৫০ কোটি টাকায় নির্মিত স্থলবন্দরের কার্যক্রম শুরু না হতেই স্থগিত

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:১৮ এএম, ৩১ আগস্ট ২০২৫

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছিল হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার বাল্লা স্থলবন্দর। কিন্তু ভারতীয় অংশে কোনো অবকাঠামো ও সড়ক না থাকায় স্থলবন্দরটি চালু করা সম্ভব হচ্ছিল না। এ কারণে স্থলবন্দরটির কার্যক্রম স্থগিত করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের ৪০তম বৈঠকে বাল্লা স্থলবন্দরের অপারেশন কার্যক্রম স্থগিত রাখার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। একই সঙ্গে সেদিন নীলফামারীর চিলাহাটি, চুয়াডাঙ্গার দৌলতগঞ্জ ও রাঙ্গামাটির তেগামুখ স্থলবন্দর বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বার্তা সংস্থা ইউএনবির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রশাসন ও স্থানীয়রা জানায়, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের চুনারুঘাট উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের কেদারাকোট নামক স্থানে বাল্লা স্থলবন্দর নির্মাণ করা হয়। ২০১৬ সালের ২৩ মার্চ ১৩ একর এলাকা জুড়ে স্থলবন্দরের নির্মাণকাজ শুরু হয়ে ২০২৩ সালের জুন মাসে শেষ হয়।

বন্দরের অবকাঠামোগত স্থাপনা নির্মাণ কাজে ব্যয় হয়েছে ৪৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা। অপরদিকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ খোয়াই নদীর অপর তীরে ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়মুড়ায় সময়মতো বন্দর স্থাপন না করায় বাল্লা স্থলবন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করা যায়নি।

আরও পড়ুন

এর আগে ১৯৫১ সালে চুনারুঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী বাল্লা এলাকায় ৪ দশমিক ৩৭ একর জায়গা নিয়ে একটি একটি চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ১৯৯১ সালে পুনরায় চালু করা হয়। এ পোস্ট দিয়ে কিছু পণ্য আমদানি ও রপ্তানি করা হতো। ২০১৬ সালের ২৩ মার্চ বাল্লাকে স্থলবন্দর হিসেবে ঘোষণা করেছিল সরকার।

চুনারুঘাটের গাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘সরকার বাল্লা স্থলবন্দরের কার্যক্রম স্থগিত করায় এটি অরক্ষিত হয়ে পড়বে। এখনই এর অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।’

চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এ উপজেলায় সদ্য যোগদান করেছি। বাল্লা স্থলবন্দর যাতে অরক্ষিত না থাকে, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এর আগে, গত ২ মার্চ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, তিনটি অলাভজনক ও কার্যক্রমহীন স্থলবন্দর সম্পূর্ণ বন্ধ এবং একটি স্থলবন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধের সুপারিশ করা হয়। বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের আটটি স্থলবন্দর কার্যকর বা অকার্যকরের বিষয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের গঠিত যাচাই কমিটি এ সুপারিশ করে।

কমিটি তাদের প্রতিবেদনে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও বাণিজ্য সম্ভাবনা বিবেচনায় নীলফামারীর ডোমার উপজেলার চিলাহাটি স্থলবন্দর, চুয়াডাঙ্গার দৌলতগঞ্জ, রাঙ্গামাটির তেগামুখ স্থলবন্দরের কার্যক্রম চালুর জন্য অবকাঠামো নির্মাণের প্রয়োজন নেই বলে সুপারিশ দেয়। এছাড়া হবিগঞ্জের বাল্লা স্থলবন্দরের কেদারকোটে নির্মিত স্থলবন্দরের ভারতীয় অংশে কোনো অবকাঠামো ও সড়ক না থাকায় চালু করা সম্ভব হচ্ছে না উল্লেখ করে বাল্লা স্থলবন্দরের অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ রাখা যেতে পারে বলে সুপারিশ করে। একই সঙ্গে কমিটি ময়মনসিংহের গোবরাকুড়া-কড়ইতলী স্থলবন্দরের দুটি স্থানের পরিবর্তে একটি স্থানে কার্যক্রম চালু রাখার সুপারিশ করে।

আরও পড়ুন

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর সরেজমিন পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে উপদেষ্টা বিগত সরকারের আমলে নির্মিত দেশের অলাভজনক ও কার্যক্রমহীন বিভিন্ন স্থলবন্দরগুলোর বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় গত ৬ নভেম্বর ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করে।

বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের শেরপুরের নাকুগাঁও স্থলবন্দর, ময়মনসিংহের গোবড়াকুড়া-কড়ইতলী স্থলবন্দর, জামালপুরের ধানুয়া কামালপুর স্থলবন্দর, হবিগঞ্জের বাল্লা স্থলবন্দর, বিরল স্থলবন্দর, নীলফামারীর চিলাহাটি স্থলবন্দর, চুয়াডাঙ্গার দৌলতগঞ্জ স্থলবন্দর এবং রাঙ্গামাটির তেগামুখ স্থলবন্দর কার্যকর বা অকার্যকর করার বিষয়ে এ কমিটি করা হয়।

কমিটি এ আটটি স্থলবন্দর সরেজমিন পরিদর্শন করে। সরেজমিন পরিদর্শন, প্রাপ্ত তথ্যাদি, আনুষঙ্গিক সুবিধা ও অসুবিধা, অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক কি না- এসব বিষয় পর্যালোচনা করে কমিটি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন দাখিল করে।

এমএমএআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।