মেঘালয় ঘেঁষা দুই স্থলবন্দর, আমদানি-রপ্তানির নতুন দুয়ার

মফিজুল সাদিক
মফিজুল সাদিক মফিজুল সাদিক , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক হালুয়াঘাট (ময়মনসিংহ) ঘুরে
প্রকাশিত: ১০:৫১ এএম, ২৮ নভেম্বর ২০২১

মেঘালয় মানে মেঘের নিবাস, মেঘের সাম্রাজ্য। পর্যটকদের কাছে এক কাঙ্ক্ষিত নাম ভারতের মেঘালয় রাজ্য। যেখানে দেখা যায় সবুজ পাহাড় আর মেঘের মিতালি। পাহাড়ের গা বেয়ে এখানে নেমে এসেছে অনিন্দ্য সুন্দর ঝরনা ধারা। মেঘালয়ের সেই ঝরনা সবুজাভ পাহাড়শ্রেণী গায়ে মাখিয়ে নেমে এসেছে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের গোবরাকুড়া ও কড়ইতলীর নদীতে। আর এ নদীর পাশেই নির্মিত হচ্ছে গোবরাকুড়া ও কড়ইতলী স্থলবন্দর।

হালুয়াঘাট উপজেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে এক পাশে গোবরাকুড়া এবং ছয় কিলোমিটার দূরে আরেক পাশে কড়ইতলী স্থলবন্দর। এখান থেকে মেঘালয়ের পাহাড়ের দূরত্ব কয়েকশ’ গজ। দূর থেকে দেখলে মনে হবে সবুজ পাহাড়েরই বুকে নির্মিত হচ্ছে স্থলবন্দর দুটি।

Meghalaya2.jpg

এ দুই বন্দর নির্মাণে ৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে গৃহীত প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। পরের মাসে (মার্চে) করোনাভাইরাস মহামারি আঘাত হানলে প্রকল্পের কাজ হোঁচট খায়। তবে করোনা সংকট কাটিয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে চলছে দুই বন্দরের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ। ইতোমধ্যে গোবরাকুড়া স্থলবন্দরের কাজ ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। আর কড়ইতলী বন্দরের কাজ হয়েছে ৮০ শতাংশ। নির্মাণকাজ এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছেন হালুয়াঘাটের স্থানীয় বাসিন্দারা।

Meghalaya2.jpg

কড়ইতলীর সীমান্ত এলাকায় কথা হচ্ছিল স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মোবারকের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে জানান, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে তার চার বিঘা জমি রয়েছে। সেখানে চাষাবাদ করেন তিনি। মোবারকের এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে কৃষিকাজে তাকে সহায়তা করেন। মেয়ে হালুয়াঘাট আদর্শ মহিলা ডিগ্রি কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। এখানে স্থলবন্দর চালু হলে তার মেয়ের চাকরি হবে বলে আশায় বুক বেঁধে আছেন মোবারক।

Meghalaya2.jpg

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, এখানকার বন্দর দিয়ে আগে কয়লা আমদানি হতো, কিন্তু সেটা এখন বন্ধ আছে। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণ, যোগাযোগ স্থাপন ও সরকারি রাজস্ব আদায়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে সহায়তার জন্য ‘গোবরাকুড়া-কড়ইতলী স্থলবন্দর উন্নয়ন’ নামের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। যদিও শিগগির নির্মাণকাজ শেষ হবে, তবে বন্দর দুটি পুরোপুরি চালু হতে আরও তিন থেকে ছয় মাস লাগতে পারে। পুরোপুরি চালু করা গেলে অদূর ভবিষ্যতে কড়ইতলী বন্দর দিয়ে মানুষ পারাপার এবং গোবরাকুড়া বন্দর দিয়ে পণ্য পারাপার হতে পারে। কড়ইতলী-গোবরাকুড়ার ওপাশে (ভারতের অংশে) মেঘালয় রাজ্যের তোড়া জেলায় গান্ধীনগর গাছুয়াপাড়া শুল্ক স্টেশন অবস্থিত। অর্থাৎ ওই স্টেশনের সঙ্গেই সংযোগ ঘটবে কড়ইতলী-গোবরাকুড়ার।

ঢাকা থেকে বহুদূরের জনপদ হালুয়াঘাটে কোনো শিল্পকারখানা নেই বললেই চলে। অন্যদিকে মেঘালয়েও নেই তেমন শিল্পকারখানা। সেজন্য চলছে কড়ইতলী ও গোবরাকুড়া বন্দর নির্মাণের কাজ। বন্দর দুটি চালু হলে বাংলাদেশ লাভবান হবে। স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বাংলাদেশের অনেক অত্যাবশ্যকীয় পণ্য রপ্তানি করা যাবে মেঘালয়ে।

Meghalaya2.jpg

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বন্দর দুটি চালু হলে কেবল কয়লা নয়, ভারত থেকে বিভিন্ন ধরনের পণ্যও আসবে বাংলাদেশে। অন্যদিকে ভারতের মেঘালয় ও আসাম রাজ্য এবং ভুটান ও নেপালে পণ্য পাঠাতে পারবেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা। তখন উত্তর-পূর্বের রপ্তানি বাজারে প্রবেশের অন্যতম দরজা হবে গোবরাকুড়া ও কড়ইতলী স্থলবন্দর।

প্রকল্পের আওতায় স্থলবন্দর দুটিতে ওয়্যারহাউজ, পার্কিং ইয়ার্ড, অফিস ভবন, ওয়েব্রিজ স্কেল, ডরমিটরি ভবন, নিরাপত্তা রক্ষীদের থাকার ব্যারাক ভবনসহ বিভিন্ন অবকাঠামো থাকছে।

Meghalaya2.jpg

সরেজমিনে প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দুই স্থলবন্দরের জন্য ৩২ একর জমি অধিগ্রহণ, ৯৯ হাজার ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন, দুই হাজার ৬০৫ রানিং মিটার বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ, পাঁচ হাজার ৯৮৭ বর্গমিটার অভ্যন্তরীণ রাস্তা তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ৭৪৪ বর্গমিটার ওয়্যারহাউস নির্মাণ এবং এক হাজার ৫৯৮ বর্গমিটার অফিস ভবন, ডরমিটরি, ব্যারাক ভবন ও পাওয়ার হাউজ নির্মাণকাজও শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া এক হাজার ৭৪০ রানিং মিটার ড্রেন নির্মাণ, ১০ হাজার বর্গমিটার পার্কিং ইয়ার্ড নির্মাণ, টয়লেট কমপ্লেক্সও তৈরি হয়েছে। দুটি স্থলবন্দরে ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণও সম্পন্ন হয়েছে।

গোবরাকুড়ায় একশ’ মেট্রিক টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন দুটি ওয়েব্রিজ স্কেল স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। অন্যদিকে কড়ইতলীতে একই ধরনের দুটি ওয়েব্রিজ স্কেল স্থাপন কাজ চলমান। দুই বন্দরেই বাকি আছে বিদ্যুতায়ন ও ডেকোরেশনের কাজ। দুই বন্দরে ৩২ হাজার বর্গমিটার ওপেন স্ট্যাক ইয়ার্ড তৈরি করা হচ্ছে। এর মধ্যে গোবরাকুড়ায় ওপেন স্ট্যাক ইয়ার্ড তৈরির কাজ শতভাগ সম্পন্ন। তবে কড়ইতলীতে কাজটি চলমান। জিরো পয়েন্টে বাংলাদেশ-ভারতের সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ এখনো বাকি রয়েছে।

Meghalaya2.jpg

প্রকল্পের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. নিয়ামুল কবির জাগো নিউজকে বলেন, গোবরাকুড়া স্থলবন্দরের কাজ ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। আর কড়ইতলীর ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আশা করছি ডিসেম্বরের শেষদিকে পুরো কাজ সম্পন্ন করবো।

বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মো. হাসান আলী জাগো নিউজকে বলেন, মেঘালয়ে কোনো শিল্প কারখানা নেই বলে বাংলাদেশ এর সুযোগ নিতে পারে। স্থলবন্দর দু’টি চালু হলে আমদানি-রপ্তানি বাড়বে। দেশের খাদ্য ও ফল-মূল মেঘালয়ে রপ্তানি করা যাবে। এছাড়া এ দুই বন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি বাড়বে। ফলে কাস্টমসের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়বে।

হালুয়াঘাট এলাকাও বেশি উন্নত নয় উল্লেখ করে হাসান আলী বলেন, বন্দর দুটি চালু হলে স্থানীয়দের কর্মসংস্থানও হবে। যার ইতিবাচক হাওয়া লাগতে পারে এখানকার জীবনযাত্রায়।

এমওইএস/এমএএইচ/এসএইচএস/এইচএ/এমএস

গোবরাকুড়া স্থলবন্দরের কাজ ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। আর কড়ইতলীর ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আশা করছি ডিসেম্বরের শেষদিকে পুরো কাজ সম্পন্ন করবো।

মেঘালয়ে কোনো শিল্প কারখানা নেই বলে বাংলাদেশ এর সুযোগ নিতে পারে। স্থলবন্দর দু’টি চালু হলে আমদানি-রপ্তানি বাড়বে। দেশের খাদ্য ও ফল-মূল মেঘালয়ে রপ্তানি করা যাবে। এছাড়া এ দুই বন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি বাড়বে। ফলে কাস্টমসের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়বে

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।