ফারইস্ট ইসলামী লাইফ

দুদক মামলার আসামি-আত্মীয়দের অপসারণ চেয়ে বিএসইসিতে চিঠি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:১৬ পিএম, ৩১ আগস্ট ২০২৫
ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ভবন/ফাইল ছবি

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলার একাধিক আসামি ও তাদের আাত্মীয়-স্বজনরা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন। এমন চার পরিচালককে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন কোম্পানিটির একজন গ্রাহক।

রোববার (৩১ আগস্ট) পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ জমা পড়ে। একই ধরনের অভিযোগ বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এবং দুর্নীতি দমন কমিশনেও (দুদক) হয়েছে।

অপসারণের দাবি ওঠা চার পরিচালক হলেন- কোম্পানিটির বর্তমান পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান ড. মোকাদ্দেস হোসেন, পরিচালক মো. মোবারক হোসেন, পরিচালক নাজনীন হোসেন ও নিরপেক্ষ পরিচালক শেখ মোহাম্মদ শোয়েব নাজির।

অভিযোগ উঠেছে, বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। এসব অর্থ আত্মসাতে জড়িত দুদক মামলার আসামি ও তাদের আত্মীয়স্বজনরাই এখন কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদে থেকে সব কর্মকাণ্ড পরিচালনায় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ফলে বিমা কোম্পানিটির অর্থ আত্মসাতে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ও অর্থ উদ্ধারে কোনো অগ্রগতি হয়নি। দফায় দফায় পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তন হলেও নামে-বেনামে বা আত্মীয়-স্বজনের নামে অর্থ আত্মসাৎকারীরাই থেকে গেছে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের পরিচালনা পর্ষদে।

এতে আত্মসাৎ করা অর্থ উদ্ধার না হওয়ায় বিমা গ্রাহকরা চরম হয়রানিতে রয়েছেন। অন্যদিকে বিমা কোম্পানিটিও রয়েছে হুমকির মধ্যে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ফারইস্ট ইসলামী লাইফের পরিচালনা পর্ষদে অর্থ আত্মসাৎকারী, অর্থ আত্মাসাতে জড়িত ব্যক্তি এবং তাদের আত্মীয়-স্বজনদের অপসারণ করে স্বচ্ছ পরিচালনা পর্ষদ গঠনে সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর হস্তক্ষেপ এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ওই বিমা গ্রাহক।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ এবং পরবর্তীতে আইডিআরএ’র নিয়োগ করা নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের তদন্তে অর্থ আত্মসাতের এই তথ্য উঠে আসে। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে ৪টি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।

এর মধ্যে ৪৫ কোটি টাকা আত্মসাতের জন্য কোম্পানিটির ১৪ পরিচালকসহ ২৪ জনকে আসামি করে গত ৩১ জুলাই একটি মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন। সংস্থাটির উপ-পরিচালক সৈয়দ আতাউল কবির সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলাটি দায়ের করেন।

ফারইস্ট ইসলামী লাইফের ৪ পরিচালকের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
মামলার ২ নম্বর আসামি ফারইস্ট ইসলামী লাইফের সাবেক পরিচালক মো. হেলাল মিয়ার ভাই মো. মোবারক হোসেন কোম্পানির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদে নিরপেক্ষ পরিচালক হিসেবে আছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি মামলার ২ আসামি মো. হেলাল মিয়ার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান আমানত শাহ সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

মো. মোবারক হোসেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকা অবস্থায় ফারইস্ট ইসলামী লাইফের গ্রাহকের আমানত বিনিয়োগ করে কমিশনের নামে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। অন্যদিকে আমানত শাহ সিকিউরিটিজ লিমিটেডে বিনিয়োগ করা অর্থের মাধ্যমে শেয়ার বেচা-কেনায় শত কোটি টাকা লোকসান করে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স।

এর মধ্যে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ সালের ২২ অক্টোবর পর্যন্ত ফারইস্ট ইসলামী লাইফের ১৩৩ কোটি টাকা আমানত শাহ সিকিউরিটিজ লিমিটেডের শেয়ার ব্যবসায় বিনিয়োগ করে। এতে ৬০ কোটি ১৬ লাখ ৭৮ হাজার টাকা লোকসান হয়। এই লোকসানের তথ্য বিমা কোম্পানিটির ২০১৪ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে লোকসান হিসেবে প্রভিশন দেখানো হয়।

অথচ বিমাকারীর করপোরেট গভর্ন্যান্স গাইডলাইনের পরিচালনা পর্ষদের ভূমিকা সংক্রান্ত ৬.৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে ‘রিলেটেড পার্টি ট্রানজেকশন’ অর্থাৎ পরিচালকদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট যে কোনো আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে পূর্ব ঘোষণা দিতে হয়। কিন্তু ফারইস্ট ইসলামী লাইফের সাবেক পরিচালক আলহাজ মো. হেলাল মিয়ার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান আমানত শাহ সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে কোন পূর্ব ঘোষণা দেয়া হয়নি।

এছাড়াও বিমাকারীর করপোরেট গভর্ন্যান্স গাইডলাইনের পরিচালনা পর্ষদের আচরণবিধি সংক্রান্ত ৬.৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে স্বার্থের দ্বন্দ্ব দেখা দিলে এমন কোনো ব্যক্তি বিমা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে থাকতে পারেন না। এই বিধান অনুসারে মো. মোবারক হোসেন মামলার ২ নম্বর আসামি মো. হেলাল মিয়ার ভাই, যা বিমাকারীর করপোরেট গভর্ন্যান্স গাইডলাইনের পরিচালনা পর্ষদের আচরণবিধির লঙ্ঘন।

এমন অবস্থায় মো. মোবারক হোসেন ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদে থেকে মো. হেলাল মিয়ার সব অনিয়ম-দুর্নীতি, অনৈতিক আর্থিক সুবিধাগুলোকে বৈধতা দিতে পরিচালনা পর্ষদে প্রভাব বিস্তার করছেন। যা বিমাকারীর করপোরেট গভর্ন্যান্স গাইডলাইনের পরিচালনা পর্ষদের আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

প্রকৃতপক্ষে মো. হেলাল মিয়া কোম্পানির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদে না থাকলেও তার প্রক্সি হয়ে উঠেছেন মো. মোবারক হোসেন। ফলে তাকে অপসরণ না করা হলে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা আসবে না।

নাজনীন হোসেনের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ
দুদকের মামলার ৪ নম্বর আসামি নাজনীন হোসেন ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন। ফারইস্টের যেসব জমি ক্রয়ের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়, সেই জমি ক্রয়ের কমিটির চেয়ারম্যানও ছিলেন নাজনীন হোসেন।

ফলে নাজনীন হোসেন ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদে থাকাও বিমাকারীর করপোরেট গভর্ন্যান্স গাইডলাইনের পরিচালনা পর্ষদের আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

এ ছাড়াও নাজনিন হোসেন পরিচালনা পর্ষদে থাকলেও তার স্বামী মোশারফ হোসেন পুস্তী কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে উপস্থিত থাকেন এবং কোম্পানিটির সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণে তিনি ভূমিকা রাখেন। যা বিমা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

ভাইস চেয়ারম্যান ড. মোকাদ্দেস হোসেনের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ
দুদকের দায়ের করা এই মামলার ৬ নম্বর আসামি মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিসের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ডা. মো. মনোয়ার হোসেন এবং ১১ নম্বর আসামি মোজাম্মেল হোসেন দু’জনই ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ড. মোকাদ্দেস হোসেনের বড় ভাই।

অথচ বিমাকারীর করপোরেট গভর্ন্যান্স গাইডলাইনের পরিচালনা পর্ষদের আচরণবিধি সংক্রান্ত ৬.৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে স্বার্থের দ্বন্দ্ব দেখা দিলে এমন কোন ব্যক্তি বিমা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে থাকতে পারেন না।

এই বিধান অনুসারে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ড. মোকাদ্দেস হোসেন কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে থেকে বিমাকারীর করপোরেট গভর্ন্যান্স গাইডলাইনের পরিচালনা পর্ষদের আচরণবিধির লঙ্ঘন করেছেন।

নিরপেক্ষ পরিচালক শেখ মোহাম্মদ শোয়েব নাজিরের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ
ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের বর্তমান পর্ষদের নিরপেক্ষ পরিচালক শেখ মোহাম্মদ শোয়েব নাজির দুদক মামলার ৬ নম্বর আসামি ডা. মো. মনোয়ার হোসেনের ভায়রা ভাই (স্ত্রীর ভগ্নীপতি)। এই হিসাবে শেখ মোহাম্মদ শোয়েব নাজির ডা. মনোয়ার হোসেন এবং ডা. মোকাদ্দেসের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়।

এ কারণে শেখ মোহাম্মদ শোয়েব নাজিরের ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের বর্তমান পর্ষদে নিরপেক্ষ পরিচালক থাকা বিমাকারীর করপোরেট গভর্ন্যান্স গাইডলাইনের ৬.৩ অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। একই সঙ্গে এই গাইডলাইনের পরিচালনা পর্ষদের আচরণবিধি সংক্রান্ত ৬.৫ অনুচ্ছেদেরও লঙ্ঘন।

যোগাযোগ করা হলে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম জাগো নিউজকে বলেন, আমি এখনো অভিযোগের কপিটি দেখিনি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।

এমএএস/এমআইএইচএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।