ঈদের সকালেও ভিড়
চুয়াডাঙ্গায় কোটি টাকার দই-মিষ্টি বিক্রি, খুশি দোকানিরা
চুয়াডাঙ্গায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগের দিন জমজমাট ছিল দই-মিষ্টির দোকানগুলো। করোনা অতিমারীর পর সব রেকর্ড ভেঙে কোটি কোটি টাকার বিক্রিতে খুশি দোকানীরা। সব শ্রেণির মানুষের ঈদ আয়োজনের খাবারে দই-মিষ্টি এখন অত্যাবশ্যকীয় হয়ে উঠেছে। যার ফলে দিনদিন বেড়েছে এর বিক্রি। শিশু থেকে বৃদ্ধ, ধনী থেকে গরিব, সব পরিবারের খাবারের আয়োজনে দই-মিষ্টি যুক্ত হয়ে খাবারের মেনুতে বাড়িয়েছে সৌন্দর্য।
দুদিন আগে থেকেই চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরসহ উপজেলা শহরের বাজার ঘুরে দেখা গেছে দই-মিষ্টির দোকানগুলোতে উপচে পড়া ভিড়। ক্রেতাদের চাহিদা মিটিয়ে মিষ্টি দিতে হিমশিম খাচ্ছেন বিক্রেতারা। অর্থাৎ পুরো জেলাজুড়ে কয়েক কোটি টাকার বিক্রি হয়েছে। যারমধ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরেই বিক্রি দুদিনে দুই কোটি টাকার বেশি বলে নাম না প্রকাশ করার শর্তে বেশ কয়েকজন জানিয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের কালিপদ মিষ্টান্ন ভান্ডার, কাশফুল, মিঠাই বাড়ি, খন্দকার সুইটস, মিষ্টিমুখসহ বেশ কয়েকটি দোকানে বিক্রি সব চেয়ে বেশি। এসব দোকান ঘুরে গভীর রাত থেকে ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত ক্রেতাদের উপচে ভিড় লক্ষ্য করা যায়।

বিক্রেতারা বলছেন, দুদিন আগে থেকেই আজ ঈদের দিন সকালেও বিক্রির চাপ বেড়েছে। দই কেনার পাশাপাশি বেশিরভাগ ক্রেতার চাহিদা সাদামিষ্টি, কালোজাম, চমচম, রসগোল্লা, খির চমচম ও স্পঞ্জ মিষ্টি, ছানা মিষ্টি। তবে অভিজাত ক্রেতারা দইসহ কিনছেন রসগোল্লা, ছানার মিষ্টিসহ বাহারি মিষ্টি।
চুয়াডাঙ্গার গণমাধ্যমকর্মী ফাইজার চৌধুরী বলেন, আমি বেশ কয়েকজন কারিগরের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন এবার তারা দই-মিষ্টি পর্যাপ্ত প্রস্তুত করতে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়া একজন কারিগরতো বললেন, দুদিনে নাকি এক দোকানের ১১০ মণ দই বিক্রি হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা শহরের কাশফুল নামের মিষ্টির দোকানের স্বত্তাধিকারী অপু বলেন, প্রায় ৫ জনের মতো কর্মচারী নিয়ে চলছে তার মিষ্টির দোকান। তারপরও ক্রেতার চাপ সামলাতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা সদরসহ আলমডাঙ্গা, জীবননগর ও দামুড়হুদাতেও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এবার অন্য বারের তুলনায় চাহিদা বেশি, বেচাকেনাও বেশি। অনেকেই বলছেন গত ২০ বছরে এরকম বেচাকেনা দেখিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দই মিষ্টির চাহিদা নিয়েও আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
বিক্রেতারা বলছেন, অন্যবারের তুলনায় এবার বেচাকেনা বেশি। আমরা যা উৎপাদন করেছি তা এখানকার জনগণের চাহিদার চেয়ে অনেক কম। অনেককেই আমরা দই দিতে পারছি না। সবকিছু স্টক আউট হয়ে গেছে।
চুয়াডাঙ্গা শহরের খন্দকার সুইটস’র মালিক সৌরভ বলেন, ক্রেতাদের চাপ অনেক বেশি। ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে আমাদের কারিগররা দিনরাত দই-মিষ্টি বানাচ্ছেন। তবে সমস্যা হয়েছে পর্যাপ্ত দুধ মিলছে না।

দই কিনতে আসা চুয়াডাঙ্গা শহরের বনানী পাড়ার আশিক জানান, দুপুরবেলা একবার এসেছি প্রচুর ভিড় ছিল। তখন ২ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও দই পাইনি। এখন মাঝরাতে দই কিনতে এসেছিলাম শুনছি দই আর নেই।
চুয়াডাঙ্গা শহরের ব্যবসায়ী সুমন পারভেজ খান জানান, গতরাতে এসে দই না পেয়ে ফিরে গেছি। আজ অনেক ঠেলাঠেলি করে দই কিনতে পেরেছি। আর দই-মিষ্টি ছাড়া যেন ঈদের বাজার সম্পূর্ণ হয় না।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে আরেক মিষ্টি ব্যবসায়ী বলেন, যা বিক্রি, তা সাংবাদিকদের বলা যাবে না। পেপারে উঠে গেলে, আমাদের সমস্যা হবে।
আরেক দোকানের কর্মচারী বলেন, প্রচুর বিক্রি হচ্ছে এটা ঠিক না। তবে মোটামুটি বিক্রি আছে। ঈদ উপলক্ষে যেরকম বেচাকেনা, সেরকমই হচ্ছে।
মিঠাই বাড়ি দোকানের মালিক পক্ষের এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ করে বলেন, আমরা মান ঠিক রেখে দই-মিষ্টি বিক্রি করছি। যার ফলে বিক্রি বেশি। আর ঈদের কারণে বিক্রি তো বেড়েছেই।
এ বিষয়ে জেলা দোকান মালিক সমিতির প্রচার সম্পাদক মাফিজুর রহমান মাফি বলেন, এবার আসলে বিক্রি বেশি। পুরো জেলাজুড়ে কোটি কোটি টাকার দই-মিষ্টি বিক্রির খবর আমরা পেয়েছি। এটা অবশ্যই ব্যবসায়ী হিসেবে ভালো লাগার খবর।
হুসাইন মালিক/এফএ/এমএস