খাদ্য-বস্ত্র না, বেঁচে থাকতে একটু পানি চাই


প্রকাশিত: ০৫:২৭ এএম, ২৯ এপ্রিল ২০১৬

আমরা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান চাই না, বেঁচে থাকার জন্য একটু বিশুদ্ধ খাবার পানি চাই। আবেগজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন আইলা দুর্গত সুতারখালী ইউনিয়নের গুনারী গ্রামের ইউপি সদস্য নিমাই মন্ডল।

সুপেয় খাবার পানির তীব্র সঙ্কট শুধু নিমাই মন্ডলের একার নয় বরং সমুদ্র উপকূলীয় দাকোপ উপজেলার চালনা পৌরসভাসহ ৯টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মানুষের। প্রচণ্ড গরমে বিভিন্ন গ্রামে খাবার পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে গ্রামে খাবার পানির প্রধান উৎস, অধিকাংশ পুকুরের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় খাবার পানির সন্ধান তাড়া করে ফিরছে এসব এলাকাবাসীকে।

সরেজমিনে ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চৈত্র মাসের শুরু থেকেই কোথাও তেমন একটা খাবার পানির দেখা মিলছে না। গভীর নলকুপ কোথাও কার্যকারী না হওয়ায়, এখন নদীর লবণাক্ত পানিসহ গ্রামে হাতে গোনা কয়েকটি পুকুরে যতসামান্য পানি রয়েছে। কিন্তু শ্যাওলা ও দুর্গন্ধযুক্ত এ পানি পান করায় পেটের পিড়ায় আক্রান্ত হচ্ছে অধিকাংশ মানুষ।

নলকূপগুলোতে পানি উঠছে না এবং অনেক নলকুপ অকেজ হয়ে পড়েছে। এছাড়াও গ্রামের পুকুরগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় সরকারি-বেসরকারিভাবে নির্মিত ফিল্টারগুলোও এখন আর কোনো কাজে আসছে না। তাই বিভিন্ন গ্রামের লোকজন মাইলের পর মাইল হেঁটে আবার কেউ কেউ ভ্যান, ট্রলার ও নৌকাযোগে নদী পথে পানি সংগ্রহের অভিযানে নেমেছে। ভোর থেকে মধ্যেরাত পর্যন্ত চলছে তাদের খাবার পানি সংগ্রহের এ অভিযান।

এলাকার বিত্তশালী লোকজনকে খুলনাসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলা পাইকগাছা, বটিয়াঘাটার বিভিন্ন স্থান থেকেও খাবার পানি সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। এছাড়াও পানির অভাবে গ্রামাঞ্চলের অসহায় মানুষরা জীবন বাঁচানোর তাগিদে নদীর লবণাক্ত পানিতে ফিটকিরি মিশিয়ে খাওয়া ও রান্নার কাজে ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন।

উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ উপজেলাটি সমুদ্র উপকূলীয় হওয়ায় এখানে গভীর নলকুপ বা শ্যালো টিউবওয়েল কার্যকারী নয়। বছরের প্রায় ৭ থেকে ৮ মাসই এলাকাসীকে লবনাক্ত পানির সঙ্গে নিরন্তর লড়াই করে বাঁচতে হয়। এ উপজেলার মানুষ খাবার পানি হিসেবে বৃষ্টির পানি ও পুকুরের পানির উপর নির্ভরশীল। কিন্তু চৈত্র মাসের শুরতেই বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলের খাবার ও রান্নার পানির একমাত্র উৎস পুকুরগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় খাবার পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোজাম্মেল হক জানান, ভ্যাপসা গরম আর সুপেয় পানির অভাবে প্রতিদিন শিশু থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধরা পর্যন্ত পেটের পিড়াসহ ডায়রিয়া, আমাশায়ে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতিদিন হাসপাতালের বহিঃবিভাগে ৫০ থেকে ৬০ জন রোগীকে চিকিৎসা সেবাসহ ব্যবস্থাপত্র প্রদান করা হচ্ছে। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত অনেকে এখানে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৃণাল কান্তী দে এ বিষয়ে বলেন, এ উপজেলায় গভীর নলকুপ কার্যকর নয়, তাই সারা বছরই স্থানীয় এলাকাবাসীর রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং প্লান্ট ও পুকুরের পানির উপর নির্ভরশীল থাকতে হয়। এখানে টিউবওয়েলের পানিতেও লবনাক্ততা রয়েছে আবার অনেক টিউবওয়েলে এখন পানিই উঠছে না। তাই পানির চাহিদা পুরণে এ অঞ্চলে পর্যাপ্ত পুকুর ও রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং নির্মাণ করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

বর্তমানে প্রায় ২ লাখ মানুষের বিশাল এ পানির চাহিদার বিপরীতে উল্লেখযোগ্য কোনো রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং প্লান্ট নেই  আবার এলাকায় সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানার মজা পুকুর পুনঃখননের উদ্যোগও নেই। ফলে গ্রামবাসীরা এক ফোঁটা খাবার পানি সংগ্রহের জন্য পার্শ্ববর্তী উপজেলাগুলোতে যেতে বাধ্য হচ্ছে। উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার বিশাল পানির চাহিদার বিপরীতে এ মুহুর্তে সরকারি ও বেসরকারিভাবে মজা পুকুরগুলো পূনঃ খননসহ নতুন করে প্রতিটি গ্রামে পুকুর খনন ও স্বাস্থ্য সম্মত রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং প্লান্ট নির্মাণ জরুরী। এগুলো নির্মিত হলে এলাকাবাসী কিছুটা হলেও তাদের পানির চাহিদা পুরণ করতে সক্ষম হবে।

এফএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।