্ধারণ ছিল তার থেকে খোলা বাজারে ধানের দামের পার্থক্য না থাকায় কৃষকেরা গুদামে ধান দিতে আগ্রহী হননি। তবে সরকারের ধান সংগ্রহের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, কৃষক যেন ন্যায্যমূল্য পান। সরকারের সেই উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। তবে আমরা চাল সংগ্রহে শতভাগ সফলতা পেয়েছি।
এমআরআর/এএসএম