ফরিদপুরে র্যাগ ডের নামে অশ্লীলতা, সমালোচনার ঝড়
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার জর্জ একাডেমির র্যাগ ডে উদযাপন নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। বিদায় অনুষ্ঠানের নামে রোববারের (১২ নভেম্বর) অশ্লীল র্যাগ ডে উদযাপনের ছবি-ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নিন্দার ঝড় ওঠে।
ভিডিওতে দেখা যায়, র্যাগ ডে উপলক্ষে সাউন্ডবক্সের গানের তালে তালে ছেলেমেয়েরা একসঙ্গে নাচানাচি করছে। সেই সঙ্গে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করে ফটোসেশন ও একই কক্ষে ছেলেমেয়ে একান্ত হওয়ার দৃশ্য দেখা গেছে। অনুভূতি ব্যক্ত করার নামে বেশকিছু ছাত্রছাত্রীকে একে অপরের গায়ে থাকা টি-শার্টে যৌন উত্তেজক, কুরুচিপূর্ণ, অশ্লীল শব্দ লিখে দিতে দেখা যায়। সেসব কুরুচিপূর্ণ লেখা টি-শার্ট পরে শিক্ষকদের সঙ্গে ফটোসেশন করতে দেখে অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেন।
স্থানীয়রা জানান, ১২ নভেম্বর রোববার শ্রীশ্রী শ্যামাপূজার বন্ধের দিন কতিপয় শিক্ষার্থী র্যাগ ডে উদযাপনের পরিকল্পনা করে। এতে তারা খাওয়া-দাওয়া, টি-শার্ট ক্রয়, ফটোসেশন ও সাউন্ড সিস্টেমের জন্য মাথাপিছু ৩৫০ টাকা করে চাঁদা সংগ্রহ করে।
আরও পড়ুন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র্যাগ ডে’র নামে অশ্লীলতা বন্ধের নির্দেশ
সম্প্রতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের দ্বন্দ্বে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ বছরজুড়ে সমালোচনার মুখর থাকা প্রতিষ্ঠানটি র্যাগ ডে করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এতে শতবর্ষী বিদ্যালয়টির মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে বলে দাবি করেন অভিভাবক ও সুশীল সমাজ।
ইতালি প্রবাসী সাংবাদিক কমরেড খন্দকার ফেসবুকে এক পোস্টে লিখেছেন, যেখানে আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে শিক্ষকরা গ্রুপিং শুরু করেছে সেখানে শিক্ষার্থীরা র্যাগ ডের নামে নোংরামি করবে সেটাই স্বাভাবিক। ফেসবুকে দেখলাম কুরুচিপূর্ণ অশ্লীল শব্দ লেখা টি-শার্ট পরা, মুখে আবির মাখা ছেলেমেয়ের ছবি। সত্যি দুঃখজনক। এগুলো কি দেখার কেউ নেই?
বোয়ালমারী প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কাজী হাসান ফিরোজ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের গর্বের প্রতিষ্ঠানে র্যাগ ডের নামে যে অপসংস্কৃতি ও বেহায়াপনার ছবি-ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে তার তীব্র নিন্দা জানাই। সেই সঙ্গে আয়োজকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।
আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘র্যাগ ডে’ বন্ধের নির্দেশ
ওই বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী আল-আমিন নিবিড় জানান, বিদায় অনুষ্ঠানের নামে কিছু উশৃঙ্খল ছেলেমেয়ের কর্মকাণ্ড দেখে হতবাক হয়েছি। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এ উশৃঙ্খলতার অনুমতি দিয়েছেন। ভাবতেই অবাক লাগছে।
কবি, নাট্যকার ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গাজী শামসুজ্জামান খোকন বলেন, বিদায় অনুষ্ঠানের নামে ছাত্রছাত্রী পরস্পর নিজেদের পরিহিত টি-শার্টে প্রকাশ অযোগ্য অশ্লীল লেখালেখি ও অঙ্গভঙ্গি কখনো সভ্যতার অংশ হতে পারে না। তারা আমাদের ঐতিহ্য ভূলুণ্ঠিত করেছে। বিনয়ী বিদায়ের পরিবর্তে এমন উগ্র আয়োজন আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে যায় না।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের অভিভাবক কমিটির সদস্য সম্পা রেজা বলেন, কমিটির কতিপয় সদস্য, সভাপতি ও সহকারী প্রধান শিক্ষক প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে যে নোংরামি শুরু করেছেন তাতে আমি লজ্জিত। র্যাগ ডের যে ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে সেটি ব্যক্ত করতেও আমি লজ্জা পাচ্ছি।
সাদিদ সিয়াম নামের এক শিক্ষার্থী জানায়, সব আয়োজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে হয়েছে। সবাই মিলে আনন্দ করা দোষের কিছু নয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমার অনুমতি নিয়েই শিক্ষার্থীরা র্যাগ ডে আয়োজন করেছে। ভদ্রোচিতভাবেই তারা আনন্দ করেছে, যা হয়েছে এটা স্বাভাবিক, এতে আমি দোষের কিছু দেখি না।
এ বিষয়ে বোয়ালমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, র্যাগ ডের নামে অশ্লীল কিছু উদযাপন নিষিদ্ধ। জর্জ একাডেমির বিষয়টি আমি জানার সঙ্গে সঙ্গে সেটি বন্ধ করতে নির্দেশনা দিয়েছি।
এন কে বি নয়ন/আরএইচ/এমএস