এলাকায় ক্ষোভ
নিজের তৈরি কবরে দাফন করা হলো না আবুল হোসেনকে
নিজের তৈরি করে রেখে যাওয়া কবরে দাফন করা হলো না সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের। এমনকি তার মরদেহও আনা হয়নি নিজ পৈতৃক ভিটায়। স্ত্রী ও দুই মেয়ের সিদ্ধান্তে তাকে শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) জুমার জানাজের পর জানাজা শেষে দাফন করা হয় শ্বশুরবাড়ি সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জুমার নামাজের পর ডাসারে নিজ প্রতিষ্ঠিত মসজিদ মাঠে সৈয়দ আবুল হোসেনের জানাজা হওয়ার কথা ছিল। তাই ভোর থেকেই নেতাকর্মীরা ডাসারে আবুল হোসেনের পৈতৃক ভিটা ও মসজিদ মাঠে ভিড় করতে থাকেন। হঠাৎ বেলা ১১টার দিকে তারা জানতে পারেন, প্রিয় নেতার মরদেহ ডাসারে আসবে না। স্ত্রী খাজা নার্গিস হোসেন এবং দুই মেয়ে সৈয়দা রুবাইয়াত হোসেন ও সৈয়দা ইফফাত হোসেনের সিদ্ধান্তে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হবে শ্বশুরবাড়ি সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সৈয়দ আবুল হোসেন তার জীবদ্দশায় নিজের কবর তৈরি করে রেখে গেছেন। এর পাশেই তৈরি করেছেন দৃষ্টিনন্দন মসজিদ। যাতে ব্যয় হয় প্রায় ১২ কোটি টাকা। সাত বছর আগে এ দুটি স্থাপনা তিনি তৈরি করেন।
আরও পড়ুন: এনায়েতপুরী দরবার শরীফে সমাহিত হলেন সৈয়দ আবুল হোসেন
ডাসার উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা আবুল খায়ের বলেন, ‘সৈয়দ আবুল হোসেনের সঙ্গে ১৯৮৮ সাল থেকে আমার পরিচয়। তিনি খুব ভালো মানুষ ছিলেন। তিনি প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে পৈতৃক ভিটায় একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ ও নিজের কবর তৈরি করে রেখেছিলেন। তার স্বপ্ন ও ইচ্ছা ছিল এ কবরেই সমাহিত হবেন। কিন্তু তার পরিবার তা হতে দিলো না। এটা খুবই দুঃখজনক। আমরা কিছুতেই এটা মানতে পারছি না।’

ডাসার উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর ইসলাম কালু বলেন, ‘আমাদের প্রিয় নেতাকে আমরা শেষবারের মতো দেখতে পেলাম না। তার পরিবার আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এটা আমরা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।’
কালকিনি উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের প্রিয় নেতা সৈয়দ আবুল হোসেন তার পৈতৃক ভিটার তার বাবা ও মায়ের কবরের পাশে নিজের কবর তৈরি করে রেখেছিলেন। অনেক টাকা ব্যয় করে মাজারের মতো করে কবর তৈরি করেছিলেন। এমনকি কী টাইলস হবে, কী কাঠ হবে সব কিছু তিনি ঠিকাদারকে বলেও রেখেছিলেন। গত ছয়মাস ধরে কবরটির উন্নয়ন কাজও চলছিল। অথচ তার স্ত্রী ও সন্তানরা তার শেষ ইচ্ছা পূরণ করলেন না। এটি আসলেই দুঃখজনক।’

এ বিষয়ে সৈয়দ আবুল হোসেনের ছোট ভাই ডা. সৈয়দ আবুল হাসান বলেন, ‘আমরা অনেক চেষ্টা করেছি ভাইয়র মরদেহ ডাসারে আনার জন্য। কিন্তু আমরা তা পারিনি। আমার ভাইয়ের স্ত্রী ও তার দুই মেয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে দাফন করা হয়েছে।’
কালকিনি উপজেলা চেয়ারম্যান মীর গোলাম ফারুক বলেন, আমরা বহু চেষ্টা করেও আমাদের প্রিয় নেতার মরদেহ ডাসারে আনতে পারিনি। আমাদের নেতাকর্মীরা সৈয়দ আবুল হোসেনকে এক নজর দেখার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তার শ্বশুরবাড়িতে দাফন করা হয়েছে।
বুধবার (২৫ অক্টোবর) দিনগত রাত ২টার দিকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সৈয়দ আবুল হোসেন।

১৯৫১ সালে মাদারীপুরের ডাসারে সৈয়দ আতাহার আলী ও সৈয়দা সুফিয়া আলী দম্পতির সংসারে জন্ম নেন আবুল হোসেন। ১৯৭৯ সালে খাজা নার্গিস হোসেনকে বিয়ে করেন তিনি। সৈয়দা রুবাইয়াত হোসেন ও সৈয়দা ইফফাত হোসেন নামের তার দুই মেয়ে থাকেন দেশের বাইরে।
আওয়ামী লীগের হয়ে মাদারীপুর-৩ আসন থেকে ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আবুল হোসেন। এরপর সপ্তম, অষ্টম ও নবম সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এরমধ্যে ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন আবুল হোসেন।
কালকিনি, ডাসার ও মাদারীপুর সদরে বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে গেছেন সাবেক এ মন্ত্রী। যার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হচ্ছে শেখ হাসিনা উমেন্স কলেজ, ডিকে আতাহার আলী কলেজ, খোয়াজপুর সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজ, এবিসি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজ, খাসেরহাট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজ প্রমুখ।
আয়শা সিদ্দিকা আকাশী/এসআর/জেআইএম