আহসান খান চৌধুরী

আমদানি শুল্ক নয়, অর্থনীতির চালিকাশক্তি হতে হবে রপ্তানি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:২৬ পিএম, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রথম আলোর গোলটেবিল বৈঠকে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেন আহসান খান চৌধুরী/ছবি: জাগো নিউজ

শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ প্রাণ-আরএফএলের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরী বলেছেন, আমদানি ও আমদানি শুল্কের ওপর দেশ চলবে, দেশ আমদানিনির্ভর হবে—এটি এক ধরনের অর্থনীতি। কিন্তু আমরা যে অর্থনীতির কথা বলছি, সেটি হওয়া উচিত রপ্তানি বহুমুখীকরণের অর্থনীতি। যার চালিকাশক্তি হতে হবে রপ্তানি।

তিনি বলেন, রপ্তানি বাড়াতে নতুন পণ্য নির্ধারণ করে সেই পণ্য নিয়ে কাজ করতে হবে। বন্দরের ড্যামারেজ চার্জ ও ট্রান্সশিপমেন্ট নিয়ে কাজ করতে হবে। রপ্তানি বাড়ানো ছাড়া আমাদের কোনো গত্যন্তর নেই।

বুধবার (১০ ডিসেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। ‘রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক বৈঠক আয়োজন করে প্রথম আলো। বৈঠক আয়োজনে সহায়তা করে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ।

প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেনের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। এতে আরও অংশ নেন- বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী সদস্য নাহিয়ান রহমান, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাসান আরিফ, বার্জার পেইন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুপালী চৌধুরী, রেনাটার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ এস কায়সার কবির, দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন (এইচএসবিসি) বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) সায়েমা হক বিদিশা, চামড়াপণ্য, জুতা উৎপাদন ও রপ্তানিকারক সমিতির (এলএফএমইএবি) সহ-সভাপতি নাসির খান, বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী ও বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সামিম আহমেদ।

বৈঠকে আহসান খান চৌধুরী বলেন, ভিয়েতনাম যদি ৩০০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি করে, আমাদেরও তা করা উচিত। আমদানি ও আমদানি শুল্কের ওপর দেশ চলবে, দেশ আমদানিনির্ভর হবে—এটা এক ধরনের অর্থনীতি। কিন্তু আমরা যে অর্থনীতির কথা বলছি, সেটি হওয়া উচিত রপ্তানি বহুমুখীকরণের অর্থনীতি। যার চালিকাশক্তি হবে রপ্তানি।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমানে ৫০ বিলিয়ন ডলারের সীমানা পেরিয়ে হয়তো একদিন আমরা ৩০০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করবো। আমাদের বাধাটি কোথায়? পোর্টে (বন্দরে) বাধা আছে। পোর্টে অনেক সমস্যা আছে। আমি আজ খোঁজ নিয়েছি, পোর্টে কিন্তু আমাদের ড্যামারেজ চার্জ (ক্ষতিপূরণ মাশুল) বেড়ে গেছে।

তিনি বলেন, পোর্ট নতুন কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর হয়েছে। পোর্টে এখন নতুন মালিক এসেছে। এখন পোর্টে যদি ড্যামারেজ বেড়ে যায়, বেসরকারি খাতকে সেই ড্যামারেজ বহন করতে হচ্ছে। যে সমস্যাগুলো আছে আমরা সেগুলো সমাধান করে এগিয়ে যেতে চাই।

প্রাণ-আরএফএলের সিইও আরও বলেন, বর্তমানে ওয়েস্ট আফ্রিকান দেশে ভারতের মুম্বাই বা দক্ষিণের পোর্টের তুলনায় বাংলাদেশ থেকে রপ্তানির খরচ বেশি। স্বল্পমূল্যের পণ্যে ১০ শতাংশেরও বেশি সেভিং চলে আসছে ফ্রেইট (ভাড়া) থেকে। আমি যদি ১২ হাজার ডলারের বিস্কিট রপ্তানি করতে চাই, আমাকে আড়াই হাজার ডলার ফ্রেইট গুনতে হচ্ছে, ওয়েস্ট আফ্রিকান পোর্টের জন্য।

‘কিন্তু ভারত থেকে যদি এই পণ্য যায় তাদের ফ্রেইট মাত্র ১ হাজার ডলার। এখানে আমি প্রায় ১৫০০ ডলার পিছিয়ে পড়ছি শুধু বন্দরের মাশুলের জন্য। এই ফ্রেইটের তারতম্য যদি কমিয়ে আনতে পারি, আগামী দিনে স্বল্পমূল্যের বাজার ধরতে পারবো। আশিয়ানভুক্ত দেশে কম ফ্রেইটে আমরা পৌঁছাতে পারছি। মধ্যপ্রাচ্যের দেশেও ভারতের তুলনায় আমাদের বেশি ফ্রেইট গুনতে হচ্ছে’—এ প্রসঙ্গে যোগ করেন তিনি।

মুক্তবাণিজ্যের ওপর জোর দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আহসান খান চৌধুরী বলেন, অর্থনীতিতে ট্যারিফ বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে। আশিয়ানভুক্ত দেশের সঙ্গে ভারতের মুক্তবাণিজ্য চুক্তি রয়েছে। আমরা মুক্তবাণিজ্য করতে পারছি না। আজকের দিনে ভারত থেকে আশিয়ানে পণ্য রপ্তানি করি, আমাদের পণ্য কিন্তু শূন্য শুল্কে রপ্তানি হচ্ছে। আশিয়ান ইজ ইকুয়াল টু ইন্ডিয়া। বাট আশিয়ান ইজ নট ইকুয়াল টু বাংলাদেশ। আগামী দিনে আরও বেশি রপ্তানি করতে চাইলে ট্যারিফের ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রাখতে হবে।

নির্দিষ্ট পণ্য ও নির্দিষ্ট ফোকাস নিয়ে পণ্য রপ্তানি করা উচিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, আগামী দিনের জন্য কিছু পণ্য সিলেক্ট করতে হবে। সেই পণ্য নিয়ে কাজ করতে হবে। টার্গেটেড ফোকাস করতে হবে।

চট্টগ্রাম থেকে নিউইয়র্ক পর্যন্ত সরাসরি জাহাজ চালু করা দরকার জানিয়ে আহসান খান চৌধুরী বলেন, আমরা প্লাস্টিক সামগ্রী পাঠাচ্ছি আমেরিকায়। আমরা কিন্তু প্লাস্টিক সামগ্রী রপ্তানি করেই বিলিয়ন ডলারের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারবো। যদি ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে আমাদের আমেরিকায় যেতে হয় এবং এই ট্রান্সশিপমেন্টেই ৪৫ দিন ব্যয় হয়ে যায়, তাহলে আগামী দিনে ৩০০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির স্বপ্ন—স্বপ্নই থেকে যাবে।

ইএইচটি/এমকেআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।