প্রস্রাব-পায়খানা করায় আড়াই বছরের রাবেয়াকে পিটিয়ে মারলেন সৎবাবা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি শরীয়তপুর
প্রকাশিত: ১০:০৩ এএম, ৩০ এপ্রিল ২০২৪

শরীয়তপুরে সৎবাবার নির্যাতনের শিকার হয়ে রাবেয়া আক্তার নামে আড়াই বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় শিশুটির সৎবাবা মঞ্জুরুল আলমকে আটক করেছে পুলিশ।

সোমবার (২৯ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ছয় বছর আগে কুমিল্লা জেলার রুনা আক্তারের সঙ্গে বিয়ে হয় গাইবান্ধা জেলার রিকশাচালক রাশেদুলের। তাদের সংসার জীবনে দুটি মেয়ে সন্তান জন্ম নেয়। তবে কয়েকমাস আগে রুনা আক্তারের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে চট্টগ্রামের টিউবওয়েল শ্রমিক মঞ্জুরুল আলমের। ১৭ দিন আগে তারা দুজনে পালিয়ে বিয়ে করেন। শরীয়তপুর সদর উপজেলার ডোমসার এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা এসকেন্দারের বাসায় ভাড়া থাকা শুরু করেন তারা। কিন্তু আগের পক্ষের শিশু সন্তান রাবেয়াকে সঙ্গে নিয়ে আসেন রুনা আক্তার।

গত সপ্তাহে রাবেয়া প্রস্রাব-পায়খানা করলে সৎবাবা মঞ্জুরুল আলম শিশুটির হাত-পা বেঁধে নির্যাতন চালান। এতে শিশুটি শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। একই কারণে রোবাবার রাতেও শিশুটিকে মারধর করেন মঞ্জুরুল। পরে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে সোমবার বেলা ১১টার দিকে রাবেয়াকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন তার মা রুনা আক্তার। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়। তাকে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় রুপালী বেগম বলেন, সৎবাবা শিশুটিকে অনেক অত্যাচার ও মারধর করেছে। শরীরে মারধরের অনেক দাগ দেখেছি। হাসপাতালে যখন আনা হয়েছে তখন শিশুটির অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। শিশুটিকে এভাবে মারধর করা ঠিক হয়নি। যার জন্য শিশুটির মৃত্যু হলো তার বিচার হওয়া উচিৎ।

শিশুটির মা রুনা আক্তার বলেন, আমার দ্বিতীয় স্বামী মেয়েটিকে মারধর করেছে। কাল রাতেও অনেকটা ভালো ছিল। আজ অসুস্থ হয়ে পড়লে আমি একজনের থেকে ১০০ টাকা ধার করে মেয়েকে সকালে হাসপাতালে এনে ভর্তি করি। কিন্তু বিকেলে মেয়েটি মারা যায়। আমি মেয়েকে আর পাবো না।

সদর হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স শিপ্রা মন্ডল বলেন, ভর্তির পর থেকেই শিশুটির অবস্থা খারাপ ছিল। শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার করেছিলেন চিকিৎসক। কিন্তু শিশুটিকে ঢাকায় নেওয়া হয়নি। বিকেলে শিশুটি মারা যায়।

সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) মিতু আক্তার বলেন, শিশুটির শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। এছাড়া শিশুটির শ্বাসকষ্ট এবং জ্বরও ছিল। আমরা উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফারও করি। কিন্তু তাকে নেওয়া হয়নি। যেহেতু শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়, তার জন্য ময়নাতদন্ত করতে হবে বলে জানান তিনি।

জানতে চাইলে শরীয়তপুর সদর পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সৎবাবা শিশুটিকে অমানুসিক নির্যাতন করে। পরে সদর হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়। আমরা প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে অভিযুক্তকে আটক করেছি। এ বিষয়ে অভিযোগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

বিধান মজুমদার অনি/এফএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।